আমরা সবাই মানুষ! শুধু মানুষের আকৃতি হলেই কি প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়? প্রকৃত মানুষ হতে হলে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকাটা অতীব জরুরী। কিন্তু এই মনুষ্যত্ববোধ ক’জন মানুষের মধ্যে বিরাজমান সেটাই প্রশ্ন?
খুব বেশী দিন ধরে তাঁকে আমি চিনিনা। এইতো অল্প ক’দিনের পরিচয়। এখনো ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে আমার ঠিকমতো কথোপকথনও হয়নি। কিন্তু তাঁর সততা, উদারতা, ন্যায়পরায়ণতা, কর্মনিষ্ঠতা, নিরহংকারী, নির্ভীক, যে কোন শ্রেণীর মানুষের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ এবং অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে।
এমন নির্লোভ বহুমাত্রিক কৃতিত্বের অধিকারী একজন আলোকিত মানুষ, যিঁনি সারা জীবন অসহায় মানুষ ও সমাজের জন্য নীরবে-নিভৃতে কাজ করে চলেছেন। সমাজকে আলোকিত করার এক মহাকর্মযজ্ঞে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন সারাটি জীবন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এ সাদা মনের আলোকিত মানুষটির নাম অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানায় বর্তমানে তিঁনি অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
প্রশাসনের অফিসার ইনচার্জ হয়েও সব শ্রেণির মানুষকে আপন করে নেয়ার গুণ রয়েছে তাঁর মধ্যে। তিঁনি সকলের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন খোলা মনে। একজন সফল ওসি হিসেবে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন শ্রীমঙ্গল, মৌলিভীবাজার, হবিগঞ্জ ও দিরাই থানা সহ বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের সাধারন মানুষের যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিঁনি।
শ্রীমঙ্গল থানায় অফিসার ইনচার্জে যোগদানের পরপরই অপরাধ ধমনের কাজে সহযোগিতার লক্ষে হটলাইন চালু সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করে অপরাধ দমন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। যার ফলে আজও কাঁদে শ্রীমঙ্গলের অসহায় ও সাধারন মানুষ। আর ঐ থানার অপরাধীদের আতংকের আরেক নাম ছিলো ওসি কে এম নজরুল। তাঁর যোগদানের আগে খুন রাহাজানি,ছিনতাই আর রিতিমত জুয়ার আসর সহ ধর্ষনের মত ঘটনাও ঘটছে অহররহ।
ওসি কে এম নজরুল সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন অসহায় সাধারন মানুষের সেবায়।তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় থাকা অবস্থা নাইট গাডদের কম্বল বিতরণ, এতিম গরীবদের সেলাই মেশিন শীতবস্ত্র সহ গৃহহীন পরিবারকে ঘর তৈরী করে দেওয়ার মত অসংখ্য সমাজ সেবা করেন। তাঁর মত প্রত্যেকটা থানা অফিসার ইনচার্জরা যদি হতেন বাংলাদেশের সাধারন মানুষ পুলিশের প্রতি আস্থা হারাতো না।
যান্ত্রিক এ যুগে মানুষ বড়ই আত্মকেন্দ্রিক। নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত হওয়ায় অন্যকিছু নিয়ে ভাবার সময় কারোর নেই। মানুষ যেন ভুলে গেছে স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা বিরাজমান। আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে ভালবাসলেই স্রষ্টার নৈকট্য লাভ সম্ভব। স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজস্বার্থ ছেড়ে নিস্বার্থ হওয়া সাদা মনের মানুষ পাওয়া ভার। কিন্তু এই কঠিন ব্যস্তবতায়ও কিছু মানুষ থাকে যাঁদের জন্যই বোধকরি এগিয়ে যাবার আলো দেখতে পাই। তেমনি একজন আলোকিত মানুষ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কসবা উপজেলার কৃতি সন্তান ওসি কে এম নজরুল।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কসবা উপজেলার তালতলা গ্রামের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মরহুম কে এম শাহ্ জাহানের বড় ছেলে । তাঁর শৈশব কাটে গ্রামেরই, কসবা তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে সফলতার সাথে মাধ্যমিকের পা রাখেন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন কসবা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে মাধ্যমিক পরিক্ষা অংশ গ্রহন করে কৃতিত্বে সাথে সফলতা অর্জন করেন ও কসবা টি আলী ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৯৫ সালে সেখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রি শেষ করেন।
শিক্ষা জীবন শেষ করে ২০০০ সালে সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে ট্রেনিং শেষ করে এসআই পদে কর্মজীবনে পা দেন। চাকুরী জীবনে তিন’বছর হবিগঞ্জ,ও বিশ্বনাথ থানায় তিন’বছর এবং তিন বছর শ্রীমঙ্গল থানায় সাব-ইন্সপেক্টর(এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ল্যাবে ও শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে প্রায় দীর্ঘ ৫ বছর কর্মরত ছিলেন।
২০১৩ সালের ১৩ই জুন পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করলে পুলিশ ব্যাুরো ইনভেস্টিগেশনে যোগদানের এক সপ্তাহে পর পুনরায় স্পেশাল ব্রাঞ্চে পুলিশের ট্রেনিং স্কুলে কর্মরত ছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে ১ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গল থানায় ওসি তদন্ত হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া মৌলভী বাজার মডেল থানায় ১বছর ওসি তদন্ত হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৫ই জানুয়ারি (১৯১৭ইং) সালে সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন। সফলতার সাথে সাড়ে তিন বছর অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন সহ মানব সেবায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন তিনি।
তিনি গত ৮ই মে (২০১৯ইং) সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন ও এখনো কর্মরত আছেন তিনি। এ অবস্থায়ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড দমনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছেন। সম্পতি দিরাই থানার চাঞ্চল্যকর শিশু তুহিন হত্যাকান্ডের ঘটনা দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামীদেরকে গ্রেফতার করা সহ মাদক, জুয়া,খুন,গুম, ইভটিজিং এর মত অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের অভিযান অব্যাহত সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি। দিরাই কামারখালী নদীর তীরবর্তী হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের উদ্বোধনও করেন তিনি। তাঁর সততার জন্য ভাটিবাংলা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
একজন সংস্কৃতিমনষ্ক ও ইসলামিক মানুষ হিসাবেও তাঁর কাজ ছড়িয়ে আছে এ দেশের সর্বত্র। তাঁর কাজকর্মের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত উন্নত মানসিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। যা সমাজের অন্যসব মানুষদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। সুন্দর ও ভাল মনের মানুষ হলে জীবনের সকল পর্যায়ে ভাল কাজ করা সম্ভব এ বিষয়টির অন্যতম নিদর্শন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে এম নজরুল। তিঁনি ভালবাসা, দয়া ও সৌহার্দ্যরে এক অনন্য প্রতিমূর্তি। তার সেই স্বত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার বদান্যতায়।
Discussion about this post