তৈয়বুর রহমান টনি নিউ ইয়র্কঃ- নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ৩০ লাখ তাজাপ্রাণ এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে পাওয়া বিজয়ের দিন আজ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৪২ বছর পূর্তি। যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রর আওয়ামী লীগ পালন করলো মহান বিজয় দিবস। আনন্দের এই ক্ষণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ১৫ই ডিসেম্বর, রবিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটস এর পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পরিশেষে কেক কাটা ও নৈশ ভোজ।
আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। এর আগেও আরও বেশ কয়েকবার এই ধরনের পরিস্হিতি সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে।এতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তী নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। এ ধরনের কার্যকলাপে যারা লিপ্ত, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কিনা তা বোধগম্য নয়। এ সময় উভয় পক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্হিতি স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগায় নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুক্ষন পরে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত ও দোয়া পরিচালনা করেন। তরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের আত্নার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।মহান বিজয় দিবসের সভার সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্রর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আকতার হোসেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ।
প্রধান বক্ত্যা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম ফজলুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানিত করে মঞ্চে ডাকা হয়। আজকের সভায় সবাই বিশেষ অতিথি তারা হলেন এবং বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ বসরাত আলী, নাজমুল ইসলাম, আবুল কাসেম, শামসুদ্দিন আজাদ, আব্দুর রহীম বাদশা, মুজাহিদুল ইসলাম, ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, মোঃ আলী সিদ্দিকী, আব্দুল মালেক, তৈয়বুর রহমান টনি, আবুল মনসুর খান, সোলেয়মান আলী, আব্দুল জলিল, মুজিবুল মাওলা, শামছুল আবেদিন, জুহুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আলম বিপল্ব, সোহেল রানা, রফিকুর রহমান, আব্দুস শকুর খান মাখন, মানিক পাষা, সাক্ষায়াত বিশ্বাস, আব্দুল হামিদ, জেড এ জয়, জাহাঙ্গীর মীয়া, লুৎফুর রহমান সুইট, কাজী আজিজুল হক খোকন, সিরাজ উদ্দিন সোহাগ, সবুল দেবনাথ, আব্দুল আজিজ, সাইকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, রশিদ রানা, আব্দুস সোবাহান সোহাগ, মন্জুর আহমেদ ও প্রমূখ।
সভাপতি মোঃ আকতার হোসেন বলেন-“স্বাধীনতার ইতিহাস আমাদের গৌরবের ইতিহাস। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসাবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আনন্দ অনেকভাবেই আসতে পারে জীবনে। কিন্তু মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য প্রাণ উত্সর্গ করা যুদ্ধজয়ের আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। তিনি আরোও বলেন-“ আজ এই বিজয়ের মাসে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অপরাজনীতিতে বাংলার পতাকা ও গণতন্ত্র আজ হুমকীর মুখে। তাই স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্ব রক্ষায় আওয়ামী পরিবারকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে”।
তিনি আরও বলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে বিপুল সংখ্যক ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন এবং বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। দেখতে দেখতে অতিক্রান্ত হলো এ সরকারের সময়। ২০০৮ থেকে শুরু করে সরকারের কর্মকাণ্ডে জনগণ যেমন সন্তুষ্টি অর্জন করেছে।বর্তমান সরকার শিক্ষার ওপর যেমন গুরুত্বারোপ করেছে, তেমনি রাস্তা, অফিস-আদালতসহ কয়েকটি খাতে উন্নয়ন ঘটিয়েছে।এই সরকারের দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি ছিল না, যে কারণে না খেয়ে কোনো মানুষ মারা যায়নি।
কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ায় ও সময়মতো সার, ডিজেল, কীটনাশক পাওয়ায় কৃষকের কৃষিকাজে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটেনি। বেড়েছে উৎপাদন, ফুটেছে তাদের মুখে হাসি। বিগত জোট সরকারের সময় যে ধরনের অরাজকতা ছিল তা বর্তমান সরকারে অনেক হ্রাস পেয়েছে।হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গঠন এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার কাজ করবে_এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে প্রাধান বক্ত্যা এম ফজলুর রহমান বলেন ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভূমিষ্ট হয়। স্বাধীনতার এই মাসে আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি। আমি স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনকে যাঁদের রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা পেয়েছি।
তিনি আরোও বলেন-“একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। বাকি যুদ্ধাপরাধীদেরও রায় কার্যকর হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অনেকে নানা আশঙ্কার কথা বলেছিলেন কিন্তু রায়ও কার্যকর হয়েছে। বাকি যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার হবে এবং রায়ও কার্যকর হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব সম্ভব”।
তিনি আরও বলেন আমাদের সরকারের প্রথম সাফল্য হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, এমনকি কানাঘুষাও নেই। এটা কম বড় সাফল্য নয়। দ্বিতীয়ত, প্রাথমিক স্তরে যথাসময়ে বই দিতে পেরেছে।একটি কার্যকর শিক্ষানীতি চালু হয়েছে।আমরা যুগোপযোগী একটি শিক্ষানীতি পেয়েছি। তা ছাড়া মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্য পুস্তক প্রদান আরেকটি অভূতপূর্ব সাফল্য। শিক্ষার প্রযুক্তির ব্যবহার আশাব্যঞ্জক ভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষা চালু করার ফলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে ।
তিনি আরও বলেন সরকারের সফলতাই বেশি। যেমন সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামিদের বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পেরেছে।বিডিআর বিদ্রোহের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। সরকারের সাফল্যের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে সারের দাম কমেছে এবং কৃষকের হাতে পেঁৗছেছে। বিনা মূল্যে বই বিতরণ সরকারের আরো একটি গণমুখী সফল কাজ।সাফল্য অনেক।
আরও বলেন নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকার এগিয়ে চলছে। তরুণ সম্প্রদায়ের দাবি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করতে পেরেছে। সাকা চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধীকে কাঠগড়ায় হাজির করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশ এখন আইটি সেক্টরে ৩০টি দেশের একটি। শিক্ষা ও কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সফলতা এসেছে। আমাদের সরকারের সাফল্যের পাল্লাটাই অনেক ভারী। সরকারের শিক্ষা বিভাগ অভূতপূর্ব সফল, কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের কৃষিকে নতুন গতি দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়েছে। স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া হচ্ছে ও হয়েছে।
সরকার যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য মজুদের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সাহায্য প্রকল্পগুলো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই চলছে। এসব একেবারে কম অর্জন নয় আমাদের সরকারের।
সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন-“ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের একটি পতাকা। পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ, একটি মানচিত্র। স্বাধীনতা অর্জন করলেও, কুচক্রী আর স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে দেশ স্বাধীনের চার বছরর মাথায় আমরা হারাই আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরকে। এরপর থেকেই স্বাধীনতার পক্ষ শক্তিকে একের পর এক ষড়যন্র করে, দমিয়ে মুছে ফেলতে চাইছে বাংলার মাটি থেকে। যার পরণতি স্বরুপ এখনোও প্রান হারাতে হচ্ছে নিরিহ বাঙ্গালীদের। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা আজ আবার এই বাংলায় হায়েনার মতো থাবা বিস্তার করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন দেশের এই সংকটময় পরস্হিতি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। তা নাহলে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চরমতম হুমকির মধ্যে পড়বে”। তিনি আরোও বলেন-“মহান বিজয়ের মাসে কাদের মোল্লার ফাঁসির খবর মানুষের মনে নতুন জোয়ার এনে দিয়েছে। অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমাদের সকলের গনতন্ত্রের মানষকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে মুক্তিযু্দ্ধের স্বপক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে”।
সহ সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন মহাজোট সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মাধ্যোমে ও যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় কার্যকর করে আজ আমাদের জাতি অনেকটাই কলঙ্কমুক্ত হলো। তবে মহাজোট সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধীর বিচার আর তারই প্রমান পেয়েছেন আপনারা এটাও কম কথা নয়।যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিগত কোনো সরকার হাতে নেয়নি, মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি হাতে নিয়ে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ করবে। মহাজোট সরকার আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুতের সমস্যা সম্পূর্ণভাবে শেষ করবে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এর উপ-প্রচার সম্পাদক কর্তৃক প্রচারিত।
২য় পর্ব শুরু হয় সঙ্গীতা অনুষ্ঠান। বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর শিল্পী রথিন্দ্র নাথ রায় শহীদ হাসান এবং নিউ ইর্য়কের জনপ্রীয় শিল্পী শাহ মাহবুব ও মনিকা রায়।তবলায় ছিলেন তপন মদক। পরিশেষে ৪৩ তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশাল কেক কাটা হয়, সর্ব শেষে নৈশভোজর মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Discussion about this post