বরিশাল জেলার মুলাদী থানার চরপদ্মাগ্রামে মাস্টার হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে গত মঙ্গলবার রাতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়।রাত ২টা থেকে ৩ টার মধ্যে সংঘটিত এ ডাকাতিতে গয়নাগাটি, টাকাপয়সা, মালামাল লুট করা ছাড়াওডাকাতরা গৃহকর্তা হুমাউন কবির, তার স্ত্রী সাহিনুর নাহারকে এলোপাথারি কুপিয়ে ও রড দিয়েপিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। তাদের চিৎকারে ঘুমন্ত শিশুকন্যা জান্নাত (৯) ও হাবিবা (৩)জেগে উঠে চিৎকার শুরু করলে পাষন্ড ডাকাতরা শিশু কন্যাদের মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক জখমকরে। হুমাউন কবির তার পিতার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় চরপদ্মা আফসারিয়া হাইস্কুলের সহকারীপ্রধান শিক্ষক। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ২টার পরে১০/১২জনের সশস্ত্র ডাকাতদল ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত হুমায়ুন কবিরকে রড় দিয়ে পিটাতে ওএলোপাথারি কোপাতে শুরু করে। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রী সাহিনুর নাহার এগিয়ে গেলেতাকেও কোপানো হয়। ডাকাতদের কোপে হুমায়ুনের মাথায় প্রচন্ড জখম হয়, হাত-পা ভেঙ্গে যায়।ছেলে ও পুত্রবধুকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়ে বৃদ্ধা আছিয়া বেগম (৯০) আহত হন।মারপিটের এ পর্যায়ে হুমায়ুন ও তার স্ত্রীকে মৃত ভেবে ডাকাতরা নগদ টাকাসহ লক্ষাধিক টাকারমালামাল নিয়ে ট্রলার যোগে চলে যায়। ঘটনার শেষে শিশুদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরাএসে আহতদের উদ্ধার করে রাতেই মুলাদি হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরতডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকায় প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জন অজ্ঞাতনামাদেরআসামী করে মুলাদী থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৫।পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এদিকে ডাকাতির ঘটনাটি নিয়ে পুলিশসোর্সে পাওয়া গেছে চ্যাঞ্চল্যকর তথ্য। আহত হুমাউন মাষ্টারের পিতা মরহুম আফসারউদ্দিনমৌলভীর প্রতিষ্ঠিত একটি মাদ্রাসার নাম পরিবর্তনেরঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে মর্মেখবর পাওয়া গেছে। মরহুম আফসারউদ্দিন মৌলভী প্রায় ৫০ বছর আগে একটি হাইস্কুল, একটি মাদ্রাসাও একটি প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা তখন থেকেই তার নামে ছিল। বর্তমান মহাজোটসরকার ক্ষমতায় আসার পরে জাতীয় পার্টির এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপুর সহায়তায় এলাকার কিছুলোকজন মাদ্রাসার নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এবং এমপির তদবীরে তারা কিছুটা সফলও হন।পরবর্তীতে হুমায়ুন মাষ্টার কাগজপত্র সহ নাম পরিবর্তন চেষ্টার বিরুদ্ধে আপত্তি দেন এবংবিষয়টি থেমে যায়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কিছু লোক হুমায়ুনকে সরিয়ে দেবার জন্যডাকাত দল ভাড়া করে। ডাকাতি চলাকালে শিশুদের আর্তচিৎকারে পাড়াপ্রতিবেশীরা জেগে মসজিদেরমাইক থেকে লোকজন নামার ডাক দিলে ডাকাতরা বিপদ আঁচ করে পালিয়ে যায়, আর এতে করেই নিশ্চিতমৃত্যু থেকে বেঁচে যায় হুমায়ুন মাষ্টার। আহতদের স্বজনরা জানায়, মালপত্র লুট করার চেয়ে কাগজপত্র ও দলিল দস্তাবেজের প্রতি ডাকাতদেরঝোঁক ছিল বেশী। ঐ বাড়ি থেকে সকল প্রকারের দলিল দস্তাবেজ, সনদপত্র কাগজপত্র, নিয়ে যায়ডাকাতরা। এতবড় ডাকাতিতে ঘরের দরজা জানালা সব কিছু অক্ষত ছিল। ধারনা করা হয়,ডাকাতদের সহায়তাকারী কেউ ঘরের মধ্যে আগেই লুকিয়ে থাকতে পারে। ডাকাতির পরে আহতদের মৃত্যুনিশ্চিত করার জন্য ঘরের ৮টি দরজা বাইরে এবং ভেতর থেকে বন্ধ করে যায়। এমনভাবে দরজা বন্ধকরা হয়, যেটা অপরিচিত কারো পক্ষে করা অসম্ভব। তা ছাড়া ডাকাতরা যে পথ দিয়ে পালিয়েছেয়,সেটাও আশেপাশের লোকের সহায়তা ছাড়া চেনা অসম্ভব। সব বিষয় মিলিয়ে ডাকাতির ঘটনায় এলাকায়ব্যাপক জল্পনা কল্পনার জন্ম দিয়েছে।
Discussion about this post