চট্টগ্রামে ক্যাব’র উদ্যোগে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে অ্যাডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত। ভোক্তাদের মাঝে শিক্ষা ও সচেতনতা ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে নৈরাজ্য বন্ধ হবে না। দেশের ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)কে সরকারি-বেসরকারী সব সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত, গুনগত সেবা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে দেশের ভোক্তারা অসহায়, তাদের সমস্যা ও ভোগান্তি তুলে ধরতে ক্যাব ছাড়া আর কোন মুখপাত্র নাই। তাই এই জন্য ভোক্তাদের সংগঠিত ও ক্যাব’র শক্তিশালীকরণ যেমন প্রয়োজন। আর ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে আরও বেশী শিক্ষা ও সচেতন করা প্রয়োজন। বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ব্যবসায়ীরা রাজনীতি, সমাজনীতি, রাস্ট্র, প্রশাসন থেকে শুরু করে গণমাধ্যম পযন্ত ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। যার কারনে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলির চেয়ে ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলি গণমাধ্যমগুলিতে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। ১৯ জানুয়ারি ২০২১ইং নগরীর খুলসীতে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ক্যাব চট্টগ্রাম’র পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে অনুষ্ঠিত অ্যাডভোকেসী সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জসিমের সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেসী সভায় বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব বিভাগীয সহ-সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব পাঁচলাইশের মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব আকবর শাহ থানা সভাপতি ডাঃ মাসবাহ উদ্দীন তুহিন, ক্যাব হালিশহর থানার সভাপতি এমদাদুল হক সৈকত, ক্যাব পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম হুমায়ুন কবির ও ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর তাজমুন নাহার হামিদ, শম্পা কে নাহার প্রমুখ।
বিভিন্ন বক্তাগন অভিযোগ করে বলেন সরকার ওষুধের মূল্য ও সড়ক পরিবহনে ভাড়া নির্ধারনসহ কয়েকটি স্থানে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও পেয়াঁজ, চাল, ডাল বা পরিবহন যা-ই সংকট হোক না কেন, সরকার বা সংস্লিষ্ঠ সরকারী কর্তৃপক্ষ তখনই ঐ খাতের ব্যবসায়ীদের সাথে দ্বিপাক্ষিক সভা করে ঐ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। অথচ যাদের জন্য সরকারে এই আয়োজন সেই ভোক্তাদেরকে ঐ সভাতে আমন্ত্রণ জানানো বা তাদের মতামত গ্রহন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করার কারনে সরকারের ব্যবসা-বানিজ্যে নীতি প্রনয়ণে ব্যবসায়ীদের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। আর এ সুযোগে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী পুরো ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও সরকার ও ব্যবসায়ীরা বারবার বলছেন দেশে কোন সিন্ডিকেট নাই।
সভায় বলা হয় সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদন ঘোষনা করলেও সিটিকরপোরেশন এলাকায় ক্ষুদ্র খামারীরা প্রশাসনিক জঠিলতার কারনে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। কারন প্রণোদনা বিতরণে জেলা থেকে উপজেলা বিতরণ কাঠামো গঠন করা হলেও মহানগরীর জন্য সুনির্দিষ্ঠ কোন কাঠামো ঘোষনা হয় নি। আর ক্ষুদ্র খামারীরা পোল্ট্রি উৎপাদনে ঠিকে না থাকলে প্রাণিসম্পদের বর্তমান অগ্রগতি ধরে রাখা কঠিন হবে। আর বড় বড় কোম্পানীগুলি এখাতে নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট তৈরী করার পথ সুগম হবে।
সভায় আরও জানানো হয় যত্রতত্র, অপরিস্কার, অপরিছন্ন স্থানে মুরগি জবাই করে ভোক্তার কাছে মুরগি সরবরাহ করার কারনে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে। আবার সুপারশপ গুলিও তাদের ভেন্ডরদের মাধ্যমে যে সমস্ত উৎস থেকে মুরগি কিনেন, তাতেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত কিনা তা জানা অনেক জায়গায় সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি পেতে হলে ফ্রোজেন (প্রক্রিয়াজাতকৃত) মুরগির বিকল্প নেই। ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ ব্রয়লার মুরগির মাংশ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে উৎস স্থল মুরগির খামার থেকে গৃহিনীর রান্নায় পরিবেশন পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের অনুসরনীয় নিয়মাবলী কঠোর ভাবে মেনে চলতে ভোক্তাদের মাঝে শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্ঠি করতে হবে। এছাড়াও খুচরা মুরগি বিক্রেতাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করার দাবি জানানো হয়।
Discussion about this post