পাবনা থেকে মোবারক বিশ্বাসঃ পাবনা জেলা প্রশাসনের বারান্দায় সাধারণ মানুষের নিরব কান্না চলছে। রেললাইনের ভূমি অধিগ্রহণের চেক নিতে প্রত্যেক ভূমি মালিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫% টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে । অফিসিয়াল খরচসহ রাজনীতিবিদদের ম্যানেজের নামে এই টাকা আদায় হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় তলার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। দেড় লাখ টাকার চেক দিতে তার কাছ থেকে দাবি করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। বৃদ্ধের কাছে ১৩ হাজার টাকা রয়েছে। এজন্য তাকে চেকটি দেয়া হয়নি। আরও ২ হাজার টাকা জোগাড় করে আনতে বলা হয়েছে। জেলার ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পাবনা জেলার অধিগ্রহণকৃত ভূমির মধ্যে সদরের বাইপাস এলাকাসহ ১১ কিলোমিটার ভূমি মালিকদের টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে। আর ঈশ্বরদী-ঢালারচর পর্যন্ত পুরো জেলার অধিগ্রহণকৃত এসব জায়গাতে বসবাস করা ভূমি মালিকদের দেবার জন্য বরাদ্দ করা হয় ১শ’ ৩২ কোটি টাকা। বর্তমানে সদরের অধিগ্রহণকৃত এই ১১ কিলোমিটার ভূমির চেক প্রদান করছে জেলা প্রশাসন। বাকিদের টাকা দেয়া হবে আগামী বছর বলে জানানো হয়েছে। সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে এভাবে টাকা আদায় করার মত নজির পাবনা জেলা প্রশাসনে এর আগে তেমন ঘটেনি। অনেক মানুষ ধারদেনা করেও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে চেক গ্রহণ করছেন। মেরিল বাইপাস সড়কের বাসিন্দা আয়কর আইনজীবী আবু সাঈদ এর কাছ থেকে ৫% টাকা চাওয়া হয়েছে। তার জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ। তিনি কোনভাবেই টাকা দিতে রাজি নন। কারণ আইনের কোথাও টাকা প্রদানের বিধান নেই। আট মাইল এলাকার বাসিন্দা কুদ্দুস শেখ এর ছেলে গোলাম মোস্তাফা’র জমির পরিমাণ ১০ কাঠা, দাম হয়েছে ৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। তার কাছে চেক গ্রহণের জন্য চাওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। মালিগাছার মিলি খাতুন ২৪ শতাংশ জায়গার মালিক, ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা জমির মূল্য ধরে তার কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। রেলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে ৫% হিসেবে যে সমস্ত ভূমি মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে চেক প্রদান করা হয়েছে তাদের সংখ্যাও কম নয়। সদরের সিংগা মহল্লার বাসিন্দা পীর আব্দুর রশিদ, আব্দুর রাজ্জাক, আবু তালেব, রহিম উদ্দিন, সাধন, তোফাজ্জল, আসাদ, ইব্রাহীম, মোহন, শহীদ মহুরী, ইরফান, করিম, আজিজ, গনেশ, উত্তম, অসিত, শ্রীকান্ত, কার্তিক, দীলিপ প্রমূখেরা। এদের মধ্যে পীর আব্দুর রশিদ ৫% হিসেবে টাকা জমা দিয়ে প্রায় কোটি টাকা চেক তুলেছেন বলে তার স্বজনের জানান। এব্যাপারে পীর আব্দুর রশিদকে দিতে হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। অফিসের কাছে জানতে চাইলে তারা তেমন সদুত্তর দিতে পারেনি। কর্মচারীরা জনগণকে বলছেন, অফিসের কর্মকর্তা, রাজনীতিবীদ, সাংবাদিকদের দিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কথাও উচ্চারণ করছেন কর্মচারীরা। কাউকে কাউকে ভ্যাট ও উন্নয়ন কর বলেও টাকা নেওয়া হয়েছে। যাকে যা বলে ম্যানেজ করে টাকা আদায় করা যায়, তারা তাই করেছেন। ৭ ধারা জারী করার পরেও ভূমির কাগজপত্রের মধ্যে এটি নেই ওটি নেই বলে জনগণকে হয়রানী করে টাকা আদায় চলছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি তিনি জানেন না। বিষয়টি এমন হলে তা খুবই খারাপ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক দেখবেন বলে জানান। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বেঞ্জামিন জাম্বু গং এবিষয়ে বলেন, আমার জানা মতে সঠিক নিয়মেই সব হচ্ছে। আমার কাছে এমন ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি। তিনিও বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রাখবেন বলে জানান। এদিকে সাধারণ মানুষ বিষয়টি তদন্তের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আর এ ভুমি অধিগ্রহনের ৫% টাকা তোলার জন্য এলাকার কতিপয় টাউট,বাটপার ও জনপ্রতিনিধিরাও প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে। বিনিময়ে ঐ সব টাউট বাটপাররা জমির মালিকদের কাছ থেকে ৫% ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। সরকারের জমি অধিগ্রহণ করার ফলে অনেকে নিজ ভিটেমাটি হারালেও প্রশাসনসহ স্থানীয় কতিপয় দালাল শ্রেণীর ব্যাক্তিদের টাকা কামানোর মৌসুম শুরু হয়েছে। গ্রামের অনেক অশিক্ষিত অসহায়দের কাছ থেকে ঐ সব দালাল শ্রেণীরা সুযোগমত আরো বেশী অর্থ আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Discussion about this post