মোবারক বিশ্বাস নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ সারা দেশে তীব্র বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সংকট থাকলেও পাবনা সেচ ও পল্ল¬ী উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষকরা মহাসুখে তাদের জমিতে নামমাত্র খরচ দিয়ে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারছে। এতে করে চলতি মৌসুমেই ১২০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকের সাশ্রয় হবে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। দেশের অন্যান্য স্থানের কৃষকরা যখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সমস্যায় বোরো আবাদ করতে হিমশিম খাচ্ছে ; কয়েক গুন বেশী খরচ করেও জমিতে সেচ দিতে পারছে না তখন সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় পাবনা সেচ ও পল্ল¬¬ী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকরা নামমাত্র সেচ কর দিয়ে নদীর পর্যাপ্ত পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিতে পারছে। এরই মধ্যে চারিদিকে সবুজে ভরে গেছে। শুধু সবুজের সমারোহ। এই প্রকল্পের কৃষকরা শুধুমাত্র চলতি মৌসুমেই ১২০ কোটি টাকা মুল্যের ধান উৎপাদনের আশা করছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ১৯৯১ সালে ৩৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনার ৯টি, সিরাজগঞ্জের ১টি ও নাটোরের ২টি উপজেলা সমন্বয়ে ১২টি উপজেলার ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যে জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনা সেচ ও পল¬¬ী উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ জন্য ১৫৮ কিলোমিটার বাধ নির্মাণ করা হয়। ফলে পাবনা জেলার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমি বন্যামুক্ত হয়। এ ছাড়া কৃষি জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ৩টি প্রধান ক্যানেল ও ১৯টি সেচখাল নির্মাণ করা হয়। এই সব সেচ খালের ১৫টি টারসিরয়ারী রয়েছে। নানা ত্র“টির কারণে এর আগে প্রতি বছর এই প্রকল্পের কোন না কোন এলাকায় খালের ডাইক ভেঙে যেত। ফলে কৃষকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু চলতি বোরো মৌসূমে এই প্রকল্পের কৃষকরা প্রতিবিঘা জমিতে মাত্র ১৮০ টাকা সেচকর দিয়ে জমিতে পর্যাপ্ত পানি সেচ দিতে পারেছে। এতে করে তাদের বিঘাপ্রতি প্রায় ২ হাজার ৮০০ টাকা করে সাশ্রয় হচ্ছে। অপরদিকে বিদ্যুৎ বা জ্বালানীর কোন দু:শ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। নদী থেকে সরাসরি পানি পাম্প করে জমিতে দেওয়ায় জমির উর্বরতা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক, কোরবান আলী বলেন, আমাগোরে অ্যাহন আর চিন্তা নাই, নদীর পানি দিয়া সেচ দিচ্ছি। অনেক পানি ক্ষ্যাতে দিতে পারতাছি। সাগরদাড়িয়া গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, পুরা মৌসুমে ১৮০ টাকা দিয়ে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারায় আমরা খুশি। এতে কইরা বিঘা প্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা খরচ বাইচ্য গ্যাছে। মাহমুদপুর সেচ গ্রহিতা কৃষক সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, সমবায় সমিতির মাধ্যমে সেচ দেওয়ার ফলে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাবুদ আলী শেখ বলেন, আগে এ সব জমিতে এক ফসল হতো। সেচ দেওয়ার ফলে ফসলেন নিবিড়তা বেড়েছে এবং এক বছরে ৩টি ফসল করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বেড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কবিবুর রহমান বলেন, দেশের বৃহত্তম এই প্রকল্পের কৃষকরা আগে নানা সমস্যায় থাকলেও সরকারের সদিচ্ছা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস চেষ্টা থাকায় তারা নামমাত্র দাম দিয়ে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বেড়া পাম্প হাউসের মাধ্যমে হুরাসাগর নদী থেকে পানি পাম্প করে কৃষকদের জমিতে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে প্রায় এক মৌসুমেই ১২০ কোটি টাকা মুল্যের ৫৬ হাজার মেট্রিকটন অতিরিক্ত ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এদিকে এই সেচ খালের পানি এলাকার মানুষজন নিত্য নৈম্যতিক কাজেও ব্যবহার করছে। ফলে তারা সেচ খালে নদীর আনন্দ উপভোগ করতে পারছে। তিনি আরও বলেন, এই এলাকাসহ দেশের পরিবেশ ও আর্থ সামজিক উন্নয়নে এই প্রকল্প বৃহৎ ভূমিকা পালন করছে।
পাবনা আতাইকুলায় কৃষকের লাশ উদ্ধার
মোবারক বিশ্বাস নিজস্ব সংবাদদাতাঃপাবনা আতাইকুলা থানার দড়ি সারদিয়ার গোরস্থানের পার্শ্বে শুক্রবার রাতে এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে শুক্রবার রাত ১১ টায় আতাইকুলা থানার দড়িসারদিয়ার গোরস্থানের পার্শ্ব থেকে কৃষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের শরীরের কোন স্থানে কোন আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও নিহতের পরিবারের দাবী পাওয়ার টিলার উল্টে নিহত হতে পারে। নিহতের পরিবার আরো জানায়, শুক্রবার সকালে জমি চাষের উদ্দেশ্যে পাওয়ার টিলার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সারাদিন কোন খবর পাওয়া যায়নি। পথচারিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে গিয়ে নিহতের লাশ সনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। নিহত ব্যাক্তি সদর উপজেলার আতাইকুলা থানার দড়িসারদিয়ার গ্রামের মোঃ জয়নালের ছেলে মোঃ লোকমান হোসেন (৪০)। নিহত লোকমানের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় আতাইকুলা থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে নিহতের লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
Discussion about this post