Friday, May 2, 2025
banglarbarta.com
  • Home
  • শীর্ষ সংবাদ
  • দেশ
    • সারাদেশ
      • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • বিশ্ব
  • প্রবাস
    • কুয়েত
    • দূতাবাস
  • প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • ভিন্ন খবর
  • শোক সংবাদ
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • গল্প
  • ভিডিও
  • English
No Result
View All Result
  • Home
  • শীর্ষ সংবাদ
  • দেশ
    • সারাদেশ
      • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • বিশ্ব
  • প্রবাস
    • কুয়েত
    • দূতাবাস
  • প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • ভিন্ন খবর
  • শোক সংবাদ
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • গল্প
  • ভিডিও
  • English
No Result
View All Result
banglarbarta.com
No Result
View All Result
Home ভিন্ন খবর

আজ কবি জীবনানন্দ দাশের ছেষট্টি তম মৃত্যু বার্ষিকী

banglarbarta.com by banglarbarta.com
November 4, 2020
in ভিন্ন খবর
0
আজ কবি জীবনানন্দ দাশের ছেষট্টি তম মৃত্যু বার্ষিকী

কবি জীবনানন্দ দাশ

0
SHARES
109
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

বাংলা কবিতায় উত্তর আধুনিক কবিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। প্রকৃতি আর প্রেম তাঁর কবিতায় অসাধারণ রূপকল্পনাময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। স্বদেশ, সমাজ-সমকাল, নির্জনতা, মুগ্ধতা, একাকিত্ব কবিতার প্রধান উপজীব্য। ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থেকে তিনি কবিতার উপকরণ সংগ্রহ করেন। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস, গল্প এবং বেশ কিছু প্রবন্ধও লিখেছেন। অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে কবির মৃত্যুর পর। আজ তাঁর ছেষট্টি তম মৃত্যু বার্ষিকী।
‘আমি কবি, সেই কবি-
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি
ঝরাপালকের ছবি’
সে কবি বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, তিমির হননের কবি, তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। যে ছেলেটির মা ছিলেন গৃহস্থ পরিবারের আদর্শ একজন নারী, সেই কুসুমকুমারী দাশের কবিতা-আদর্শ ছেলে,
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে’
যখন বাঙালি সমাজের শিশুশ্রেণির অন্যতম পাঠ্য, তাঁরই সন্তান কালের ডাকে যে ‘জীবনানন্দ দাশ’ হয়ে উঠবেন সেটা সহজে অনুমেয়।
আজ জীবনানন্দের মৃত্যুদিনে কবিকে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়। কবি জীবনানন্দকে হয়তো চেনা সম্ভব কিন্তু ব্যক্তি জীবনানন্দকে আমরা কতটা চিনি! একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনে কতটা বোধের অধিকারী হলে কবি জীবনানন্দ হয়ে ওঠেন, হয়তো বা একজীবনে তা উপলব্ধি করা সম্ভবও নয়!
দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে শিক্ষক ও সাহিত্যপিপাসু মা–বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। তাঁর ডাকনাম ছিল মিলু। বাবা কমবয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন বলেই ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পিতার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি ও মায়ের গান শুনে তাঁর বেড়ে ওঠা।
জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলায়।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের মিলুকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে ১৯১৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯১৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ ডিগ্রি, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেননি।
কবির ৫৬ বসন্তের ছোট্ট এক টুকরো জীবনটি কেটেছে চরম দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পেশা মূলত শিক্ষকতা হলেও কর্মজীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কোথাও থিতু হতে পারেননি। তিনি অধ্যাপনা করেছেন বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যার মধ্যে আছে সিটি কলেজ, কলকাতা (১৯২২-১৯২৮), বাগেরহাট কলেজ, খুলনা (১৯২৯) ; রামযশ কলেজ, দিল্লি (১৯৩০-১৯৩১), ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল (১৯৩৫-১৯৪৮), খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২), বড়িশা কলেজ (অধুনা ‘বিবেকানন্দ কলেজ’, কলকাতা) (১৯৫৩) এবং হাওড়া গার্লস কলেজ, কলকাতা (১৯৫৩-১৯৫৪)। তাঁর কর্মজীবন ছিল বন্ধুর, খরস্রোতা নদীর মতো, কখনো চর জাগে তো কখনো তলিয়ে যায় গভীর অতলে।
জীবিকার প্রয়োজনে কবিকে জীবনভর যুঝতে হয়েছে। চাকরি খুঁজতে তাঁর জীবনে অনেক চটির সুখতলি ক্ষয়ে গিয়েছে। স্ত্রী লাবণ্য দাশ স্কুলে শিক্ষকতা করে দারুণভাবে আর্থিক এবং মানসিক সহযোগিতা জুগিয়েছেন কবিকে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অকালমৃত্যুর সময় তিনি হাওড়া গার্লস কলেজে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ বেকার জীবনে তিনি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন এবং জীবনের অধিকাংশ সময় গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসায়ের চেষ্টাও করেছিলেন বছরখানেক। দারিদ্র্য এবং অনটন ছিল তাঁর কর্মজীবনের নিত্যসঙ্গী।
কবি ছিলেন অসম্ভব গম্ভীর প্রকৃতির এবং চরম ধৈর্যশীল মানুষ। ভালোবাসতেন পরিবারকে, সংসারের টুকিটাকি কাজগুলো ভালোবাসতেন। দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী লাবণ্যের পেনসিলের মাথা ধার করা, ফাউন্টেন কলমে কালি ভরার কাজগুলো নিয়ে কখনো ভাবতে হতো না। এমনকি ছেলেমেয়েকে রাত জেগে ঘুম পাড়ানোতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ভালোবাসতেন গুরুত্ব পেতে, সামান্য অসুখে আশা করতেন সেবা–শুশ্রূষা পেতে। তাঁর রাশভারী স্বভাবেও মাঝেমধ্যে কৌতুক করতেন। আর খেতে ভালোবাসতেন ডিম। ডিমের যেকোনো পদ দেখলেই তিনি লোভ সামলাতে পারতেন না। ছেলের পাতের থেকে ডিমের কিছু অংশ খাওয়া নিয়ে বাপ–ছেলের খুনসুটি প্রায়ই লেগে থাকত।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫–এর জুনে মৃত্যুবরণ করলে জীবনানন্দ তাঁর স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ কবিতাটি লিখেন। ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কবিতাটি। যা পরে ১৯২৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন ‘ঝরা পালক’–এ স্থান করে নেয়। সে সময় থেকে বিভিন্ন নামীদামি পত্রিকা ‘কল্লোল’, ‘কালি ও কলম’, ‘প্রগতি’সহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন লেখা ছাপা হতে থাকে। সে সময় থেকেই তিনি তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘দাশগুপ্তের’ বদলে কেবল ‘দাশ’ লিখতে শুরু করেন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে জীবননন্দ দাশ লাবণ্য দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হয়েছিল ঢাকা শহরে, পুরান ঢাকায় সদরঘাটসংলগ্ন ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে। লাবণ্য গুপ্ত সে সময় ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলেন। জীবনানন্দ দাশের বিয়েতে কবি বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্ত প্রমুখ কবি উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্মের কাছাকাছি সময়ে তাঁর ‘ক্যাম্প’ কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার, অনেকে কবিতাটি অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একগুচ্ছ গীতিকবিতা রচনা করেন, যা তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের প্রধান অংশ। এই কবিতাগুলো জীবনানন্দ বেঁচে থাকা অবস্থায় প্রকাশ করেননি। ১৯৫৪-তে তাঁর মৃত্যুর পর কবিতাগুলো একত্র করে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তাঁর বোন সুচরিতা দাশ এবং ‘ময়ুখ’ পত্রিকাখ্যাত কবি ভূমেন্দ্র গুহ।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ তাঁর পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটি নতুন কবিতা পত্রিকা বের করেন, যার নাম ‘কবিতা’। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতে জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি স্থান করে নেয়। কবিতাটি পড়ার পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে একে ‘চিত্ররূপময়’ বলে মন্তব্য করেন। ‘কবিতা’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (পৌষ ১৩৪২ সংখ্যা; ডিসে ১৯৩৪ /জানু ১৯৩৫) তাঁর সেই অমর ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। ১৮ লাইনের কবিতাটি বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার এখনো অন্যতম। পরের বছর জীবনানন্দের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ এর মধ্যেই বরিশালে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন।
১৯৩৬–এর নভেম্বরে তাঁর পুত্র সমরানন্দের জন্ম। ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেন, যার নাম ছিল ‘বাংলা কাব্যপরিচয়’ এবং এতে জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি স্থান পায়।
১৯৩৯ সালে কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয় আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হিরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়, যাতে জীবনানন্দের চারটি কবিতা-পাখিরা, শকুন, বনলতা সেন এবং নগ্ন নির্জন হাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
১৯৪২ সালে কবির পিতৃবিয়োগ হয় এবং ওই বছরই তাঁর তৃতীয় কবিতাগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’ প্রকাশিত হয়। বইটি বুদ্ধদেব বসুর কবিতা-ভবন হতে ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়। পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৬। বুদ্ধদেব ছিলেন জীবনানন্দের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং তাঁর সম্পাদিত ‘কবিতা পত্রিকা’য় জীবনানন্দের অনেক কবিতা ছাপা হয়।
১৯৪৪ সালে তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’ প্রকাশিত হয়। আগের তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁকে নিজের পয়সায় প্রকাশ করতে হলেও প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর কবিতার বইয়ের জন্য প্রকাশক পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রকাশিত এ কবিতগুলোতে যুদ্ধের প্রভাব দেখা যায়। চাকরির প্রয়োজনে বরিশালে প্রত্যাবর্তন করলেও তিনি কলকাতায় অভিবাসনের কথা ভাবতেন। সুযোগ হলেই স্টিমারে বরিশাল থেকে খুলনা তারপর ট্রেনে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় পাড়ি দিতেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট দেশভাগ স্থির হওয়ায় কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে সপরিবার কলকাতায় ভাই অশোকানন্দের ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে চলে যান। একান্ত প্রিয় বরিশালে আর ফিরে যাওয়া হয়নি।
জীবনানন্দ দাশের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘বনলতা সেন’, ‘মহা পৃথিবী’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ‘রূপসী বাংলা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কবিতা ছাড়াও তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কবিতার কথা’, গল্পগ্রন্থ ‘গল্পসমগ্র’, এবং উপন্যাস ‘মাল্যবান’ ও ‘সতীর্থ’ বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। জীবনানন্দ দাশের লেখা গল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কুয়াশার ভেতর মৃত্যুর সময়’, ‘রক্তমাংসহীন’, ‘পাতা তরঙ্গের বাজনা’, ‘পালিয়ে যেতে’, ‘জামরুলতলা’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গশোভা, মানবপ্রেম, বিষন্নতা আর বিপন্ন মানবতার বেদনা ও হতাশাবোধ প্রকাশিত হয়েছে জীবনানন্দের কবিতায়। পরিবর্তমান কাল, অতীত আর বর্তমান ইতিহাসের রূপকাশ্রয়ী, বিষাদময় প্রকাশও তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। আধুনিক শহর-নগর এসেছে গ্রামের আবহে। তাঁর কবিতা চেতনাকে এমনভাবে হরণ করে নেয় যে, জীবনের কোলাহল মুখরতা মুহূর্তেই যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে জীবনানন্দ দাশ প্রেম, সৌন্দর্য ও বিষন্নতার কবি। আর এর প্রকাশ স্নিগ্ধ কোমল চেতনায় মূর্ত।
কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় কবি জীবনানন্দ আহত হন। তারিখটা ছিল ১৪ অক্টোবর, ১৯৫৪ সাল। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তাঁর শরীর দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল কণ্ঠ, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। অনেক জীবনানন্দ গবেষক মনে করেন জাগতিক নিঃসহায়তা কবিকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তাঁর বাঁচার স্পৃহা শূন্য করে দিয়েছিল। মৃত্যুচিন্তা যেন কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন, যে কথা তাঁর কিছু লেখাতেও পাওয়া গেছে।
গুরুতর আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে পাশের চায়ের দোকানের মালিক চুনীলাল এবং অন্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। ভর্তি করা হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডা. ভূমেন্দ্র গুহসহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। তবে জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও নার্সদের সব প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গত ১০০ বছরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ।
জীবনানন্দের আদি পিতৃপুরুষের নাম বলরাম দাসগুপ্ত। পিতামহ সর্বানন্দ দাসগুপ্তের নিবাস ছিল মুন্সিগঞ্জের গাউপাড়া গ্রামে, সর্বানন্দ বরিশালে কলেক্টরি দপ্তরে চাকরির সুবাদে সেখানেই ভাড়াবাড়িতে থিতু হন। পরিবারে তিনিই প্রথম সস্ত্রীক ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। সর্বানন্দ’র পুত্ররা প্রতিষ্ঠিত হলে বরিশালের বগুড়া রোডে প্রায় ছয় বিঘা জমির উপর নিজেদের বসত গড়ে তোলেন, ১৯০৭ সালে পিতার নামানুসারে এর নাম দেন- ‘সর্বানন্দভবন।’ জীবনানন্দের জন্মসাল ১৮৯৯, নিজের আটবছর বয়স থেকে এই বাড়িতেই বসবাস করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। দেশবিভাগের সময় পরিবারটি কলকাতায় চলে যায়। ১৯৬০ সালে জীবনানন্দ দাশ-এর পিতামহের নামাঙ্কিত পারিবারিক বাড়িটি বিক্রি হয়ে যায়, জনৈক আবদুর রাজ্জাক এটি কিনে নেন; পরে কবির সম্মানে এর নামকরণ করা হয় ‘ধানসিড়ি’। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার আবদুর রাজ্জাকের পরিবারের কাছ থেকে কিছু জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে ‘জীবনানন্দ স্মৃতি পাঠাগার’ স্থাপন করে।
বরিশাল ছিল তাঁর নাড়ির বাঁধনে বাঁধা স্থান। বরিশালের ভূ-প্রকৃতির সৌন্দর্য তাঁকে বিভোর করে রেখেছিল; সেই বরিশাল ছেড়ে যাবার বেদনা তাঁর মনে স্থায়ী ছিল আমৃত্যু। জীবনানন্দের লেখার অনেকখানি জুড়ে তাঁর জীবন ঢুকে পড়েছে। ভূমেন্দ্র গুহ’র বরাতে একটি বক্তব্য তুলে ধরি, ‘তিনি তাঁর জীবনের শেষের দিকে অনেককে, অন্তত সঞ্জয় ভট্টাচার্য’কে বলেছেন, একটু সুযোগ-সুবিধে পেলেই, শরীর-স্বাস্থ্য-পরিবেশ আর একটু স্বাচ্ছন্দ্যকর হলেই, তিনি আত্মজীবনী লিখবেন, যেন তাঁর কবিতায়-গল্পে-উপন্যাসে আত্মজৈবনিক লেখা লিখতে বাকি রেখেছেন কিছু!’ ভূমেন্দ্র গুহ’র কথার সূত্র ধরে বলা যায়, যদিও তিনি নিজের আত্মজীবনী লিখে রেখে যাননি, কিন্তু তাঁর কবিতা, গল্প-উপন্যাস যেন মালার মতো তাঁর জীবনের গল্প বুনে গেছে। আমরা জানি, জীবদ্দশায় জীবনানন্দ তাঁর লেখা গল্প-উপন্যাসগুলো প্রকাশ করেননি, প্রায় দু’হাজারের মতো কবিতা লিখে শ’দুয়েক ছাপিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর পরই অপ্রকাশিত লেখাগুলো প্রকাশ পায়। সবমিলিয়ে তাঁকে পড়া হলে তাঁর লেখার মধ্যে আমরা তাঁর জীবনের গল্প খুঁজে পাবার চেষ্টা করতে পারি।
‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থের ‘বলিল অশ্বথ সেই’ কবিতাটিতে বরিশালের বাড়ি ছেড়ে যাবার বেদনা ফুটে উঠেছে।
বলিল অশ্বত্থ ধীরে: ‘কোন দিকে যাবে বলো-
তোমরা কোথায় যেতে চাও?
এত দিন পাশাপাশি ছিলে, আহা, ছিলে কত কাছে:
ম্লান খোড়ো ঘরগুলো-আজও তো দাঁড়ায়ে তারা আছে;
এই সব গৃহ মাঠ ছেড়ে দিয়ে কোন দিকে কোন পথে ফের
তোমরা যেতেছ চ’লে পাই নাক’ টের!
বোঁচকা বেঁধেছ ঢের-ভোলো নাই ভাঙা বাটি ফুটা ঘটিটাও;
আবার কোথায় যেতে চাও?
পঞ্চাশ বছরও হায় হয়নি ক-এই-তো সে-দিন
তোমাদের পিতামহ, বাবা, খুড়ো, জেঠামহাশয়
-আজও, আহা, তাহাদের কথা মনে হয়!-
এখানে মাঠের পারে জমি কিনে খোড়ো ঘর তুলে
এই দেশে এই পথে এই সব ঘাস ধান নিম জামরুলে
জীবনের ক্লান্তি ক্ষুধা আকাঙ্ক্ষার বেদনার শুধেছিল ঋণ;
দাঁড়ায়ে-দাঁড়ায়ে সব দেখেছি-যে,-মনে হয় যেন সেই দিন!
এখানে তোমরা তবু থাকিবে না? যাবে চ’লে তবে কোন পথে?
সেই পথে আরও শান্তি- আরও বুঝি সাধ?
আরও বুঝি জীবনের গভীর আস্বাদ?
তোমরা সেখানে গিয়ে তাই বুঝি বেঁধে র’বে আকাঙ্ক্ষার ঘর!..
যেখানেই যাও চ’লে, হয় নাক’ জীবনের কোনো রূপান্তর;
এক ক্ষুধা এক স্বপ্ন এক ব্যথা বিচ্ছেদের কাহিনী ধূসর
ম্লান চুলে দেখা দেবে যেখানেই বাঁধো গিয়ে আকাঙ্ক্ষার ঘর!
বলিল অশ্বত্থ সেই ন’ড়ে-ন’ড়ে অন্ধকারে মাথার উপর।
জীবনানন্দের শ্রাদ্ধবাসরে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন তাঁর অনুজ অশোকানন্দ দাশ, সেখানে তিনি লেখেন, ‘যাঁরা বরিশালে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন বরিশালের নদীর তীর কী অপূর্ব সুন্দর। যেখানে স্টিমার জেটিতে বাঁধা আছে, সেই অংশটি পার হয়ে গেলেই রাস্তার ধার দিয়ে ঝাউয়ের সারি চলে গিয়েছে। … শ্মশানভূমি ছাড়িয়ে লাশকাটা ঘর অতিক্রম করে, যেখানে কয়েকটা রবার গাছ আছে, তাও ছাড়িয়ে আরও দূরে চলে যান, দেখতে পাবেন ভাঙা মন্দির, ভাঙা-অট্টালিকা।”
বরিশালের ভূ-প্রকৃতির বর্ণনা আর এর নদ-নদী নিয়ে জীবনানন্দের লেখা কবিতা আমরা পড়েছি। নিজের বাড়ির কাছের কীর্তনখোলা নয়, বরং ‘ধানসিড়ি’ ছিল তাঁর প্রিয়তর নদীর নাম। তার সেই প্রিয় নদীটির অবস্থান ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায়। ঝালকাঠি একসময় বৃহত্তর বরিশালের মহকুমা ছিল, বর্তমানে এটি একটি স্বতন্ত্র জেলা। বরিশাল থেকে রাজাপুরের দূরত্ব চৌত্রিশ কিলোমিটারের কাছাকাছি। সড়কপথে ঘণ্টাখানেকের রাস্তা। ঝালকাঠি পুরোটাই জলমগ্ন এলাকা। পুকুর-দীঘি, নদী-নালা, খাল-বিল, ছোট-বড় নদীর এখানে কোনো অভাব নেই। নদীগুলো অপেক্ষাকৃত শান্ত, মায়াময়। অন্যদিকে মন উতলা করে দেবার মতো সুন্দর। শহরের যে দিকে হাঁটা হয় সেদিকে পুকুর, একটু বেশি হাঁটলে- নদী। শহরের বুকের ভেতর চুপচাপ শুয়ে আছে সুগন্ধা। সুগন্ধার জল নীলাভ। সুগন্ধা নদীতে একজায়গায় পুকুরের মতো ঘাট করে দেয়া হয়েছে। লোকজন সেই ঘাটে বসে থাকে। ঘাট থেকে নৌকার সওয়ারি হয়। নদীর পাড়ে সুন্দর একটা পার্কও আছে। সন্ধ্যায় খোলা হাওয়ায় পার্কে বসে থাকলে নদীর কিনারাটাকে রহস্যময় মনে হয়। আরো মনে হয়; নদী বাস্তব, নদীর পাড় অবাস্তব আর অশরীরী। ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশের নির্বাচন পরিদর্শনে এলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বরিশাল-ঝালকাঠি অঞ্চল নিয়ে একটি চমৎকার ভ্রমণ কাহিনী লিখেছিলেন। লেখক ইমদাদুল হক মিলন তখন তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। সে ভ্রমণে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘ধানসিড়ি’ নদীটি আবিষ্কারের অভিপ্রায়ে দল বলসহ বরিশাল থেকে ঝালকাঠিও গিয়েছিলেন। ‘ধানসিড়ি’ দেখার পর সুনীল লেখেন-
‘কথা বন্ধ করে আমি সতৃষ্ণ নয়নে নদীর দু’দিকে চেয়ে থাকি। এককালে হয়তো একধারে ধানখেত ছিল।জীবনানন্দ কি কোনোদিন সত্যিই এই নদীর বুকে নৌকোয় ঘুরেছেন? কিংবা শহরের অন্যলোকদের মুখে শুধু নামই শুনেছেন।
নদীগুলো খুব বদলে যায়। ধানসিড়ি এখন একটি অতি অকিঞ্চিৎকর ছোটনদী। আমি কপোতাক্ষ নদীতেও নৌকো চেপেছি, তার জল এখন কোনো মৃতপাখির চোখে মতন বিবর্ণ।’
‘ধানসিড়ি’ নিয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলাই বাহুল্য খুবই উত্তেজনাকর ছিল। বস্তুত পক্ষে বাস্তবের একটি নদীকে নিজের মত করে কল্পনায় সাজিয়ে-সাজিয়ে ধানসিড়ির বর্ণনায় জীবনানন্দ যে মোহনীয় পরিবেশ তৈরি করেছেন, কবিতা পড়তে গেলে পাঠকও যেন এক ধরণের আচ্ছন্নতার নিমজ্জিত হয়। অদূরে প্রমত্তা গাবখান, তার উদরে যেন টুপ করে ঢুকে পড়েছে ধানসিড়ি। গাবখানের উপর হাল আমলে তৈরি হয়েছে একটি সেতু; সেতুর উপর দাঁড়ালে দেখা যায়, আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। সেই বিস্তৃতির সঙ্গে ধানসিড়ির কোনো রাগ-অনুরাগ নেই। ধানসিড়ি তার নিজের মতো করে বয়ে চলেছে শান্ত-ধীর লয়ে। আগেই বলেছি, নদী বিষয়ক তাঁর ভাবনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধানসিড়ি’র কল্পনায় জারিত হয়েছে। ধানসিড়ি আমাদের আবিষ্কারে একটি সরু নদী, যেন নদী নয়, নদীর রেখা। রাজাপুরের মূল সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে ‘রূপসী বাংলার’ কবিতার জাবর কেটে দিব্বি পৌছে যাওয়া যায় ধানসিড়ির কাছে। চারপাশে তখন দেখা যাবে- ‘হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ।’ ইংরেজ কবি সিসিল ডে ল্যুইস চিত্রকল্পকে, ‘আ পিকচার মেড আউট অব ওয়ার্ডস’ বলে বর্ণনা করেছিলেন, জীবনানন্দ তাঁর কবিতায় শব্দকে ছবির মতো ছড়িয়ে দিতে জানতেন। ল্যুইসের বর্ণিত শব্দ দিয়ে নির্মিত ছবিই যদি ইমেজ হয়, তবে জীবনানন্দের কবিতায় এর অসংখ্য উদাহরণ টানা যায়। পূর্ণেন্দু পত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বললেন, চিত্ররূপময়। বুদ্ধদেব বসু চিনিয়ে দিলেন, তাঁর কাব্য বর্ণনাবহুল, তাঁর বর্ণনা চিত্রবহুল, তাঁর চিত্র বর্ণবহুল। অতঃপর জীবনানন্দের কবিতাকে আমরা চিনতে শিখলাম চিত্র হিসেবেও অনেকখানি। তাঁর কবিতার কোন পর্বটুকুর সঙ্গেই কেবল রবীন্দ্রনাথের পরিচয়, আর ঠিক তেমনি, কোন পর্ব থেকে বুদ্ধদেব বসু আর ততখানি শ্রদ্ধাবান নন তাঁর কবিতা সম্পর্কে, সেসব হিসেব-নিকেশ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে আমরা অভিভূত হয়ে থাকতে চাই এই আবিষ্কারের উন্মাদক উল্লাসে যে, কবি জীবনানন্দ একজন চিত্রকরও।’ এই চিত্রকর লিখেছেন বলেই শীত রাতে গাছের পাতা নড়লে তাকে ‘মড়ার হাতের সাদা হাড়ে’র মতন মনে হয় বলে আমরা জেনেছি, আলো অন্ধকারে গেলে মাথার ভেতর যেটি কাজ করে তাকে ‘বোধ’ বলে এ-ও জেনেছিলাম!
‘নদী’ নামে জীবনানন্দের একটি কবিতা রয়েছে। ‘ধানসিড়ি’র সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’তে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতাটি লেখার অনুপ্রেরণার মূলে ছিল এই নদীটি। সেখানে লেখা, ‘রাইসর্ষের খেতের পাশে নদী।’ ধানসিড়ির পাশে আসলেই একটি ফসলের মাঠ রয়েছে। একদম লাগোয়া। দিগন্ত ছাড়িয়ে সেই খোলামাঠ চলে গিয়েছে দূরের গ্রামের দিকে। কবিতায় বর্ণিত সেই চিত্রকল্প শব্দের সঙ্গে ছবির সাদৃশ্য তৈরি করেছে, অতঃপর কবিতা পাঠের পর এই আবিষ্কার জীবনানন্দের কবিতার পাঠক হিসেবে মনে যে বিচিত্র অনুভব জাগিয়ে তুলে সেই তুরীয় আনন্দ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল!
কবিতাটির কিছু অংশ-
রাইসর্ষের খেত সকালে উজ্জ্বল হ’ল— দুপুরে বিবর্ণ হয়ে গেল
তারই পাশে নদী;
নদী, তুমি কোন কথা কও?
অশথের ডালপালা তোমার বুকের ‘পরে পড়েছে-যে,
জামের ছায়ায় তুমি নীল হলে,
আরও দুরে চ’লে যাই
সেই শব্দ সেই শব্দ পিছে-পিছে আসে;
নদী না কি?
নদী, তুমি কোন কথা কও?
‘নদী’ কবিতাই শুধু নয়, ধানসিড়ি নিয়ে জীবনানন্দ আরও অনেক কবিতা লিখেছেন, তিনি লিখেছেন-
সময়ের অবিরল সাদা আর কালো
বুনোনির ফাঁক থেকে এসে
মাছ আর মন মাছরাঙাদের ভালোবেসে
ঢের আগে নারী এক -তবু চোখ-ঝলসানো আলো
ভালোবেসে ষোলো-আনা নাগরিক যদি
না হয়ে বরং হত ধানসিড়ি নদী।
শটিবন, শশালতা, শিরীষ, শিউলি, হিঁজল, হেলেঞ্চা, হরীতকী, হোগলা, পরথুপী, বাসকলতা, মধুকুপী, বঁইচি ইত্যাদি নিয়ে জীবনানন্দ মেতে ছিলেন। তাঁর কবিতায় ‘এখানে প্রশান্ত মনে খেলা করে উঁচু উঁচু গাছ’ পড়লে নিমিষে চোখের সামনে অমন একটি ঝাঁকড়া গাছ দাঁড়িয়ে যায়। আমের কুঁড়ি, বাবলা ফুল, মধুমালতী কি আমরা দেখিনি? জীবনানন্দ যখন আলগোছে এগুলোকে কবিতার বিষয় করেন তখন যেন আমাদের অনুভব অনুভূতি সরব হয়ে ওঠে।
জীবনানন্দ যেন প্রকৃতি নিংড়ে আলোয় নিয়ে এসে খেলা করেন। ধানসিড়ির পাড়ে বসে থেকে আকাশের দিকে তাকালে দেখি- ‘স্নিগ্ধ একখানা মেঘ’, মাঠের দিকে দৃষ্টিপাতে অবলোকন করি- ‘চারি দিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল’, গাঁয়ের পথে হাঁটলে নাকে আসে-‘পাড়াগাঁর গায় আজ লেগে আছে রূপশালী-ধানভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ।’
বরিশালের, রূপসী বাংলার কবির স্মরণে কবির ছোটবোন সুচরিতা দাশ অসাধারণ একটি রচনা লিখেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, “সবকিছুই আগের মত থাকবে শুধু একজন যাঁর আরো অনেকদিন এখানে থাকার কথা ছিল, পৃথিবীকে ভালোবাসার কথা ছিল, কথা ছিল বাংলার ত্রস্ত নীলিমার শান্তিতে মগ্ন থাকার, ‘সত্য আলো’র বেদনায় দীর্ণ হবার, সেই শুধু রইল না কেন? ধানসিড়ি নদীটি তেমনি প্রাণকল্লোলে বয়ে চলবে, সবুজ প্রান্তর মরকতের মত উজ্জ্বল হবে, অর্জুন ঝাউয়ের বনে বাতাস তেমনি করেই বইবে, সোনালি রোদ ডানায় মেখে শঙ্খচিল উড়ে যাবে, গোধূলির রঙ লেগে অশ্বথ বটের পাতা নরম হবে, খয়েরি শালিক খেলবে বাতাবী গাছে, কিন্তু সেই একজন, সেই একটি প্রাণময় সত্তা যে এই বিচিত্র রূপরাজ্যের পথে পথে হারিয়ে হারিয়ে গেছে, ‘সত্য আলো’র বিস্ময়ে বেদনায় ভেঙ্গে-ভেঙ্গে গেছে তাকেই শুধু খুঁজে নেওয়া যাবে না এদের মাঝে। এই শিশিরঝরা ধানের গন্ধে ভরা হেমন্ত রাতে- গাছের পাতারা যখন হলুদ হয়ে এসেছে, জোনাকির আলোয় দূরের মাঠ বন যখন ঝিলমিল, তখন নতুন করে সেই পুরোনো গল্পের পাণ্ডুলিপির আয়োজন চলছে আজ। সেই গল্প। আজ আর আমাদের পূর্বপুরুষরা সেই গল্পের নায়ক নন, নন তাঁরা জ্যোৎস্না-মোছা রাতে শিশিরে ধানের দুধে ভিজে ভিজে হাওয়ার শরীরে স্বপ্নময় পরীদের হস্তগত। আজ যিনি, তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না শিশির ঝলমল সোনার ধানক্ষেতের পাশে ভোরের আলোয়। পৃথিবীর ভালোবাসায় চিরতরে যতি টেনে স্বপ্নের পরীদের হাতে নিঃশেষে তুলে দিলেন নিজেকে, তাঁর শয্যায় কাঁচা লবঙ্গ এলাচ দারুচিনি থাকবে না ছড়ানো, থাকবে তাঁর কাব্যে দূরতর সায়াহ্নের সমীপবর্তী সবুজার্দ্র দ্বীপের দারুচিনি লবঙ্গ এলাচের বনের রহস্যময় ধূসর ইশারা। নিজে তিনি নিদ্রার নির্জনে চিরপ্রিয় স্বপ্নের বলয়ে নিমগ্ন হয়ে থাকবেন- হয়তো :
চাহিয়াছে অন্তর যে ভাষা
যেই ইচ্ছে যেই ভালোবাসা
খুঁজিয়াছে পৃথিবীর পারে পারে গিয়া
স্বপ্নে তাহা সত্য হয়ে উঠেছে ফলিয়া।
জীবনানন্দ লিখেছিলেন,
‘ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়ে থাকব-ধীরে-পউষের রাতে।
কোনদিন জাগব না জেনে-
কোনোদিন জাগব না আমি-
কোনোদিন আর।’
প্রকৃতির সঙ্গে নিজের আত্মা সম্পূর্ণ মিশিয়ে ফেললেই হয়ত এরকম পংক্তি লেখা সম্ভব। বরিশালের সন্তান জীবনানন্দ দাশের কল্পনার হাত ধরে পউষের রাতে ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমাদেরও শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কোনোদিন আর না জাগার স্বপ্ন বুকে নিয়ে…।
পরিশেষে কবির মৃত্যুদিনে বলতে চাই, কবির মৃত্যু আজও এক রহস্য। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে দুর্ঘটনার সময় দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রামলাইন পার হচ্ছিলেন কবি। আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো মানুষ দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রাম লাইন পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তায় উঠবেন, সেটা কোনো যুক্তিবাদী মানুষের কাছে নিশ্চয়ই আত্মহত্যার জন্য যৌক্তিক ব্যাখ্যা হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়।
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিমলেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ ।

Previous Post

শার্শায় নিয়োগ পরীক্ষায় সভাপতি’র স্ত্রী ফেল করায় পিস্তল ঠেকিয়ে সই নেয়ার মিথ্যা অভিযোগ

Next Post

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খোন্দকার মোজাম্মেল হক এর স্মরণ সভা

Next Post
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম  খোন্দকার মোজাম্মেল হক এর স্মরণ সভা

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খোন্দকার মোজাম্মেল হক এর স্মরণ সভা

Discussion about this post

Plugin Install : Widget Tab Post needs JNews - View Counter to be installed
  • Trending
  • Comments
  • Latest

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা এবং টেলিফোন

গর্ভাবস্থায় ভাল ভাল বই পড়া উচিত

অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার সাঈদীর মৃত্যু

আড়াইবাড়ি পীর পরিবারের সম্পর্কে জানতে পড়তে পারেন

শোক বার্তা

শোক বার্তা

লুকিয়ে পড়া বই

“আরব দেশ ও জাতি :উৎস এবং মহাযুদ্ধের উত্তরাধিকার”

কুয়েতে বাংলাদেশ কুরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর উদ্দ্যোগে সুধীজনের সম্মানার্থে বিশেষ ইফতার মাহফিল

চাকরী সম্পর্কে তথ্য দিতে নতুন ওয়েবসাইট করছে কানাডা সরকার

বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত এর হেল্প লাইন এর সাহায্য নিন

অনুমোদনের অপেক্ষায় আরো ১৩ টিভি

কুয়েতের শ্রম বাজার পুনরায় উন্মুক্তকরণে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম

কুয়েতের শ্রম বাজার বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে

কুয়েতে ফিলিপাইন দূতাবাস ২০২৫ সালের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য অনলাইন ভোটিং শুরু করেছে

কুয়েতে ফিলিপাইন দূতাবাস ২০২৫ সালের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য অনলাইন ভোটিং শুরু করেছে

কুয়েতে বৈশাখী উৎসবে প্রবাসীদের উচ্ছাস

কুয়েতে বৈশাখী উৎসবে প্রবাসীদের উচ্ছাস

কুয়েতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জমকালো সংবর্ধনা

কুয়েতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জমকালো সংবর্ধনা

কুয়েত প্রবাসী চিত্রশিল্পীর মৃত্যূতে শোক সভা ও দোয়া মাহফিল

কুয়েত প্রবাসী চিত্রশিল্পীর মৃত্যূতে শোক সভা ও দোয়া মাহফিল

কুয়েতে রমজান শীর্ষক আলোচনা

রিয়েল বন্ডিং কুমিল্লার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল

রিয়েল বন্ডিং কুমিল্লার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল

❑ আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
« Apr    

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ গাজী আবু হানিফ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শেখ জহির রায়হান, বিজ্ঞাপনঃ শাহ করিম

E-mail : banglarbarta7@gmail.com

মোবাইল : +48726143833 +880 1303211966, For Ad: +96566850744

© 2023 banglarbarta.com All Right Reserved. Designed and Developed by WEBSBD

No Result
View All Result
  • Home
  • শীর্ষ সংবাদ
  • দেশ
    • সারাদেশ
      • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • বিশ্ব
  • প্রবাস
    • কুয়েত
    • দূতাবাস
  • প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • ভিন্ন খবর
  • শোক সংবাদ
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • গল্প
  • ভিডিও
  • English

© 2023 banglarbarta.com All Right Reserved. Designed and Developed by WEBSBD

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist