সিএসডিএফ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রকাশ চট্টগ্রাম ও ককসবাজায় জেলায় নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠির এখনো ২০ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার
কামাল উদ্দীনঃ চট্টগ্রাম ও ককসবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিন্ম আয়ের পরিবারগুলি এখনো ২০ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ে বড় ধরনের অন্তরায়। কিন্তু এই অঞ্চলে অভিভাবকরা নানা কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মেয়েকে বাল্যবিয়েতে বাধ্য হচ্ছে। সামাজিক অসচেতনতার কারণে এসব বিয়ে ঠেকানোও যাচ্ছে না। ফলে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি একটি প্রজন্মের উপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে। বিয়ের ন্যুনতম বয়স না হলে আইনগত ভাবে বিবাহ নিবন্ধন করা যায় না। কিন্তু এসব অঞ্চলে বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রেও চলছে গরমিল। আবার কোন কোন ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেই। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিবাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই লক্ষ্যে “আর নয় বাল্যবিবাহ-বিবাহ নিবন্ধনের পূর্বে জন্মনিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা ও সংরক্ষণ করুন” এই স্লোগানে চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন এবং ককস্বাজার জেলার ২টি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, বিবাহ নিবন্ধনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ নিবন্ধক, পুরোহিত, ধর্মযাজকদের সাথে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিএসডিএফ) ও স্থানীয় সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
গতকাল ৭ এপ্রিল শনিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সিএসডিএফ ও চট্টগ্রাম নারী ও শিশু অধিকার সাংবাদিক ফোরাম ও জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করনে, সিএসডিএফ’র ভাইস-চেয়ারপার্সন কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী। এ উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন সিএসডিএফ’র চেয়ারপার্সন এস এম নাজের হোসাইন, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের সভাপতি এম নাসিরুল হক, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, সুফিয়া কামাল ফেলো নারীনেত্রী আবিদা আজাদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিএসডিএফ চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ২৮টি স্কুল এবং ককস্বাজার জেলার ২টি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৮টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের সমতা উন্নয়ন ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ কর্মকান্ড পরিচালনায় গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রণোদিত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অগ্রসর মানুষদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। সামাজিক উদ্যোক্তা, সুফিয়া কামাল ফেলো, উপজেলা শিক্ষার্থী ও যুব ফোরাম, শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক পরিষদ যাদের সহজ নামকরণ হচ্ছে সামাজিক উদ্যোক্তা। এ সমস্ত দলগুলোতে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, কাজী-পুরোহিত-ধর্মযাজক, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী ও সাংবাদিক, নারী ও মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সম্মিলন গড়েছে। সামাজিক উদ্যোক্তা দলগুলো সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করা এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জনমূখী ও সক্রিয় করার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এইসব উদ্যোগের ফলে বাড়ছে জন্ম নিবন্ধন ও বিবাহ নিবন্ধনের হার। মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যথাযথভাবে বিবাহ নিবন্ধন ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকে ৬টি অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন/পৌরসভার নিকাহ নিবন্ধক কোন বিয়ে নিবন্ধনকালে সংশ্লিষ্ট বর-কনের বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদপত্র বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্কুলের সনদপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন এবং এর ফটোকপি সংরক্ষণ করবেন। প্রচলিত প্রথা অনুসারে হিন্দু ধর্ম অনুসারীদের বিয়ে নিবন্ধন হয়না। কিন্তু নারীর মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে পুরোহিতদের বিয়ের প্রদত্ত ফরম ও রেজিস্টার পূরণ করবেন এবং জন্মনিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন এবং তার ফটোকপি সংরক্ষণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার জন্য সিএসডিএফ ও সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
Discussion about this post