কসবা প্রতিনিধি : কসবায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন ৭৫ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই সিংহভাগ বিল উঠিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল এন্টারপ্রাইজ। এ ব্যাপারে কায়েমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন সরকার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাননি। স্থানীয় জনগনের পক্ষ থেকেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি অভিযোগ পেশ করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের মন্দভাগ বাজার থেকে মইনপুর বাজার হয়ে মইনপুর বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত রাস্তা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২ কিস্তিতে মোট ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হয় । গুরুত্বপূর্ণ পল্লী উন্নয়ন অবকাঠামোর আওতায় ২০১২ সালের ১৮ আগস্ট এই প্রকল্পটির অনুমোদন সাপেক্ষে দরপত্র আহ্বান করা হলে বিধি মোতাবেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল এন্টারপ্রাইজ এই প্রকল্পটির কার্যাদেশ পান। পরে এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্রাহ্মণাবড়িয়ার জনৈক ফরিদ উদ্দিন কাজ শুরু করেন। কার্যাদেশ ও সিডিউল অনুযায়ী কাজ না হলে এলাকার জনমনে বিরুপ প্রতিক্রীয়ার সৃস্টি হয়। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাপ সৃষ্টি করে।
কায়েমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন সরকার জানান, কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ায় তিনি উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানান। উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারের পক্ষ অবলম্বন করলে তিনি বিষয়টি উপজেলা পরিষদ সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন। এতে উপজেলা প্রকৌশলী আশ্বাস দেন তিনি মইনপুর বাজার থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ শীঘ্রই শুরু করাবেন। কিন্তু এ যাবত কিছুই করেননি।
অপরদিকে স্থানীয় জনগন ও ইউপি সদস্যরা গত ৩০ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ পেশ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিনে তদন্তে যান। তদন্ত কালে শত শত নারী-পুরুষ তাঁকে জানান, মইনপুর বিজিবি ক্যাম্প থেকে মইনপুর বাজার পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জালাল সাইফুর রহমান সত্যতা স্বীকার করেন। মইনপুর বাজার থেকে মন্দভাগ বাজার পর্যন্ত সড়কটিতে ৭ মিলি সিলকুট ঢালাই দেয়ার কার্যাদেশ থাকলেও ঠিকাদার ঢালই দিয়েছেন মাত্র ২ মিলি সিলকুট।
তাছাড়া মইনপুর বাজার থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন না করে প্রকৌশল বিভাগ থেকে বিল উত্তোলণের বিষয়টি রহস্য জনক। এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কাজ ঠিক ঠাক হয়েছে। কেন মানুষ এমন বলছে আমার বোধগম্য নয়। তিনি আরো বলেন, এ কাজ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। অপরদিকে ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিন জানান, এ কাজ শেষ হয়েছে ১৬ মাস পূর্বে। কিন্তু দরপত্র আহ্বানের পূর্বে এই প্রকল্পটি অনুমোদন হয় এজিইডি পিডি (অগ্রা) ই-৩৭/২০১০/৪৭৬৮ তাং ১৮-০৯-১২ ইং স্মারকে। তাহলে কীভাবে ১৬মাস পূর্বে এ কাজ শেষ হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয় বলে স্থানীয় অধিবাসীরা জানান। তারা বলেন ৭৫ লাখ টাকার মধ্যে এই সড়কে ২০ লাখ টাকার কাজ হয়েছে কিনা সন্দেহ। পুরনো সড়কের কাজকে নিজেদের কাজ আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জড়িত।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীই সবচেয়ে বেশী মিথ্যাচার করছেন। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর গোপন আঁতাতের মাধ্যমে এমন একটি পুকুর চুরিতে মনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রকল্পটির সাথে আরো ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে ওই সকল প্রকল্পগুলোর অবস্থাও এমনতর হবে। উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান নিজেই এসমস্ত দুর্নীতির সহায়তাকারী বলে স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ জানান।
Discussion about this post