বাংলানিউজ- বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ ২০টি দেশ আপত্তি জানিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ১০২ ডিগ্রিতে স্লট চেয়েছে। আর এখানেই এসব দেশের আপত্তি। বিটিআরসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের আইটিওতে (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) ১০২ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের জন্য স্লট চেয়ে আবেদন করেছে। এ আবেদনের পর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ আপত্তি জানিয়েছে।সূত্র জানায়, এসব দেশের বক্তব্য ১০২ ডিগ্রিতে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হলে তাদের স্যাটেলাইটে ফ্রিকোয়েন্সি পেতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এজন্য বিকল্প চিন্তাও করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি ১০২ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অনুমোদন না পায়, তাহলে বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হবে ৬৯ ডিগ্রি পূর্বে। তবে কোন জায়গাটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে তা নির্ধারণ করবে আইটিইউ। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ যদি ১০২ ডিগ্রিতে স্লট পায় সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়ার মতো দেশের সমস্যা হবে। অন্যদিকে বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে আবেদন করলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীনের মতো দেশ আপত্তি জানাতে পারে। বিটিআরসি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১০২ ডিগ্রিতে স্লট পেতে চেষ্টা করবে। এজন্য আমাদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) কাজ করবে। এসপিআই বিষয়টি সমন্বয় করবে, যাতে কোনো দেশের জন্যই সমস্যা না হয়।’গত ২৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি। বিটিআরসি ইতিমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন’র (আইটিইউ) কাছে কক্ষপথের ১০২ ডিগ্রি পূর্বে স্লট চেয়েছে। তবে বিটিআরসি’র এই স্লট আবেদনে আপত্তি জানানো দেশগুলোর সঙ্গে এসপিআই আলোচনায় বসে এর সমাধান করবে। উৎক্ষেপণের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) ১০২ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের ব্যাপারে আপত্তি দেওয়া দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে স্লট ঠিক করবে। তারা বাংলাদেশের জন্য কোন অবস্থানটি সুবিধাজনক সেটি বাছাই করবে। এই স্লট দেওয়ার কর্তৃপক্ষ হচ্ছে আইটিইউ। প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে আইটিইউ একটি স্থান নির্বাচিত করবে বলে জানা গেছে। এদিকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে স্লট পাওয়ার পরই বিটিআরসি কোম্পানি গঠন করবে। কারণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসি স্যাটেলাইট পরিচালনা করতে পারে না। বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আইটিওতে ১০২ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখন কোন জায়গাটি আমাদের জন্য ভালো হবে সেটি ঠিক করবে আইটিইউ।’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইটিইউতে ২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিলর হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করছে। এই হিসাবে আইটিইউ’র কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব একটু বেশিই হবে। তাছাড়া পরামর্শক এসপিআই আমেরিকার প্রতিষ্ঠান হিসাবে যে সব দেশ আপত্তি তুলেছে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবে বলে বিটিআরসি আশাবাদী। ওই দেশের স্যাটেলাইটের সঙ্গে কোন ধরনের অসুবিধা হতে পারে, সেটিরও সমাধানের ব্যবস্থা নেবে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গুণতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে দেশে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয়ই হবে না, সেই সঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আয় করা যাবে।
Discussion about this post