মোবারক বিশ্বাস ঃ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. শামসুল হক টুকু বলেছেন, বীমা কোম্পানী গুলোকে বানিজ্যের সাথে সাথে জনস্বার্থে সেবা মূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ার লক্ষে এদেশে বীমা কোম্পানী গুলোকে উৎসাহিত করেন। মন্ত্রী উত্তর সুরীদের জন্য সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সকলকে আহবান জানান। গতকাল শনিবার পাবনার সাঁথিয়ায় উপজেলা পরিষদ হল রুমে সানলাইফ ইনন্সুরেন্স কোম্পানি লিঃ সাঁথিয়া এরিয়া অফিস আয়োজিত মৃত্যুদাবী চেক প্রদান ও উন্নয়ন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।। সাঁথিয়া এরিয়া অফিসের ভিপি ও ইনচাজ এবং সাঁথিয়া উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন, কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুল বারী চৌধুরী, সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নকিব নজিবুল হক নজু, সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এনামুল হক, সাঁথিয়া পৌর মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রাং, সানলাইফের এভিপি ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক হাসান আলী খান, সাঁথিয়া পৌর আ’লীগের সম্পাদক ও এভিপি হেদায়েত আলী খান প্রমুখ। পরে সাঁথিয়ার ডাব বাগান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও গাগড়াখালী গ্রামের মরহুমা জাকিয়া খাতুনের পক্ষে তার স্বামী নজরুল ইসলাম মৃত্যু বীমা দাবীর ৫১হাজার ৬৫০টাকার চেক গ্রহন করেন।
পাবনা শহরে যুবক খুন
মোবারক বিশ্বাস ঃ পাবনা পৌর এলাকা ছাতিয়ানীতে যুবককে কুপিয়ে গুরতর আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত১১ টায়। আশংকাজনক অবস্থায় আহতকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোর রাতে মারা যায়।
পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, পাবনা সদর উপজেলার পৌর আটুয়া হাজি পাড়ার রিয়াজুল ইসলাম শিমুলের ছেলে মেহেদী হাসান সৌরভ(২০)কে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেেেছ সন্ত্রাসীরা। এজাহার সুত্রে জানা যায়, সৌরভ তার স্ত্রীকে নিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টায় পায়ে হেটে পাশ্ববর্তি মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখান স্ত্রীকে রেখে সৌরভ ও তার বন্ধু রনি ২জন মিলে রাত ১১ টায় রিক্স্রাযোগে পাশ্ববর্তি মহল্লা চকছাতিয়ানি কারিকর পাড়ার কনকের দোকানের সামনে পৌছালে পুর্বথেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা সৌরভের উপর চড়াও হয়। সন্ত্রাসীরা সৌরভকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা সৌরভকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোর ৫টায় মারা যায়। স্থানীয়রা আরো জানায়, শুক্রবার সকাল ১১ টায় ছাতিয়ানি কারিকর পাড়ার জনৈক রিয়াদ ও রুবেলের বাড়িতে জুয়া খেলা চলাকালে সৌরভ সেখানে উপস্থিত হয়ে জুয়া খেলা বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল ও রিয়াদ বন্ধুদের নিয়ে ঐদিন রাতে সৌরভকে কুপিয়ে গুরতর আহত করে। সৌরভের পিতা আটুয়া হাজি পাড়ার বাসিন্দা মৃত বদিউজ্জামান এর ছেলে মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্ল্যেখ করে পাবনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। যার নং-৪২, তাং-২১-০৪-১২ইং। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে জেএমবি মিলন নামে এক যুবককে স্থানীয়রা আটক করে গণধোলায় দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেছে। নিহত সৌরভ ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বলে জানা গেছে। হত্যাকারীরা ক্ষমতাসীন সংগঠনের সক্রীয় সদস্য।
পাবনার প্রাচীন ঔষধ কোম্পানী এডরুক লিমিটিডের মালিকানা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ : একাধিক মামলা
মোবারক বিশ্বাস ঃ পাবনার প্রাচীন ঔষধ কোম্পানী এডরুক লিমিটিডের বর্তমান মালিক ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানীর মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে এডরুক লিমিডেটের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ উদ্দিন খান ও তার স্ত্রী সন্তানদের বিরুদ্ধে হাইকোট, ঢাকার চীপ মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ও ঢাকার মতিঝিল থানায় পৃথক ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উলেল্লখযোগ্য পরিমান ওষুধ রপ্তানী করে রাষ্ট্রপতি পদকে ভুষিত হয় পাবনার এডরুক লিমিডেট। তখন এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আব্দুল হামিদ। তার মেয়ে তাজ মহল বেগমকে বিয়ে করেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ উদ্দিন খান। বিয়ের পর তিনি এডরুকে সামান্য বেতনে চাকুরি করতেন। এরপর নানা জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি কোম্পানীর ৭৫ ভাগ শেয়ার হস্তগত করেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন বলে অভিযোগে প্রকাশ। অভিযোগে আরও জানা যায়, ময়েন উদ্দিন শেখ নামে একজন শেয়ার হোল্ডারের স্বাক্ষর জাল করে ১৯০টি শেয়ার তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে তার পুত্র ফাহাদ খানের নামে হস্তান্তর করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে ময়েন উদ্দিন শেখ ২০১০ সালে ঢাকার চীপ মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ৪৬/(২) ধারা ১৯১/১৯৩/১৯৭/১৯৮/৪৬০/৪৬৩/৪৬৫/৪৬৬/৪৭১ দ:বি, জি আর মামলা নং ১২১/২০১০। এ মামলার আসামী ফিরোজ উদ্দিন খান তার ছেলে আল ফাহাদ খান ও স্ত্রী তাজমহল বেগম। একই ভাবে তিনি অপর এক শেয়ার হোল্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াব হোসেনের ১৯৫ টি শেয়ার জালিয়াতির মাধ্যমে অপরপুত্র কামরুল সাইন খানের নামে হস্তান্তর করে নেন। নওয়াব হোসেন মারা যাওয়ার ৩ বছর পর তাকে জীবিত দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করার মাধ্যমে এ কাজ করেন। এ ঘটনায় নওয়াব হোসেনের ছেলে এইচ এম খালেদ হোসেন বাদী হয়ে ঢাকা মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মতিঝিল থানা মামলা নং৭৪/২০১০। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা জেলা দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের অধীনে তদন্ত চলছে বলে জানা যায়। এ ভাবে রুহুল আমিন নামে আরও একজন শেয়ার হোল্ডারের ১৫০ টি শেয়ার ফিরোজ খান তার আরেক ছেলে নওরোজ খানের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তর করে নেন। এ ছাড়াও পাবনার ঐতিহ্যবাহী জমিদার মরহুম আজিম উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্য বহর উদ্দিন চৌধুরীরর স্বাক্ষর জাল করে ১০০ টি শেয়ার ফিরোজ খান তার মেয়ে সামমি আরেফিন খানের নামে করে নেন। একই ভাবে ফিরোজ খানের নিজের নামে হস্তান্তর করে নেন শ্বাশুড়ির শেয়ার গুলো। তারপর তিনি নিজেও কোম্পানীর একজন শেয়ার হোল্ডার হন। এ ভাবে জালিয়াতি করে তিনি এডরুক লিমিডেটের সম্পুর্ন মালিকানার ৭৫ ভাগ শেয়ার নিজ পরিবারের সম্পত্তিতে পরিনত করেন। অভিযোগে আরো প্রকাশ, এই কোম্পানীর দীর্ঘদিন কোন জেনারেল মিটিং হয়না। কোম্পানীর কয়েকজন জীবিত শেয়ার হোল্ডারের স্বাক্ষর জাল করার মাধ্যমে স্ত্রী পুত্র কন্যাদের কোম্পানীর মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত করেন। এদেরকে পরিচালক করে পরিচালনা পরিষদ গঠন করে এখন নিজেই প্রাচীন এই কোম্পানীর কর্ণধার। এই পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে ফিরোজ খানের স্ত্রী তাজ মহল বেগমকে। ফিরোজ খান নির্বাচিত হয়েছেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কোম্পানীর মুল মালিকরা এ খবর জানতে পেরে ফিরোজ উদ্দিন খান ও তার স্ত্রী পুত্র কন্যাদের বিরুদ্ধে এডরুক লিঃ কোম্পানীকে জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাস করার অভিযোগে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোট ডিভিশনে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং ১৩০/২০১০। এক সময়ের রিক্ত হস্ত ফিরোজ খান এডরুক কোম্পানীর পন্য বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের নামে ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্লাট এবং গাজীপুর ও পাবনায় প্রায় ১৮০ বিঘা জমি কিনেছেন। বলে মামলার এজাহারে উলে¬¬খ করা হয়। এদিকে মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে অস্থির অবস্থা চলছে পাবনার প্রাচীন ঔষধ কোম্পানী এডরুক লিমিটেডের শ্রমিকদের মধ্যে। গত ৬ মার্চ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে দিয়ে তারা অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু করে। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, এডরুক লিমিটেডে ৬‘শ পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতিদিনের পারিশ্রমিক হিসেবে মহিলা শ্রমিকদের ৩৩ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকদের ৫০ টাকা করে হাজিরা দেওয়া হয়। দ্রব্যমুল্যের এই উর্ধগতিতে যা দিয়ে এক কেজি চাল কেনা সম্ভব নয়। দুলাল নামক এক শ্রমিক বলেন, গত ১২ বছর ধরে সে এই কোম্পানীতে চাকুরি করছেন। এখন পর্যন্ত তাকে স্থায়ী করা হয়নি। হাসি খাতুন নামে এক মহিলা শ্রমিক অভিযোগ করেন, এই কারখানায় মহিলাদের ৩৩ টাকা মজুরী দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে এখন এক কেজি চাল কেনা যায়না। তা ছাড়া মহিলা শ্রমিকদের দিয়ে অমানুুষিক পরিশ্রম করানো হয়। এই কোম্পানীর শ্রমিকরা সবাই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের পেটানো হয়। এ ব্যাপারে এডরুক লিমিডেটের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ উদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ সব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
উত্তরাঞ্চলের মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
মোবারক বিশ্বাস ঃ বিদ্যুৎ ও ডিজেল সঙ্কট কাটিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বোরো আবাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এ এলাকার দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। অনেক জমিতে ইতোমধ্যে কৃষকের সোনালী স্বপ্নের প্রতীক ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। ধানের অবস্থা পর্যবেক্ষন করে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও কৃষকেরা আশা প্রকাশ করেছেন এবারও এ অঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে। এদিকে সাম্প্রতিক ঝড়ে দুধহীন ধান থেকে ফুল ঝরে যায়। এতে ধানের শীষ শুকিয়ে চিটায় পরিণত হচ্ছে। তবে যেসব ধান ইতোমধ্যে চালভার হয়ে গেছে সেসব ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। ফুল ঝরে যাওযায় পরাগায়নে বিঘিœত হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যে ধানের কেবল শীষ বের হয়েছে সেগুলোরই ক্ষতি হয়েছে। এতে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোন প্রভাব পড়বে না বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে।চৈত্রের শেষ এবং বৈশাখের শুরুতে উত্তরাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র বৃষ্টি হয়েছে। এতে সেচ বাবদ কৃষকদের সাশ্রয় হয়েছে অনেক টাকা। এছাড়া বৃষ্টির পানি সর্বদাই ফসলের জন্য উপকারি।পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উত্তরের ১৬ জেলায় ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৩শ ৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে পাবনা জেলায় ৬৯ হাজার ১শ ৪৭ হেক্টর, সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭ হেক্টর, বগুড়ায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ২শ ৫৮ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৭২ হাজার ৫শ ৫ হেক্টর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫২ হাজার ৩শ ৮১ হেক্টর, নওগাঁয়ে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১শ ৯৬ হেক্টর, রাজশাহীতে ৮০ হাজার ৭ হেক্টর, পঞ্চগড়ে ৪৭ হাজার ৫শ ৩৫ হেক্টর, ঠাকুরগাঁয়ে ৬৫ হাজার ১শ ৮৩ হেক্টর, দিনাজপুরে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫শ ৪৫ হেক্টর, নীলফামাড়ীতে ৮২ হাজার ৮শ ৭৮ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৫৭ হাজার ৯৯ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৩ হাজার ২শ ৭৭ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩শ ২৩ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত এই জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৭২ মেট্রিক টন চাল। হাই ব্রিড জাতের বোরো আবাদ ক্রমশ:ই বাড়ছে। এবার এই বৃদ্ধিও পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশী। উত্তরাঞ্চলে(রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে) চলতি মৌসুমে ডিজেল চালিত ৮শ ২৮ টি গভীর নলকুপ, ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮শ ৭০ টি অগভীর নলকুল, ১১ হাজার ৩শ ৭৭ টি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচ কার্যক্রম চলছে। সেচ কাজে ডিজেল চালিত মোট পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫ টি গভীর ও অগভীর নলকুপ ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া সেচ কাজে বিদ্যুতচালিত সেচপাম্প ব্যবহার হচ্ছে দুই লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের সেচ পাম্প রয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার। বিদ্যুতের সেচের ওপর নির্ভরশীল পাঁচ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমি। বাকিগুলো পাবনা সেচ ও পল্ল¬ী উন্নয়ন প্রকল্প, তিস্তা সেচ প্রকল্প, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ,শ্যালো ইঞ্জিনসহ স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়। এবারও বোরো মওসুমের শুরুতে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। কৃষকরা কষ্টে-সৃষ্টে ডিজেল সংগ্রহ করে সেচ দেয়। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে সেচ কাজ এক রকম বন্ধ থাকে। কৃষকরা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের এ অবস্থা ফসলের জন্য শাপে বর হয়। ধান রোপনের পর চারা বেঁচে গেলে কিছু দিন ক্ষেত শুকিয়ে পূনরায় সেচ দিলে ফসল ভাল হয়। কৃষকরা একে ক্ষেত পীঠ দেয়া বলে। এ পীঠ দেয়ার পর সেচ দিলে কিছু পানি বেশি লাগে বলে গভীর ও অগভীর নলকুপের পানি ব্যবসায়ীরা পীঠ দেয়ার সুযোগ দিতে চায় না।কিন্তু এবার বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারনে সেচ দিতে না পারায় বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের আওতাভূক্ত প্রায় ৫ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমি ওই পীঠ পেয়েছে। পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এ কারনে এখন আর সেচ সমস্যা না থাকায় পীঠ পাওয়া জমি সবুজ ফসলে ভরে উঠেছে। শতকরা ৯০ ভাগ জমির ধান এখন থোড়মুখী। অনেক জমিতে ইতোমধ্যে শীষ বের হতে শুরু করেছে। শীষের আকার-আকৃতি পর্যবেক্ষন করে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাস খানেকের মধ্যে যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং সেচ সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে এ অঞ্চলে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না। ধানের যা অবস্থা তাতে আগামী এক মাসের মধ্যে ( মে’ মাসের মধ্যে) নতুন ধান ওঠা শুরু হবে।
চলনবিল এলাকায় রসুনের বাম্পার ফলন: দাম কম কৃষকরা হতাশ
মোবারক বিশ্বাস ঃ চলনবিলাঞ্চলে চকচকে মুক্তার মতো বাম্পার ফলন হয়েছে রসুনের। কিন্তু তুলনামূলক হারে বাজার দর কম হওয়ায় অনেক কৃষকের মধ্যেই হতাশা বিরাজ করছে। পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুরা, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর এবং সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে রসুন তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষাণ-কৃষাণী, জমি মালিকরা। আর এ কারণে প্রতিটি শ্রমিকের শ্রম মূল্যও বেড়ে গেছে। রসুন তোলা শ্রমিকের মূল্য এখন ২’শ ৫০ থেকে ৩’শ টাকা। তবে ক্ষেত্র বিশেষে মহিলা শ্রমিকের মূল্য অনেক কম বলে জানা গেছে। চাটমোহরের ছাইকোলার কৃষক আব্দুল কাদের জানান, আমি ৬ বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করেছি। বিঘাপ্রতি আমার ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে রসুন তুলে বাজারে বিক্রি করতে গেলে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা। তিনি বলেন গত বছরের তুলনায় রসুনের দাম অনেক কম। বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওই রসুন শুকানো হলে ওজন ২০ থেকে ২২ মণে চলে আসবে। কাছিকাটা এলাকার হারান মন্ডল জানান, আমি ১৬ বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করেছি বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। রসুনের ফলন ভালো হলেও মূল্য কম। আমি গত ১৫ দিনে চাঁচকৈড়সহ বিভিন্ন হাটে রসুন বিক্রি করেছি মণপ্রতি ৭’শ থেকে ১১’শ টাকা দরে। মূল্য বৃদ্ধি না হলে আমার এ আবাদ থেকে লোকশান গুনতে হবে। কাটেঙ্গা এলাকার জাফর আলী জানান, আমি প্রথমবারের মতো ২ বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করেছি। সার, বীজ, শ্রমিক খরচসহ আমার বিঘাপ্রতি ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার টাকা। প্রথম অবস্থায় কিছু রসুন বিক্রি করেছি। তবে মূল্য আশানুরূপ না হওয়ায় বাকি রসুন মজুদ করে রেখেছি। মাসখানেক পর মূল্য বৃদ্ধি হলে বাজার নিয়ে বিক্রি করবো। তারাশের বারুহাস গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বললেন,তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া গ্রামের আব্দুল কাদের বললেন, তিনি ৩ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করে প্রায় ২০ হাজার টাকা লোকসানের কবলে পড়েছেন। গুরুদাসপুরের চাঁচকৈর হাটে কথা হলো কৃষক লিয়াকত মোল্লার সাথে। তিনি বললেন এবার রসুনে লোকসান হয়েছে। একই মন্তব্য করলেন বড়াইগ্রামের বনপাড়ার কৃষক এবাদত আলী। এদিকে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবছর জেলায় ৩’শ হেক্টর বেশী জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক আবাদ হয়েছে চাটমোহর উপজেলায়। গত বছর চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছিল। এ বছর ২ হাজার ১’শ ৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করেছে কৃষকরা। তারা জানান, রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে তবে তুলনামূলক দাম একটু কম। তবে কৃষি অফিস আশা ব্যক্ত করেছেন দাম আরো বাড়লে কৃষকদের লাভের পরিমাণটা বাড়বে। তবে অনেক কৃষক এবছর আশানুরূপ রসুনের দাম না পেলে আগামী মৌসুমে আর এ আবাদে ঝুকবেন না বলে জানিয়েছেন। বর্তমান রসুনের বাজার মুল্য দেখে অনেক কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন।
শ্রীশ্রী নৃসিংহদেব মন্দির কমিটির দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতি বিমল কৃষ্ণ সাহা সাধারণ সম্পাদক প্রভাষ চন্দ্র ভদ্র নির্বাচিত
মোবারক বিশ্বাস ঃ পাবনা শহরের দিলালপুরে অবস্থিত শ্রীশ্রী নৃসিংহদেব বিগ্রহ মন্দিরের কার্যকরি পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০১২-২০১৪ সালের জন্য সভাপতি শ্রী বিমল কৃষ্ণ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাঘচন্দ্র ভদ্রকে নির্বাচিত করে ২৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় বাবু শ্রী বিমল কৃষ্ণ সাহার সভাপতিত্বে ও শ্রী প্রভাষচন্দ্র ভদ্রর পরিচালনায় এ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন, সহ-সভাপতি শ্রী অনুপ কুমার ঘোষ ও শ্রী আনন্দ গোপাল রায়, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার বসাক ও শ্রী দীপঙ্কর সরকার জিতু, দপ্তর সম্পাদক শ্রী সত্যনারায়ন শেঠ, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী উজ্জল কুমার ঘোষ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শ্রী সুজন কুমার রায়, প্রচার সম্পাদক শ্রী কমল বসাক, কোষাধ্যক্ষ শ্রী প্রদীপ কুমার দে, হিসাব পরীক্ষক শ্রী রাজধীশ ভট্রাচার্য নিপু। কার্যনির্বাহী সদস্যরা হলেন, শ্রী জয়ন্ত রায়, শ্রী নিতাই চন্দ্র সরকার, শ্রী হরে কৃষ্ণ ভৌমিক, শ্রী উত্তম জোয়াদ্দার, শ্রী বিশ্বজিৎ ঘোষ, শ্রী তপন সাহা, শ্রী আশীষ কুমার সরকার, শ্রী নিতাই চন্দ্র কর্মকার, শ্রী অলক কুমার বসাক, শ্রী সুব্রত কর্মকার হ্যাপী, শ্রী সুনীল কুমার সরকার, শ্রী রনজিৎ দত্ত, শ্রী গৌতম ঘোষ, শ্রী টিটু সরকার, শ্রী নিমাই চন্দ্র দাস। সভায় বিগত বার্ষিক সাধারণ সভায় কার্যবিবরণী পাঠ করেন বিদায়ী দপ্তর সম্পাদক শ্রী সত্য নারায়ন শেঠ, বার্ষিক আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন পাঠ করেন বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ শ্রী প্রদীপ কুমার দে এবং বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রভাষচন্দ্রভদ্র। সভায় সাধারণ পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন এবং কন্ঠ ভোটে এ কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত করেন।
পাবনায় প্রাণের সখা হাতপাখার ব্যাপক চাহিদা
মোবারক বিশ্বাসঃ “হাতপাখা, প্রাণের সখা গরমকালে দিও দেখা” গ্রাম বাংলার প্রায় সব মানুষের কাছেই এই প্রবাদটি পরিচিত। অতি প্রচীন ও প্রয়োজনীয় কারু শিল্পী হাতপাখা। অতি গরমে বাতাসকে চলমান করতে গরম বাতাস সরিয়ে শীতল বাতাস প্রবাহের জন্য হাতপাখার জুড়ি নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত নানাভাবে পাখার ব্যবহার চলছে। হাতপাখা নানা ভাবে তৈরি হয়। তবে তালপাখার তৈরি হাতপাখার জুড়ি নেই। বৈশাখের তাপদাহ আর ভাদ্রের গরমে তালপাখার তৈরি হাতপাখার ব্যাপক ব্যবহার হয়। এছাড়া মেয়েরা সুতা, বাঁশ, বেত ও কলার খোলের শুকনো বেতি দিয়ে পাখা তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় সব খানেই হাতপাখার তৈরি হয়। পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে মূলত তালপাখার তৈরি হাতপাখাই বেশি তৈরি হয়। চাটমোহরসহ চলনবিল অধ্যুষিত উপজেলা সমূহের রয়েছে প্রচুর তালপাখা। এসকল তালপাখার পাতা থেকে তৈরি হচ্ছে তালপাখা। চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে তালপাখার ব্যাপক চাহিদা। এ অঞ্চলের তালপাখা দেশে বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা হচ্ছে। চাটমোহর উপজেলার ছোটশালিখা, বাহাদুরপুর, মথুরাপুর, শাহাপুর ও মহেষপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার তালপাখার হাতপাখা তৈরির সাথে জড়িত। শুধু গ্রামেই নয় প্রচন্ড তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারনে শহরেও হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। চাটমোহর হাটবাজারে এখন প্রতিটি তালপাখা ২০/২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। পাখা তৈরির কারিগর নিখিল দাস জানান, আগে তালপাখার পাওয়া যেতো টাকা পয়সা ছাড়াই। কিন্তু এখন তালপাখা টাকা দিয়ে কিনতে হয়। গ্রীষ্মের এই গরমে হাতপাখার ব্যাপক কদর বেড়েছে। কারিগররা দিনরাত পাখা তৈরি করে বাজারজাত করছেন।
Discussion about this post