মহান স্বাধীনতা দিবসে আগে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে গোটা এলাকা কিছুক্ষণের জন্য রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের ৬০ জন নেতাকর্মীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। এ ঘটনায় একটি ফিলিং স্টেশনসহ ২০টি দোকান এবং অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অপরকে দায়ী করেছে। এছাড়া নিজেদের মধ্যে সংষর্ঘে জড়িয়েছে জাতীয় পার্টির দুটি পক্ষও। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ১৬ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের পরপরই প্রধান ফটকের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকরা। সকাল সোয়া ৬টার দিকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিনের সমর্থক কিছু নেতাকর্মী স্মৃতিসৌধের মূল ফটকের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদের সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় নবীনগর পেট্রলপাম্পের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপির চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির নেতা সেলিমা রহমান, খায়রুল কবির খোকন, ইলিয়াস আলীসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে বিরোধীদলীয় নেতার আসার অপেক্ষায় ছিলেন। খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন ৬টা ৪০ মিনিটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী ফিলিং স্টেশনের কাছে গিয়ে বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এলাকাজুড়ে উভয় দলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় শ্রদ্ধা জানাতে আসা দর্শনার্থীরা আতংকে দিগি¦দিক ছুটাছুটি করতে থাকে। সংঘর্ষের সময় গাজীপুর-ঢাকা সড়কে প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়। হামলা চালানো হয় আশপাশের দোকানে। সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রিত একটি পেট্রলপাম্পসহ কমপক্ষে ২০টি দোকান ভাংচুর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধের ভেতরে থাকাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ চলে।
এদিকে নবীনগর ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার কামাল জানান, তার ফিলিং স্টেশন ভাংচুর করার সময় ক্যাশ কাউন্টার থেকে ৫০ হাজার টাকা লুট করা হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, তাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মুরাদ জং জানান, বিএনপির দুই গ্রপে সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলে তাদের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপির এক স্থানীয় নেতা জানান, সকাল ৬টা ১৬ মিনিটে খালদা জিয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছলে প্রধান ফটকের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা স্লোগান শুরু করলে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় বিএনপির গাড়িবহর থেকে কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে নামলে তারাও হামলার শিকার হয়। জিয়া ও তারেক জিয়ার ছবিসহ গেঞ্জি পরা অবস্থায় যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই পেটানো হয়েছে।
এ ছাড়াও জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসা দর্শনার্থীদের বাসসহ ৫০টি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর করা হয়। এ সময় যাত্রী ও জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসা দর্শনার্থীদের প্রায় ৪০ জন আহত হয়। আহতদের সাভার, ধামরাই স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল ও স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হচ্ছেÑ সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্বাসউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মুখলেস, ফজলু, জুয়েল, ডালিম, আল-আমিন, মাসুদ, ফকির ভাই, সাহাবুদ্দিন, মর্তুজা এবং মাসুদ হাসান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আহতের অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে হাসপাতাল ত্যাগ করে।
সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, কোন ধরনের উস্কানি ছাড়াই আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের পেছনে বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িও ভাংচুর করা হয়। কর্মীদের হাত থেকে তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া ও শহীদ জিয়ার পোস্টার ও ব্যানার কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করা হয়। বাবু বলেন, আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী খালেদা জিয়ার সঙ্গে মূল ফটক দিয়ে কোন কর্মীকে ঢুকতে দেয়নি। এ জন্য তিনি তার কর্মীদের তিন ভাগে বিভক্ত করে বিভিন্ন স্থান দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে প্রবেশ করান।
পরে পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া নিরাপদে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফিরে যান।
এছাড়া সকাল ৮টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা মূল বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এলে মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করার পরপরই জাতীয় পার্টির স্থানীয় দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, যুববিষয়ক সম্পাদক মোঃ আজাদ, হাসান, মাহমুদ জলিলসহ ১৬ জন আহত হয়। নেতারা জানান, এরশাদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পার্টির আবুল কালাম আজাদ গ্র“প ও মাজহারুল ইসলাম গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় এরশাদ ও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে নেতাকর্মীরা ঘিরে রাখে। আহত জাতীয় পার্টির সমর্থক মাজহারুল ইসলাম ও কামাল হোসেনকে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্মৃতিসৌধ এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের এ ধরনের সংঘর্ষের ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরাবরের মতো এবারও জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ছিল চরম যানজট। পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন আগতরা।
Discussion about this post