পাবনা থেকে মোবারক বিশ্বাস ঃ নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী ও শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘন্টা হরতালের প্রথম দিন সোমবার পাবনা জেলায় শান্তিপুর্ণভাবে হরতাল পালন হচ্ছে। হরতালের ১ম দিনে সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে বিএনপি রক্ষা কমিটি নেতা-কমীরা হরতালে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, অবরোধ করে রাখে । গত রোববার জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি রক্ষা কমিটির সাধারন সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টু, তার সর্মর্থীত নেতা-কর্মীদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের সকল কর্মসুচী কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ প্রদান করার পর থেকে পাবনা সদর উপজেলার রাজনৈতিক চেহারা পাল্টে যায়। রোববার হরতালের আগের দিনে বিএনপি রক্ষা কমিটির নেতা-কর্মীরা পৌর ১৫টি ওয়ার্ডের ৫টি স্পটে হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। ফলে হরতালের ১ম দিনে পাবনা পৌরসভার এলাকাসহ সদর উপজেলার প্রতিটি যায়গায় রক্ষা কমিটির নেতা-কর্মীরা অবস্থান গ্রহণ করে মূলত জেলা সদরকে অন্যান্য উপজেলাগুলো থেকে বিচ্ছন্ন করে দেয়। পাবনা পৌর বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক ও জেলা বিএনপি রক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ও সদর উপজেলা বিএনপি রক্ষা কমিটির আহবায়ক সাবেক জেলা বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে প্রতিটি আন্দোলন পাবনায় যথাযথভাবে পালন করা হবে। আগামীতে খালেদা জিয়া নির্দেশ দিলে পাবনাকে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে অবরোধের মাধ্যমে আলাদা করে দেওয়া হবে। কামরুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে আমাদের হাজার নেতা-কর্মী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। হরতালে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত দোকান পাট বন্ধ ছিল। পিকেটারদের ভয়ে রাস্তায় রিক্স্রা চলাচল ছিল চোখে না পড়ার মতো। মূলত পাবনার জনপ্রিয় এই নেতার হরতাল পালনের আহবানে বিএনপি’র ত্যাগি নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসেন। সদর উপজেলার মালিগাছা ইউপি’র বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, আমাদের ইউনিয়নে মহাসড়কসহ দোকানপাট যে ভাবে বন্ধ রয়েছে এবং সকাল থেকে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা যেভাবে পিকেটিং করছে তা ইতিপুর্বে কোন হরতালে চোখে পড়েনি। মিন্টুর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা গ্রামে গঞ্জে হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে পড়েছে। পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুর রাস্তায় থাকার ঘোষনায় আতংকে পাবনা শহরের সমস্ত দোকান পাট হরতালে বন্ধ ছিল। এদিকে হরতালের সমর্থনে ১৮দলীয় জোটের একটি মিছিল শহরের প্রদান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে দলীয় অস্থায়ী কার্যালয় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্বদেন জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান তোতা ও জামায়াত ইসলামী পাবনা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আবু তালেব মন্ডল। হরতালের ১ম দিনে জেলার কোথাও কোন অপৃতিকর ঘটনা না ঘটলেও অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা মূলত খোলা থাকলেও জনগনের উপস্থিতি ছিল চোখে না পড়ার মত। বিশেষ করে উপজেলা থেকে কার্যত পাবনা সদরকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিএনপি রক্ষা কমিটির নেতা-কর্মীরা। সেই সাথে জামায়াত ইসলামী ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়কের ক্যালিকো কটন মিল, রাজাপুর, জালালপুর, বাঙ্গাবাড়িয়া,জাফরাবাদ পুষ্পপাড়া, মধুপুর, গঙ্গারামপুর, পুটিগাড়া, মাধপুর, দুলাই, চিনাখড়া, কাশিনাথপুর, পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের তেতুলতলা, দাশুড়িয়া, নওদাপাড়া, ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া মহাসড়কের মুন্নার মোড়, পাকশী, রুপপুর, ঈশ্বরদী-বাঘা সড়কের গোকুলনগর, বেড়া সিএনবি বাসস্ট্যান্ড, সাঁথিয়া উপজেলার সামনে, নন্দনপুর, চাকলা, জোরগাছা, করমজা, সদর উপজেলার কোলাদী, তারাবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে পিকেটাররা। এসময় তারা হরতালের সমর্থনে মিছিল করে। এছাড়া পাবনার প্রতিটি উপজেলায় ৫/৭ টি স্পটে পিকেটিং করছে বলে জানা গেছে। হরতাল চলাকালে দুরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। জেলার আভ্যন্তরীণ রুটেও কোন যান চলাচল করেনি। সমস্ত যান চলাচল বন্ধ থাকায় আতংকে সাধারন মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হয়নি। হরতালের ১ম দিনের আগের রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শহরের শালগাড়িয়া ও অন্যান্য এলাকা থেকে ছাত্র শিবিরের ১৪জন নেতা-কর্মীকে আটক করেন। এরা হলেন, সুজানগর উপজেলার জাহাঙ্গিরের ছেলে সজিব(২০), মজিবর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা(২১), মোঃ সায়েম শেখের ছেলে রুহুল আমীন (১৯), মোখলেছ মিয়ার ছেলে ইমরান(২০), আবুল কালাম আজাদের ছেলে আরিফুল ইসলাম(১৮), আব্দুল মান্নানের ছেলে সুমন(১৯), ঈশ্বরদী উপজেলার আজহারের ছেলে কাওছার(১৯), আটঘরিয়া উপজেলার মনিরুজ্জামানের ছেলে আরিফুল ইসলাম(২২), বেড়া উপজেলার আমজাদ হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম(২০), চাটমোহর উপজেলার মোজাম্মেল হকের ছেলে মেরাদুল ইসলাম(২০), আতাইকুলা থানার রফিকুল ইসলামের ছেলে রাজিব হোসেন(১৯), সাথিয়া উপজেলার হায়েদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল দায়য়ান(২০), কুষ্টিয়া জেলার আনছার আলীর ছেলে রাশেদ আহম্মেদ(২০), ঝিনাইদহ জেলার আক্কালের ছেলে কুবাঈদ উল্লাহ(২৫)। পাবনা থানা পুলিশ জানায় গ্রেফতারকৃতরা সবাই ইসলামী ছাত্র শিবিরের সক্রিয় সদস্য। পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা জানান, আটককৃতদের শহরের বিভিন্ন যায়গা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Discussion about this post