banglarbarta.com| মঈন উদ্দিন সরকার সুমনঃ বিভিন্ন সময় প্রবাসীদের অনেক সুখ দুঃখের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। এই সফলতার বেশির ভাগই অর্থনৈতীক বা কর্মক্ষেত্রে উন্নয়ন। আজ এমন এক সফলতার কথা পাঠকের কাছে তুলে ধরব যা অনেকের কাছে কল্পনায় চিন্তা করতে পারে কিন্তু বাস্তবে অসম্ভব বললে ভূল হবেনা। লেখাপড়া সহ অনেকের কতইনা স্বপ্ন পূরণ হয়না অর্থের অভাবে।সংসারের অভাব দুরী করণে বা বেকারত্বে সাইনবোর্ড নিয়ে বন্ধু-বান্ধব পরিবার পরিজনের কাছ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই পারি জমায় বিদেশে। অন্য দুই চার জনের মত বিদেশ পাড়ি দেয়া একজনের স্বপ্ন পুরনের ইতিকথা তুলে ধরব।www.banglarbarta.com
লোকটির নাম মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (২৯), পিতাঃ ডাঃ লুৎফর রহমান, গ্রামের বাড়ী যশোর জেলার মনিরামপুর থানার শিরালী মদনপুর গ্রামে। ২০০৪ সালে এইস এস সি পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে ভতি পরিক্ষা দিয়ে পাসও করেন। একাঊন্টিং এ অনার্সে করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু পরিবারে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারনে তা করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হাল কাধেঁ এসে পরে। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে তথাকথিত সোনার হেরিণের খোঁজে ২০০৬ সালে পাড়ি দেয় কুয়েতে। প্রবাসীর খাতায় নাম লেখিয়ে সেই থেকে শুরু হয় কর্মজীবন। এক কুয়েতির বাসায় ড্রাইভারের ভিসা নিয়ে কুয়েত এসে কাজে যোগ দেয়। কঠিন বস্তবতা কঠোর পরিশ্রম আর সততায় ভাগ্য পরিবর্তনে প্রানপন চেষ্টা। দীর্ঘ কয়েক বছর কাজের সুবাধে এরই মধ্যে ঐ কুয়েতির বাসায় সবার মন জয় করে ঐ পরিবারের একজন সদস্যের মত হয়ে গেলেন। ঐ পরিবারের সবাই নিজ সন্তানের মতই দেখেন মোস্তাফিজকে। মোস্তাফিজের পরিচিত অনেকে শিক্ষিত বলে সবাই ওদের সম্মান করে, ওরা ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। এ নিয়ে মোস্তাফিজের মন কিছুটা উৎবিঙ্গন, তারও মনে মনে স্বাধ জাগে অন্যদের মত ভাল একটি পোষ্টে চাকরী করার। সবচেয়ে বড় শখ লেখাপড়া করার। তার মালিক (কুয়েতির সন্তানদের প্রতিদিন স্কুল কলেজে আনা নেয়ার প্রদান কাজই ছিলো মোস্তাফিজের। একদিন সে তার কুয়েতি কফিল (মালিক) কে স্বপ্নের কথা বলেন। হৃদয়বান কুয়েতি শুনে খুশি হয়েই তাকে লেখাপড়ার সুযোগ দিবে বলে আশ্বস্ত করেন। কুয়েতে আসার দীর্ঘ সাত বছর পর সালটা ২০১৩ ঐ কুয়েতি পড়াশুনা করার সুযোগ এবং কাজের ফাঁকে সময় দুটোই করে দেয়। www.banglarbarta.com
এরই মধ্যে সে তার সার্টিফিকেট গুলো বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশে অবস্থিত কুয়েত দূতাবাস, কুয়েতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট মন্ত্রণালয়, কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস সহ দুদেশের সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও দূতাবাসের সত্যায়িত সম্পন্য করে রাখেন। কুয়েতে আরব ওপেন ইউনিভারসিটির অধিনে ইংলেন্ডের একটি ইউনিভার্সিটির কুয়েত ব্রাঞ্চে ভর্তি করিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দেয় ঐ কুয়েতি। ভর্তি পরিক্ষার মাধ্যমে বিসনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন একাউন্টিং Business Administration in Accounting BA (Hons) ভর্তি হন। জীবনের আরেক যুদ্ধ শুরু হয়। কারন যা বেতন পেত পুরোটাই ইউনিভাসির্তে সেমিষ্টার ফি দিতে হত। বাড়ীতে সঠিক ভাবে টাকা পাঠাতে পারেনি। কষ্ট করে চললেও পরিবার থেকে তেমন চাপ দেয়নি। একদিকে সারাদিন চাকুরীর কঠোর পরিশ্রম শেষে বিকালে ক্লাসে যোগদান। প্রেজেন্টেশন তৈরী, পরিক্ষার প্রস্তুতি সব মিলিয়ে প্রায় মধ্যরাত জেগে থাকা আবার ভোরে কর্মে যোগদান। দৈনিক তিন চার ঘন্টার বেশি অনেকদিন ঘুমাতে পারেনি। তার স্বপ্ন পুরন এর পাশাপাশি মা বাবা মুখ উজ্জল করতে কঠোর পরিশ্রম হলেও যেমনটি হাল ছাড়েননি তেমনি হারও মানেননি। www.banglarbarta.com
শেষ পযর্ন্ত অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে অসাধ্যকে সাধন করেছেন মোস্তাফিজ। চার বছরের কোর্সকে শেষ করতে পেরেছে মাএ সাড়ে তিন বছরেই এবং তাও আবার প্রায় ৮৫% নাম্বর নিয়ে. তার এই প্রাপ্তি এ বছরেই ভার্সিটি থেকে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। এ যেন অনেকের কাছে স্বপ্নের মত। স্থানীয় গনমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচারের হিরিক পরে যায়। কুয়েতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলে তার সাফল্যের ইতিকথার অনেক সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিদেশী মিডিয়ায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সে তার মালিকের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা সহ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সাংসারিক জীবনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন জীবন গড়ার চিন্তায় বিয়ে করার সুযোগ হয়ে উঠেনি আশা করছে নতুন বছরের শুরুতে দেশে গিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসবেন। অবিবাহিত ২৯ বছরের টগবগে এই যুবকের স্বপ্ন পুরনের দিন শুরু হলো। আল্লাহ চাইলে শীঘ্রই কোন ভাল প্রতিষ্ঠানে কার করার সুযোগও পাবেন। মোস্তাফিজ মধ্যপ্রাচ্য দেশ কুয়েতে এক বাসায় চাকুরী করে লেখাপড়া করে অনেকের জন্য আইকন হয়ে থাকবেন। তার এই গল্প যুগ যুগ ধরে অনেক অভিভাবকের কাছে তাদের সন্তানদের শিক্ষায় একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে তেমনি কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীরা গৌরব করে তার এই প্রাপ্তির কথা শোনাবে। আবারও বিদেশের মাটিতে বিশ্ব জয় করার মত এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলো বাংলাদেশেরই একজন সাধারন প্রবাসী শ্রমিক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
Discussion about this post