মুজবনগর দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকে আশপাশের বিভিন্ন জেলার লোকজন জড়ো হতে থাকে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে। ৪ কিলোমিটার লম্বা জনশ্রোতের শেষ স্থল আমবাগানের ঐতিহাসিক জনসভা স্থল। খুলনা বিভাগের প্রতিটি জেলার মানুষ ছাড়াও উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গের নানা জেলা থেকে এসেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন মুজিবনগরের ইতিহাস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। মঙ্গলবার মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে বিশাল জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী সৈয়দা আব্দুল লতিফ সিদ্দীকি। সৈয়দ আশারাফ ইতিহাসের ব্যাখা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত সরকার ছিল মুজিবনগর সরকার। তাই এ সরকার ছিল সাংবিধানিক সরকার। ওই গণতান্ত্রিক সরকারের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জণগণ ৯ মাসের স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছিল। তিনি বলেন, সেদিনের সেই সাংবিধানিক সরকারকে বিপ্লবী সরকার বা অস্থায়ী সরকার বলে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস। এ ইতিহাসের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশকে একটি ব্যর্থ পরিচিত করার চেষ্টা করেন। হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে তার দুই ছেলেকে দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নতুন সংবিধান মতে অন্তর্বতীকালিন সরকারের অধীনেই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদেশের মানুষ আর তত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। যে সরকার ৩ মাসের স্থানে নির্বাচন দিতে ৩ বছর দেরি করে, সে সরকার চায় না এদেশের জণগন। নাসিম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক চিরভাস্বর দিন। মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস প্রাণপণ লড়াই করে ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর সহায়তায় চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এ বি এম তাজুল ইসলাম, শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সোলাইমান হোসেন সেলুন জোয়াদ্দার এমপি, সাবেক হুইপ শেখ হারুন অর রশিদ, নূরজাহান এমপি, আলী আজগর টগর এমপি, মেহেরপুর-১ আসনের এমপি জয়নাল আবেদীন, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন প্রমুখ। এর আগে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন নেতারা। দিবসটি উপলক্ষে মেহেরপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মুজিবনগর-মেহেরপুর, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যানার ও ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে রাস্তার দুই ধার। মুজিবনগরের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করছে। শেখ হাসিনা মঞ্চে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে। এবর নতুন মাত্রা যোগ করেছে মুক্তযুদ্ধভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ২ দিনব্যাপী মেলা।
Discussion about this post