মোঃ মোবারক বিশ্বাস-বাংলার বার্তা- পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে ১৯ মার্চ দিবাগত রাতে জমি সংক্রান্ত এক শালিস বৈঠকে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতাসীনদলের ক্যাডারদের হামলার ঘটনায় মহিলা সহ উভয় পক্ষের ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামীলীগ ক্যাডারগণ স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক হযরত গং এর বাড়ি ভাংচুরসহ ব্যাপক লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার পরে হযরত গং পরিবারের সকল সদস্য নিরাপত্তার অভাবে এলাকা ত্যাগ করেছে। আর এ সুযোগে উক্ত সরকার দলীয় ক্যাডারগণ লুটপাটের সুযোগ গ্রহণ করেছে। সরোজমিন ঘুরে ও ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ১৯ মার্চ সোমবার রাত ১০ টায় চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মৃত জামাল হাজির ছেলে আ’লীগ নেতা জলিলের বাড়িতে এক শালিস বৈঠক বসে। জমি কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে উক্ত শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জমির ক্রেতা রইজ উদ্দিন মৃত জামাল হাজীর ছেলে আব্দুল জলিলের কাছে তার চাচা আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে বিচার দাবী করে। ১৯ মার্চ রাতে উক্ত বিচারে স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতা জালিল তার ভাই জালাল,খলিল, জাফরসহ স্থানীয় প্রাং আয়নাল ও তার সঙ্গি আফসার এবং স্থাণীয় বিএনপি নেতা হযরত আলী ও আদমসহ স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে শালিসের প্রধান জালাল তার চাচা আব্দুল গফুরের পক্ষ অবলম্বন করে। এ সময় জমির ক্রেতা রইজ আলীর পক্ষ নেয় হযরত আলী। সেখানে হযরতসহ স্থানীয়রা জলিলকে দোষারোপ করেন এই বলে, আপনি ন্যায় বিচার না করেন আপনার চাচার পক্ষ অবলম্বন করছেন। আপনার চাচা আব্দুল গফুর যে জমি বিক্রি করেছে সেটা ক্রেতাকে রেজিষ্ট্রি করে দিতে হবে নইলে ক্রেতাকে পর্যাপ্ত ক্ষতি পুরণ দিতে হবে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগ নেতা জলিল ও আইনাল প্রাং এর ক্যাডারগণ স্থাণীয় বিএনপি নেতা হযরত ও আদম উপর ক্ষিপ্ত হয়ে শালিস বৈঠকে মারপিট শুরু করে। মারপিটের এক পর্যায়ে হযরত ও আদম জীবন বাঁচাতে চিৎকার শুরু করে। তাদের চিৎকারে আত্বিয়স্বজন এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আদম আলীর স্ত্রী রাশিদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, এই ঘটনার জের ধরে ঘটনার পরপরই স্থানীয় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মূলগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাহেব আলী মাষ্টার ,আইনাল প্রাং, জলিল প্রাং ও আফসারের নেতৃত্বে শতাধীক ব্যাক্তি সশস্ত্র অবস্থায় আমাদের বাড়িতে আক্রমন করে। আক্রমনকারীরা হযরত ও আদম আলীর ২টি ঘরে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। আক্রমনের সময় উভয় পক্ষের মহিলাসহ ৭ জন আহত হয়। আক্রমনকারীরা বিএনপি নেতা আদম ও হযরতের বাড়ি থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ৪ ভরি ¯¦র্ণালংকার, পিয়াজ, মরিচ, রসুন সহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আহতরা হলো হযরত আলী, হযরতের ভাগ্নে সিদ্দিক ও তার স্ত্রী মানিকজান ও অপর স্ত্রী মূল্লুকজান, ইউনুসের স্ত্রী আলেয়া, জামাল হাজীর ছেলে জাফর ও জালাল। এরপর গভীর রাতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাহেব আলী মাষ্টারের নেতৃত্বে আইনাল হানেফ, গুলবার,আজাদ,নয়ন, নায়েব আলী, আনোয়ারসহ ২০/৩০ জন হযরতের ব্যবসায়ীক বিভিন্ন প্রকারের গোলায় কাঠ করিমন যোগে তুলে নিয়ে যায়। যার মূল্য ৪ লাখ টাকা হবে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ হযরত। কাঠ নিয়ে যাবার পথে পার্শ্ববর্তি ফৈলজানা ইউনিয়নের নেংরি গ্রামে কাঠ বোঝাই একটি করিমন আটক করে গ্রামবাসী। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক বলেন, ঐ দিন সকালে ৩-৪টি করিমন কাঠ বোঝাই করে নিয়ে যাবার পথে একটি করিমন নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় শিবপুর ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজিমুদ্দিন সেখানে উপস্থিত হয়ে কাঠ বোঝাই করিমন আটক করে আমাকে খবর দেন। পরবর্তিতে চাটমোহর থানার সেকেন্ড অফিসার আবুল কালাম সেখানে উপস্থিত হয়ে আমার জিম্মায় কাঠ বোঝাই করিমনটি রেখে আসেন। স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের চাপের মুখে কাঠ পাচারকারী আনোয়ার ও নয়নকে মুচলেকা নিয়ে স্থানীয়দের জিম্মায় পুলিশ ছেড়ে দেন। এ ছাড়া আরেকটি করিমন বোঝাই কাঠ টেবুনিয়ায় মৃত ওহিদ বিশ্বাসের ছেলে শিপুর মেলে বিক্রয় করে চলে যায় প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা। ঘটনার দিন রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছালেও ক্ষমতাসীনদের চাপরে মুখে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। হযরতের স্ত্রী হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ যথাসময়ে যথাযথ ভুমিকা গ্রহণ করলে লুটপাটের ঘটনা বা কাঠ লুটের ঘটনা ঘটতো না। পুলিশ আমাদেরকে রক্ষা না করে উল্টো হামলকারী আওয়ামীলীগ ক্যাডারদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ আমাদের অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো হামলাকারীদের অভিযোগ মামলা হিসাবে গ্রহণ করেন। যার বাদী আব্দুল জলিল মামলা নং-১৮/২১-০৩-১২ ইং। ঘটনার ৫দিন পর গত ২৪ মার্চ আমাদের অভিযোগ এজাহার হিসাবে গন্য করেন। যার নং-১৯/২৪-০৩-১২। ঘটনার পর থেকে হযরত গং এর পুরুষ সদস্যরা আওয়ামীলীগ খ্যাডারদের ভয়ে এলাকাছাড়া। শুধু তাই নয় শিবপুর গ্রামের সিদ্দিক এর ছেলে দিন মজুর সমাজ ঢাকা থেকে ঘটনার ২দিন পর বাড়িতে এলে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সরোজমিনে গিয়ে হযরত গংদের পরিবারে কোন পুরুষ সদস্যকে খুজে পাওয়া যায়নি। উক্ত এলাকায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাহেব আলী মাষ্টারের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মহড়া চালাচ্ছে। সেখানে কোন অপরিচিত লোককে দেখলে তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমাদের সংবাদদাতা শিবপুর গ্রামে ঘটনার বিবরন জানতে উপস্থিত হলে সাহেব আলীর সশস্ত্র ক্যাডারগন তার কাজে বাধা প্রধান করেন। শিবপুর গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে মোঃ সুজন বিএনপি নেতা হযরত আলীর বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ কাটা ও কাঠ নিয়ে যাবার সাথে সম্পৃক্ত সাহেব আলী ও জালাল এর নাম বলতে গেলে সাহেব আলীর ক্যাডার শিবপুর গ্রামের মৃত বাহাদুর এর ছেলে গোলবার হোসেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে যান। এ সময় আমাদের প্রতিনিধি ছবি তুলতে গেলে তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এ সময় আমাদের প্রতিনিধি চাটমোহর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। চাটমোহর থানার সেকেন্ড অফিসার আবুল কালাম সেখানে পৌছালে অভিযুক্ত গোলবারসহ তার সঙ্গিরা পালিয়ে যান এবং সেখানে উপস্থিত ইউপি আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক সাহেব আলী গোলবারের পক্ষ অবলম্বন করেন। সন্ত্রাসীরা এও বলেন মৃত জামাল হাজী ও পরাজিত সাহেব চেয়ারম্যান পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ কোন বক্তব্য দিলে তাকে এলাকাছাড়া করা হবে। হযরতের স্ত্রী হাসিনা আরো জানায়, সন্ত্রাসীরা এখনও রাতের আধারে আমাদের বাঁশ ঝারের বাঁশ কেটে,কাঠ রাতের আধারে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা নিষেধ করতে গেলে হুমকি ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করছে। থানা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ এলাকা ঘুরে চলে যাবার পরপরই সন্ত্রাসীরা পুনরায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা শুরু করে এবং সম্পদের ক্ষতিসাধন করতে থাকে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত বুধবার বিএনপি নেতা-কর্মীদের এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এলাকায় ঢুকতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্রনিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
Discussion about this post