মোঃ হাবিবুর রহমান খান, কুমিল্লা প্রতিনিধি:- গতকাল শনিবার কুমিল্লায় ‘বিশ্ব যক্ষা দিবস’ উপলক্ষে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন ও উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সকাল ৮:৩০ মিনিটে র্যালীর উদ্বোধন করেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম সিদ্দিক। সকাল ৯টায় কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল সম্মেলন কক্ষে ‘যত দিন বাঁচব, যক্ষাকে রুখব’-শিরোনামে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম সিদ্দিক। আলোচনায় অংশ নেন-জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ ডা. ইমাম উদ্দিন আহমেদ, আদর্শ সদরের ইউএইচএফপিও ডা. হাবিব আবদুল্লাহ সোহেল, নাটাব কুমিল্লার সহ-সভাপতি সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক শাহজাহাদা এমরান, ব্র্যাক কুমিল্লার ব্যবস্থাপক রফিকুল আলম ও মোঃ গোলাম মোস্তফা, জেলা বিএমএ নেতা ডা. মোঃ আতোয়ার রহমান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রশিদ সরকার, জেলা বিপিএমপিএ’র সভাপতি ডা. এ কে এম আব্দুস সেলিম, সাংবাদিক এনামূল হক ফারুক, নারী নেত্রী রোকেয়া বেগম শেফালী, এড. শামীমা আক্তার জাহান, ট্রেড ইউনিয়নের সেক্রেটারী আনোয়ার হোসেন, ডা. দীনেশ ভট্টাচার্য, দৃষ্টির প্রজেক্ট ম্যানেজার আলী আজম, এফপিএবি’র জেলা কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান, মেরী স্টোপস’র জিয়াউল মাওলা সোয়েব প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতি সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম সিদ্দিক বলেন, বিশ্বের ২’শ কোটি মানুষ (জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ) যক্ষার জীবাণুতে আক্রান্ত। ২২টি দেশে আক্রান্তের হার ৮০%। বাংলাদেশ তাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে। কুমিল্লায় ২৯৫৬ জন যক্ষার রোগী আছে, তার মধ্যে ১৯জন বিভিন্ন ঔষধে রেজিস্টেন্ট আছে। স্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র আছে ৩৩টি আর অস্থায়ী কেন্দ্র আছে ৪৮৮ টি। সরকার নির্ধারিত ৭০% যক্ষা রোগীর সনাক্তের টার্গেটে কুমিল্লায় ৬৯% অর্জিত হয়েছে, আর চিকিৎসা সাফল্যে ৮৫% টার্গেটে কুমিল্লায় তা অতিক্রম করে ৯২% রয়েছে। তিনি বাকী ৩১% রোগী সনাক্তের জন্য সরকারী ও বেসরকারী সকল মাঠকর্মীদের এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান এবং মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্ট রোগী কমাতে আক্রান্তদের নিয়মিত, পরিমিত, নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঔষধ সেবন নিশ্চিত করতে সবাইকে উদাত্ত আহবান জানান।
জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশে যক্ষা রোগ নির্মূলে সাফল্যের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন গতকাল ‘বিশ্ব যক্ষা দিবসে’র প্রাক্কালে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন পত্র দিয়েছেন (যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে)। বাংলাদেশে প্রতি ২ মিনিটে একজন যক্ষায় আক্রান্ত হচ্ছে ও প্রতি ১০ মিনিটে একজন যক্ষায় মারা যাচ্ছে। বছরে আক্রান্তের সংখ্যা এদেশে প্রায় ৩ লাখ, রোগী সনাক্তের সংখ্যা বছরে প্রায় দেড় লাখ আর যক্ষায় মৃতের সংখ্যা বছরে প্রায় ৭০ হাজার। যক্ষার জীবানু ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। যক্ষার রোগী কাশি দিলে চারিদিকে ১৮ ফুট এলাকা লক্ষ লক্ষ জীবানুতে ভরে যায়, একজন যক্ষা রোগী মৃত্যুর আগে ১০জন নতুন যক্ষারোগী সমাজে তৈরী করে যায়। তবে আশার কথা, ‘সূর্যের আলোতে এ জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়’-বস্তি এলাকায় সরকারী ও বেসরকারী সমস্ত লোকবলকে যক্ষা প্রতিরোধে এগিয়ে উঠান বৈঠক করে জানাতে হবে এ তথ্যটি। বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ ডা. ইমাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩ সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলে তাকে বিনামূলে কফ পরীক্ষার জন্য এবং বিনামূল্যে ঔষধ সেবনের জন্য সরকারী ও ব্র্যাকের চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে। আর যক্ষা রোগীকে যত্রতত্র কফ কাশি না ফেলে মুখে হাত দিয়ে কাশি ঢাকতে হবে ও যত্রতত্র কফ থুথু না ফেলে একটি কৌটায় তা রেখে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। এ যক্ষা দিবসে সামগ্রিক কর্মকান্ডে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে সহযোগিতা করে-ব্র্যাক, নাটাব, দৃষ্টি, মেরীস্টোপস্, এফপিএবি, বন্ধু, সূর্যের হাসি, মায়া, ইউএসএআইডি, এফএইচআই ৩৬০। এ উপলক্ষে ‘নাটাব’ কুমিল্লায় কয়েক হাজার লিফলেট বিতরণ করে যাতে লেখা ছিল ‘যক্ষা হলে রক্ষা নাই, এ কথার ভিত্তি নাই, নিয়ম মেনে ঔষধ খেলে, যক্ষা থেকে রক্ষা মেলে’।
Discussion about this post