প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুয়েট উপাচার্যকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও দাবি থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম। উপাচার্য এ এম নজরুল ইসলাম ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটের তৃতীয় দিন শুক্রবার আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ কে বলেন, “আমরাতো দুই বছর ধরে তার সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। তাতে কাজ হয়নি। এখন আর তার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই।” তবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কেউ আলোচনা করতে চাইলে তারা রাজি আছেন বলে এই শিক্ষক নেতা জানান। অধ্যাপক আশরাফুল বলেন, “আমারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। আন্দোলনকে কীভাবে আরো এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে শিগগিরই ঘোষণা আসছে।” রাতে বুয়েটের শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের এক বৈঠক শেষেও সমিতির কোষাধজ্ঞ অধ্যাপক আতাউর রহমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যহত থাকবে বলে জানান। বিডিনিউজ কে তিনি জানান, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার সকাল ১১টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের নিয়ে মৌন মিছিল বের করা হবে। টানা অসন্তোষের মধ্যে বুয়েটে শিক্ষকদের গণ পদত্যাগের পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বুয়েট সিন্ডিকেটের একটি প্রতিনিধি দল। এতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যও ছিলেন। পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আসা উপাচার্য নজরুল ইসলাম বৈঠক শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। ক্যাম্পাসে কীভাবে কাজ করছি, তাও বলেছি। প্রধানমন্ত্রী সব শুনে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চালাতে বলেছেন।” অনিয়মের অভিযোগ তুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পদত্যাগের দাবি করে এলেও উপাচার্য বলে আসছেন, ‘অনৈতিক’ কোনো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করবেন না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার হঠাৎ করে রোজা ও ঈদের ছুটি এগিয়ে আনলে বুধবার থেকে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যা¤পাস। ওইদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ দাবিতে একযোগে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে থাকা ২৪ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার মধ্যে বুয়েট সিন্ডিকেট উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিলেও আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। আগের দিনের মতো বৃহস্পতিবারও সারা রাত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে টাঙানো শামিয়ানার নিচে চলে বক্তৃতা, প্রতিবাদী গান ও আবৃত্তি। গভীর রাতে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেন। তবে রাতে আর কোনো সমস্যা হয়নি বলে ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বুয়েটের শিক্ষক সমিতি এর আগে গত ৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে সমিতি আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করে। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা কর্মবিরতি পালন করছিলেন শিক্ষকরা। এরপর তারা ১৪ জুলাই থেকে পূর্ণ কর্মবিরতির কর্মসূচির হুমকি দিলে ১১ জুলাই থেকে ছুটি ঘোষণা করেন উপাচার্য।
Discussion about this post