মোবারক বিশ্বাস পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলায় বিএনপি’র বৃহস্পতিবারে ডাকা হরতালের সকালেই পিকেটাররা রেল লাইন উপড়ে ফেলাসহ ১টি মাইক্রোবাসে আগুন ও ভাংচুর করে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার করেছে। এতে ঈশ্বরদীতে একটি লোকাল ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৫ জন আহত হয়েছে। পিকেটিংএর কারনে পুলিশ ৪ পিকেটারকে আটক করেছে। প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায় হরতালের প্রথম প্রহরে সকাল ৭ টায় ঈশ্বরদীর আউটার সিগনালের কাছে পিকেটাররা রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে। ফলে এ সময় একটি লেকাল ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীরা তাড়া হুড়া করে নামতে গিয়ে ১৫ জন আহত হয়। এতে ঈশ্বরদী-ঢাকাসহ সকল রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকালে পিকেটাররা ঢাকাগামী ট্রেন (৫৫১ নম্বর লোকাল) হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এর আগে পিকেটাররা পশ্চিম টেংরি মোড়ে ১টি মাইক্রোবাসে আগুন থানার সামনে একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর ও রেলগেটে একটি ট্রাক ভাংচুর করেছে। ঈশ্বরদী থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ফিরোজ আহম্মেদ, সোহেল, ইমরান ও সুমন নামে ৪ জনকে আটক করেছ। বিভাগীয় রেলওয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিঃ রফিকুল ইসলাম জানান, হরতালকারীরা রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় লোকাল ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে ঢাকা-ঈশ্বরদী ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও বাইপাশ করে বিকল্প লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কতৃপক্ষ ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পাবনা সুগার মিলে ৪১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত : দুই মাস বেতন বন্ধ : আমদানীকৃত চিনি খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত
মোবারক বিশ্বাস- বেশী লাভের আশায় দেশের কতিপয় ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে হাইড্রোজেন যুক্ত ‘র’-চিনি আমদানি করে অবাধে বিক্রি করছে। এতে একদিকে দেশি চিনি অবিক্রিত থেকে ১৫ টি চিনিকল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত চিনি ও চিনি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি ও খাদ্যদ্রব্য খেয়ে অনেক মানুষকে নানা রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। বিদেশি চিনি আমদানির ফলে শুধু পাবনা চিনি মিলে ৪১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত পড়ে আছে। চিনি বিক্রি না হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। সংশ্লি¬ষ্ট সূত্র জানায়, পাবনা চিনি মিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদেশী ঋণসহ নানা কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মিল প্রশাসন। তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কতিপয় ব্যবসায়ীরা নিজেদের আখের গোছানোর স্বার্থে বিদেশ থেকে কমদামে, অনুন্নত হাইড্রোজেন যুক্ত চিনি আমদানি ও বিক্রি করে শ’ শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে দেশিয় মিলগুলিতে উৎপাদিত উন্নত মানের চিনি বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা না বুঝেই কিছু কম দাম পেয়ে বিদেশি চিনি কেনার প্রতি ঝুকে পড়েছে। একই সাথে মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাদ্যপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গুলোও বিদেশি চিনি ব্যবহার করে ব্যবসায়ীকভাবে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। পক্ষান্তরে ওই সব চিনি দিয়ে প্রস্তুতকৃত মিষ্টিসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সূত্র মতে, বিদেশি চিনি আমদানি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী-ডিলার কর্তৃক মিল থেকে চিনি না কেনার কারণে শুধু পাবনা চিনি মিলে ৪১ কোটি ১২ লাখ ৩ হাজার টাকার ৭ হাজার ২৯৪ দশমিক ৬০ মেট্রিকটন চিনি অবিক্রিত রয়েছে । এতে করে মিল প্রশাসন চরমভাবে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। গত প্রায় দু’মাস থেকে মিল প্রশাসন কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেতন দিতে পারছেন না। সরকারিভাবে ঋণ পাওয়া না গেলে আদৌ বেতন দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা থেকে মিলকে রক্ষা করার জন্য মিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ডিলারদের মধ্যে দেশাত্ববোধের ঘাটতি না থাকলেই তারা দেশিয় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা এবং দেশের জনগণকে সুস্থ্য রাখতে মিল থেকে উন্নতমানের চিনি কিনতে আগ্রহী হবেন। একই কারণে গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলেও প্রায় ৬৫ কোটি টাকার ১১ হাজার ৭শ’ মেট্রিক চিনি অবিক্রিত রয়ে গেছে। চরম অর্থাভাবে মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন বন্ধ রয়েছে। এই মিল থেকেও ব্যবসায়ী ও ডিলারদের চিনি কেনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সচেতন মহলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে দেশাত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে এবং উন্নত মানের দেশিয় চিনি ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। চক চক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি বিদেশী চিনি বেশি সাদা দেখলেই স্বাস্থ্যসম্মত হয় না বলেও ওই মহলটি মনে করেন। এ ব্যাপারে পাবনা চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল সালাম ৪১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত এবং ২ মাসের বেতন বন্ধের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকার এ সমস্যা কাটাতে চেষ্টা করছে।
পাবনা আটঘরিয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন : দাম নাপেয়ে হতাশ কৃষক
মোবারক বিশ্বাস- চলতি বোরো ধানের আবাদে বাম্পার ফলন হলেও ধানের দাম কমে যাওয়ায় পাবনার আটঘরিয়ার সব কৃষকই চরম হতাশায় পড়েছেন। সারাবছর পর কৃষক বোরো ধান কাটার সময় যে আনন্দে থাকেন এবার ভালো ফলনে সেই আনন্দ আরো বেশী হওয়ার কথা থাকলেও কৃষকদের মনে নেই কোন উচ্ছাস। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ধান উৎপাদনের খরচই ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানান, এ বছর আটঘরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১২ হাজার ৮শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার রবিআহ নূর জানান, এসব জমিতে হাইব্রিড, আটাশ, উনত্রিশ, বিনা-৭, রতœা-১৭, ব্রি-৫০ ও স্থানীয় টোপা বেরো জাতের ধান আবাদ হয়েছে। এবার এসব ধান আবাদের তে পানি সমস্যা ছাড়া তেমন কোন সমস্যা না থাকা এবং রোগ বালাই ও পোকার আক্রমন তুলনামূলক কম থাকায় কৃষকদের ধান আবাদ করতে হিমশিম খেতে হয়নি। কৃষকরা জানান, এবার অন্যান্যবারের তুলনায় ধানে চিটাও ছিল কম। কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে প্রকারভেদে ৬ থেকে ৮ মেট্রিক টন করে ধান উৎপাদন হয়েছে। মাজপাড়া ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া এলাকার আব্দুস সামাদ জানান, এবার ধান বেচে উৎপাদন খরচই ঘরে আসছে না, তিনি জানান মূলাডুলি হাটে স্থানীয় ধানের ধান প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫শ’ ২০ টাকা দরে অথচ এবার ধানের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬শ টাকারও বেশী। আটঘরিয়া পৌর এলাকার উত্তরচক গ্রামের কৃষক শ্রী বিপ্লব কুমার সেন বলেন, হাটে ধান বিক্রি করতে পরিবহন খরচ বাদ দিলে প্রতি মন ধানের দাম সাড়ে ৪ শ টাকারও কম পড়ে। কৃষকরা জানান, ধান লাগানো থেকে কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে তাতে এবার ধান বেচে লাভ তো দুরে থাক মূলধন ঘরে তোলাই দায় হয়ে পড়ছে তাদের।
যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার দেখে মরতে চান বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাঙ্গুড়ার ফিরোজ
মোবারক বিশ্বাস- পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া বিশ্বাসপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব আকাতুল্লাহ প্রামানিকের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আনিছ মোঃ ফিরোজ (৬৫) যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার দেখে মরতে চান। ১৯৭১ সালে ইদ্রিস আলী দলের সঙ্গে পাবনার চাটমোহর এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। তার কমান্ডারের নাম ছিল আমজাদ হোসেন লাল। মুক্তিযোদ্ধার মূল সনদটি হারিয়ে ফেলায় শেষ সম্বল ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে প্যারালিজ রোগে আক্তান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় ঘরে পড়ে আছেন। তার ২ ছেলে ১ মেয়ে পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। পড়াশুনা শেষ করলেও তার ২ সন্তানের চাকুরি জটেনি। নিজের দীর্ঘদিন প্যারালিজ রোগে আক্তান্ত হয়ে পড়ে থাকলেও আর্থিক সংকটের কারনে চিকিৎসা করাতে পারছেনা। তিনি ক্ষোপ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরের অতিবাহিত হয়ে চললেও জোটেনি মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা। জাতীয় শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আনিছ মোঃ ফিরোজ বর্তমানে সরকারের কাছে দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে মরতে চান।
Discussion about this post