কুয়েতে সাধারণ এক গাড়িচালক হিসেবে প্রবাস জীবন শুরু। সেই থেকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন । বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিত্যব্যবহার্য পণ্য আমদানি করে এরই মধ্যে দেশটিতে বিশাল বাজার তৈরি করে ফেলেছেন তরুণ এই প্রবাসী।শরীফ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।।
মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম (৩৮)। বন্ধুরা তাঁকে সম্মান করে মুফতি নামে ডাকেন। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। শহিদুল ইসলামের বাবা মুহাম্মদ সুলতান আলী পেশায় একজন কৃষক। বাংলাদেশে থাকার সময় শহিদুল ইসলাম রাজধানীর মিরপুরের মাদ্রাসা দারুল উলুম থেকে দাওরায়ে হাদিস বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রি মুফতি উপাধি অর্জন করেন। এরপর কিছুদিন দেশে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম জানান, ২০০৫ সালে কুয়েতে এসে কুয়েতি নাগরিকের ওখানে গাড়িচালক হিসেবে তিনি দুই বছর কাজ করেন। সে কাজের সূত্রে কুয়েতের বিভিন্ন স্থান ও বাজার সম্পর্কে পরিচিত হন তিনি। পরে গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মীর চাকরি করেন। পাশাপাশি ছোট খাট ব্যবসাও করেন। মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করায় নিয়োগ পান প্রাণ কোম্পানির কুয়েত ম্যানেজার হিসেবে। দীর্ঘ সাত বছর সেখানে কাজ করে কুয়েতে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। আগে পরে অনেক ভালো বেতনের চাকুরীর অফারও পান তিনি। তার লক্ষ্য একটাই নিজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করা সেই চিন্তা মাথায় রেখে বেশী দিন চাকুরী করনেনি।
সেই সময় আগের পরিকল্পনা অনুসারে নিজে ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন শহিদুল। শুরুর দিকে অভিজ্ঞতা ও পুঁজি না থাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারেননি। কিন্তু নয়-দশ বছর চাকরির সুবাদে জমানো পুঁজি আর অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
ব্যবসার প্রথম দিকে শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ থেকে এলিন ফুড প্রোডাক্টসের বিভিন্ন পণ্য কুয়েতে বাজারজাত করতে শুরু করেন। পরে ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকলে বাংলাদেশ থেকে হাসেম ফুডস লিমিটেডের সজীব ব্র্যান্ডের পণ্য, অলিম্পিক বিস্কুট, দুবাই থেকে টাইগার এনার্জি ড্রিংক, ভিয়েতনাম থেকে কোকোনাট ড্রিংক ইত্যাদি পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করেন।
শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে ২০১৪ সাল নাগাদ শহিদুল ইসলাম নিজেই ‘কনফিডেন্স’ নামক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের নামে হলুদ, ধনিয়া, তেজপাতা, মুড়ি, সরিষার তেল, কারি পাউডারসহ বেশ কিছু পণ্য কুয়েত, কাতার ও ইরাকের বাজারে সরবরাহ করেন। সেসব পণ্যের ওই দেশে এখন বেশ চাহিদা তৈরি করতে পেরেছেন এবং বর্তমানে কুয়েতে বাংলাদেশী পণ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে তার ব্যবসা দাবি করেন শহিদুল ইসলাম।
কুয়েতের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অঞ্চল আরদিয়ায় শহিদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানের বিশাল এক গুদাম ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পণ্যের বাহারি সমাহার। একই সঙ্গে নিজ ব্যবসার পরিধি ও বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশে তারঁ নিজের কোম্পানি রেহেনা এগ্রো ফুড লিমিটেড নামে ফ্যাক্টরি বা কারখানা থেকে উৎপাদন করা হয় কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের পণ্য। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সকল পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন না হওয়ায় বর্তমানে ভিয়েতনাম, চীন, দুবাই, সাউদিআরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তার নিজস্ব কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের নামে পণ্য এনে বিক্রয় চাহিদা পুরন করার চেষ্টা করছেন।
সাফল্যের পাশাপাশি ব্যবসা নিয়ে নানা প্রতিকূলতার কথাও জানান শহিদুল। বিশ্বের বাজারে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বাংলাদেশকে আরো সহনশীল ও উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
শহিদুল ইসলামের কোম্পানিতে বর্তমানে বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত ও মিসরের লোকজন কাজ করছেন। নিজ দেশের পণ্যের মর্যাদা বাংলাদেশিরাই সবচেয়ে বেশি দেন বলে জানান তিনি। সে কারণে বাংলাদেশ থেকে আরো কিছু অভিজ্ঞ বিক্রয়কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে তিনি ভাবছেন। ভিসা জটিলতার কারনে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান শহিদুল।
অজোপাড়াগাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান হয়ে, মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে এ রকম সফল ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখা সহজ হলেও বাস্তবে তা রূপান্তরিত করে সবার সামনে নিজেকে এক উৎকৃষ্ট আর জলন্ত উদাহরণ হিসেবে হাজির করেছেন শহিদুল ইসলাম।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা তাঁর কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো কুয়েতের বাজারে এখন অনেকটা পরিচিত। নিজের অতীতের কথা মনে করে তিনি সব সময় গরিব দুঃখী মানুষের সেবা করার প্রত্যাশা রাখেন। সততা, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম করলে আল্লাহ অবশ্যই ভাগ্য পরিবর্তন করেন বলে বিশ্বাস শহিদুল ইসলামের। তিনি আরো বলেন লক্ষ্য থাকতে হবে অটুট, বুকে রাখতে হবে সাহস, ঝুঁকি নিতে হবে, আল্লাহ প্রতি রাখতে হবে বিশ্বাস, সাথে কঠোর পরিশ্রম সফলতা আসবেই। তিনি আরো বলেন লক্ষ্য যদি থাকে ব্যবসায়ী হতে তাহলে বেশী বেতনের চাকূরীর পিছে না দৌড়ে অভিজ্ঞতা আর পুজি জমানোর বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে হবে তাহলেই সফলতা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন এই তরুন সফল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।
Discussion about this post