সিডনির এপিং ওয়েস্ট পাবলিক স্কুলের ছাত্রী সারা হোসেন ‘মিনিস্টার এওয়ার্ড’ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলা ভাষার এক নতুন ইতিহাস গড়লো। অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালিদের প্রবাসী জীবন যাপনের প্রায় অর্ধশত বছর হতে চললো। দীর্ঘ এ সময়ে ‘মিনিস্টার এওয়ার্ড’ পাওয়ার ঘটনা বাঙালিদের মধ্যে এটিই প্রথম।
গত ৭ বছরে সারা ‘বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া’র বাংলা স্কুলে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে শিখেছে। ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্মানজনক এ প্রাপ্তিতে ভূষিত আরও যে তিনজন কমেন্ডেবল ও হাইলি কমেন্ডেবল পুরস্কার পেয়েছে তারাও বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্কুল শাখার শিক্ষার্থী।
একাডেমির ব্ল্যাকটাউন শাখার বলকাম হিলস্ হাই স্কুলের ছাত্রী শতাব্দী রাশেদ ও লাকেম্বা শাখার ওয়াইলী পাক পাবলিক স্কুলের ছাত্র এ এস এম শাহরিয়ার ইফতি দুজনেই কমেন্ডেবল এওয়ার্ড পায়। আর এপিং শাখার হরন্সবি গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী আশা হোসেন পেয়েছে হাইলি কমেন্ডেবল এওয়ার্ড।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতি বছর ভাষা শিক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য মিনিস্টার এওয়ার্ড প্রদান করে থাকে। ভাষায় বিশেষ দক্ষতার এ পুরস্কার প্রদান করেন নিউ সাউথ ওয়েলসের শিক্ষামন্ত্রী।
এ বছর মোট ৬০টি সাম্প্রদায়িক ভাষা ও এর ৩০ হাজার ভাষাভাসির সঙ্গে লড়ে প্রথম দশ জনের মধ্যে ঠাঁই পায় সারা।
বাংলা ছাড়াও ২০১৩ সালের মিনিস্টার এওয়ার্ড প্রাপ্ত অন্যান্য ভাষাগুলো হচ্ছে, আরমেনিয়ান, সিনহালা, তামিল, পর্তুগিজ, চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইউক্রেনিয়ান ও পোলিস।
বাংলা ভাষার শিক্ষা বিস্তারে অস্ট্রেলিয়াস্থ বাঙালিদের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে শুরু হওয়া এই প্রবাস প্রচেষ্টা ক্রমান্বয়ে আলোর মুখ দেখতে চলেছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঙালির বসবাস। এছাড়াও মেলবোর্ন, ক্যানবেরা, ব্রিসবেন, পার্থ, এডিলেড, তাসমানিয়া ও ডারউইনে বাঙালিদের বসবাস আছে।
বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন যাবত এখানকার বাঙালি ছেলে মেয়েদের বাংলায় লিখতে, পড়তে ও বলতে শেখার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন শুধু অভিভাবকদের সদিচ্ছা।
আমাদের মাতৃভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেবার জন্য রক্ত দিয়েছেন অসংখ্য ভাষা শহীদ। মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া মাতৃভাষায় আমরা খুঁজে পেতে চাই আমাদের শেকড়। প্রযুক্তি ও প্রগতির এ স্বর্ণযুগে প্রবাসী অন্যান্য অনেক জাতি তাদের শেকড় সন্ধানে উদ্যোগী। একটু চেষ্টা করলে আমরাও নিশ্চয়ই পারবো।
Discussion about this post