
আপনি কোনো এক আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী,খুব সকালে আপনার যাত্রার সময়। ঘুম থেকে জেগে কোনোরকমে প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, তাড়াহুড়ায় প্রাতঃকৃত্য সারা হলোনা। ট্রেনে চড়লেন,মাঝপথে চাপ এলো ভীষণ রকম । একবার ভাবুন তো! ট্রেনে টয়লেট নাই, কি হবে আপনার অবস্থা?
বর্তমান সময়ে ট্রেনে টয়লেট নাই! এ কথা ভাবা না গেলেও আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে, যখন ভারতীয় উপমহাদেশে ট্রেন চলাচল শুরু। তখন কিন্তু ঠিকই টয়লেট ছিলোনা। সেসময় এমন কোনো জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ট্রেনের যাত্রীকে অপেক্ষা করতে হতো পরবর্তী স্টেশনের জন্য। পরবর্তী স্টেশনে ট্রেন থামলেই তবে চাপ থেকে নিস্তার।
তা কিভাবে এলো ট্রেনে টয়লেট ব্যবস্থা?
সময়টা ১৯০৯ সাল, পাকা কাঁঠালের গন্ধে চারিদিকে মৌ মৌ করছে। অখিল চন্দ্র সেন নামে এক বাঙ্গালি ভদ্রলোক পেট ভরে কাঁঠাল খেয়ে ট্রেন ভ্রমণ করছিলেন। মাঝপথে তার পেটে মোচড়! প্রকৃতির করুণ ডাক! ট্রেনেও টয়লেট নাই, এখন উপায়?
ভদ্রলোক পেট চেপে অপেক্ষা করতে লাগলেন। ট্রেন এসে থামলো আহমেদপুর স্টেশনে। ভদ্রলোক সাথে থাকা লোটা নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কর্ম সম্পাদনে।
কর্ম সম্পাদনের মাঝপথে সে ট্রেনের গার্ড বাজিয়ে দিলেন হুইসেল, গার্ডের হুইসেলে ট্রেন চলতে শুরু করলো। এ দেখে বেচারা অখিল চন্দ্র এক হাতে লোটা আরেক হাতে ধুতি ধরে ছুটলেন ট্রেন ধরতে। কিন্তু তিনি কি আর ট্রেনের নাগাল পান? ট্রেন ততক্ষণে প্লাটফর্ম ছেড়েছে।
এদিকে পড়িমরি করে ছুটতে গিয়ে অখিল চন্দ্র হুমড়ি খেয়ে পড়লেন প্লাটফর্ম ভরা নারী-পুরুষের মধ্যে। রাগে ক্ষোভে আহমেদপুর স্টেশন থেকে বাড়ীর পথ ধরেন তিনি।
বাড়ী ফিরে জনদুর্ভোগের জন্য সে গার্ডের বিচার চেয়ে চিঠি লিখেন রেলওয়ের পশ্চিমবঙ্গের সাহেবগঞ্জ ডিভিশনাল অফিস বরাবর। সেখানে বিস্তারিত ঘটনা জানান, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে পত্রিকায় লেখালেখিরও ঘোষণা দেন।
এ ঘটনায় টনক নড়ে ব্রিটিশ ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষের। ট্রেনের প্রতি কম্পার্টমেন্টের সাথে যুক্ত হয় টয়লেট।
আর অখিল চন্দ্র সেনের যে চিঠির জোরে এ পরিবর্তন, সেটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে দিল্লির ন্যাশনাল রেলওয়ে যাদুঘরে।
এ চিঠি দেখার সৌভাগ্য কখনো যদি আপনার নাও হয় তবে জীবনে কখনো যাত্রাপথে ট্রেনে চাপ এলে একবার হলেও অখিল চন্দ্র সেনকে স্মরণ করবেন।
*ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অবলম্বনে
Discussion about this post