বাংলা প্রেস, নিউইংল্যান্ড থেকে: যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি ও দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিবাদে ফেঁপে উঠছে নিউইংল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত ২ সপ্তাহে বোস্টনের হার্ভার্ড স্কোয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক ৫টি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেন তরুণ প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী, নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। নিচে পৃথকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশের বিস্তারিত তুলে ধরা হল:
প্রবাসী তরুণ প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ
একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারের সুনির্দিষ্ট দাবিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি চত্বরে বোস্টনের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীরাদের উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বার্কেলী মিউজিক্যাল কলেজ নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এমআইটি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র-ছাত্রী ওইদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮ তা পর্যন্ত নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি চত্বরে পথ সভা, মোমবাতি প্রজ্জলন, কবিতা পাঠ ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। নতুন প্রজন্মের মেধাবী এ সকল ছাত্র-ছাত্রীদের গনজাগরন সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করার জন্য যোগ দান করেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন নিউইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গনি ও সাহিত্যসেবী বদিউজ্জামান নাসিম। সভায় বক্তরা বলেন,আমাদের প্রবাস প্রজন্ম বাংলাদেশে সাথে সমগ্র বিশ্বে জেগে উঠেছে এ সমাবেশ তারই উজ্জল দৃষ্ঠান্ত। যে ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ কোনো গোপন সমাবেশ নয়। চার দেয়ালে বন্দী কোনো কর্মযজ্ঞ নয়। এখানে কি হচ্ছে তা দেশের মানুষ সবই দেখছে । দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এখানকার কার্যক্রম সম্প্রচার করছে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল। সংবাদ প্রচার করছে দেশের সব জাতীয় সংবাদপত্র। দায়িত্বশীল সব গণমাধ্যম সঠিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করলেও মানবতাবিরোধী অপরাধী, যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের অর্থপুষ্ট কিছু সংবাদমাধ্যম শুরু থেকে জনগণের এই জাগরণ নিয়ে আপত্তিকর, মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্ভট কল্পকাহিনি প্রচার ও প্রকাশ করছে। রাজাকার শয়তানের দোসর মস্তিষ্ক বিকৃত এসব অপসংবাদমাধ্যমকে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা গ্রহণযোগ্যতার শেষ বিন্দুটিও হারিয়ে ফেলেছে। ঘাতক ও গণহত্যাকারীদের দোসররা বাংলাদেশে ও প্রবাসে থেকে তাদের সর্বশেষ মরনকামড়টি বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর তাই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের অপব্যবহার করে “শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন” শিরোনামে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। অতীতেও যখন ধর্মব্যবসায়ীরা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে তখনই মানুষের ধর্মানুভূতি ব্যবহার করে প্রিয় বাংলাদেশকে দোজখে পরিণত করার হিংস্র অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। এ কাজটি ওরা একাত্তরেও করেছে। ধর্মের নামে, ধর্মকে ব্যবহার করে এরা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট জায়েজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জেগে উঠেছে জনতা। হায়েনার কুচক্র, ঘাতকের শয়তানি, দেশবিরোধীদের সকল অপপ্রচার ভেসে যাবে দেশপ্রেমের জোয়ারে।তরুণ এসকল ছাত্র-ছাত্রী অনতি বিলম্বে বাংলাদেশে জামায়েতে ইসলামী ও শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করার দাবী জানায় ও মানবতা বিরোধীদের বিচার কাজ দ্রুত শেষ করে শাস্তি প্রদানের জন্য স্লোগান দিতে থাকে। বাংলাদেশের জাগরন মঞ্চের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এখানেও তাঁরা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষনা করবেন বলে বোস্টনের জাগরন সমাবেশের উদ্যোগতা প্রবাসের তরুণ প্রজন্মের কলেজ ছাত্রী আরমীন মুসা জানিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে হার্ভার্ড স্কোয়ারে নিউইংল্যান্ড আ.লীগ (গনি-মামুন) এর বিক্ষোভ সমাবেশ
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বোস্টনের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড স্কোয়ারে দু’দিনব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসুচির প্রথম দিনে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগ (গনি- মামুন), একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ও আওয়ামী যুবলীগ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে ক্যামব্রীজের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড স্কোয়ারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে এ একাত্মতা ঘোষণা করেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা উক্ত প্রতিবাদ সভায় রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জোর দাবি জানান।
নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দরা বলেন, সকল যুদ্ধাপরাধীদের রাজাকার, আল বদরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। কুখ্যাত রাজাকার কসাই কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড পুর্নবিবেচনা করে অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। একই সাথে গোলাম আযম, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ সকল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানান বক্তারা ।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের ডাক দিয়ে নতুন প্রজন্ম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার জন্য বিশ্বের সকল প্রবাসীরা গর্বিত বলেও উল্লেখ করেন নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ও আওয়ামী যুবলীগ নেতৃবৃন্দরা। বিশ্বের সকল প্রবাসীদের এ আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সব বাংলাদেশির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের আহবান জানান। গত সপ্তাহে নিউইংল্যান্ডে ৩ ফুট স্তর তুষারপাতে উপর দাঁড়িয়ে আর তীব্র শীত উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জড়ো হন সব বয়সী মানুষ। এ বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করতে আসেন ২০০৫ সালে সিলেটে বোমার আঘাতে নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ্ এএসএম কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, কবি ও মানবাধিকার কর্মি ড.সাজেদ কামাল ও তার স্ত্রী ড. রোজী কামাল, কবি ও সাহিত্যসেবী বদিউজ্জামান নাসিম। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আসমা কিবরিয়া,ড.সাজেদ কামাল, ড.রোজী কামাল, নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ওসমান গনি, সা: সম্পাদক জাহিদ ওসমানী মামুন,একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সা: সম্পাদক আবু্ নাঈম চৌধুরী পিন্টু ও আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক সুহাস বড়ুয়া। সমাবেশে বক্তারা বলেন, এতোদিন যেন এমন একটি ডাকের অপেক্ষায়ই ছিল বাংলার মানুষ। ৫২ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায় সেসব আন্দোলনে ছিলেন ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ। আরও ছিলেন বাংলার লেখক সমাজ, শিল্পী সমাজ তথা সাংস্কৃতিক কর্মীগণ। কিন্তু আজ ২০১৩ সালের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন একটি নাম- `ব্লগার্স`। তাদের আহবানে সাড়া দিয়েছে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় তৈরি হয়েছে আন্দোলনের মঞ্চ। সে মঞ্চকে ঘিরে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। ধ্বনিত হচ্ছে `রাজাকারদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই` `একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার`। এ এক অভিনব আন্দোলন! বাংলার মানুষ এ ধরনের আন্দোলন কখনও দেখেনি বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। তাই আর বিলম্ব না করে সকল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানান বক্তারা।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিউইংল্যান্ড একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রধান ড. বামন দাস বসু, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মুজিবুর রহমান, নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগের অন্যতম সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজসেবী রেজ্জাকুল চৌধুরী ফরিদ, তাপস বড়ুয়া, সরয়াত জান,ফরিদুজ্জামান, এমএ ওসমান গনি, সিনিথিয়া, সঙ্গীত শিল্পী আরমীন মুসা ও স্বরুপ বড়ুয়া প্রমুখ। এছাড়াও বেশ কিছু বিদেশি নাগরিক তাৎক্ষনিকভাবে উক্ত সমাবেশে এসে যোগ দিয়ে সংহতি জানান। উল্লেখ্য, নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগ (গনি- মামুন), নিউইংল্যান্ড যুবলীগ, নিউইংল্যান্ড ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ যৌথভাবে আগামী ১৭ মার্চ দুপুর ১টায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সন্মুখে অনুষ্ঠিতব্য বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে হার্ভার্ড স্কোয়ারে নিউইংল্যান্ড আ.লীগ (ইউসুফ-ইকবাল) এর বিক্ষোভ সমাবেশ
নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে হার্ভার্ড স্কোয়ারে এক বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করে। নেতৃবৃন্দরা বিশ্বের সকল বাংলাদেশিদের চলমান আন্দোলন এবং শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। নিউইংল্যান্ড ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, যুক্তরাষ্ট্রস্থ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কমান্ড, নিউইংল্যান্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও আওয়ামী যুবলীগসহ বোস্টনে বসবাসরত বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশিরা এ বিক্ষোভ কর্মসুচিতে অংশ গ্রহন করেন।
নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগের আহবানে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেলে ক্যামব্রীজের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড স্কোয়ারে আয়োজিত উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে কসাই কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড বাতিল করে অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য দাবি জানান হয়। নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দরা যত দ্রুত সম্ভব সকল যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচারের কাঠগড়ায় এনে অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানান। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে আন্দোলনের ডাক দিয়ে নতুন প্রজন্ম এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর জন্য বিশ্বের সকল প্রবাসীদের ন্যায় তারাও গর্বিত বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগী হয়ে বাংলাদেশে গণহত্যায় মেতে উঠেছিল, দীর্ঘ ৪১ বছর পর তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। ঠিক তখন এসব গণহত্যাকারীদের ইসলামী আন্দোলনের নেতা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিচারের হাত থেকে রেহাই পেতে অপরাধীদের সহযোগীরা আজ পবিত্র ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন বক্তারা অভিযোগ করেন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘‘ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাওয়ার অপচেষ্টাকারীদের সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, এতোদিন যেন এমন একটি ডাকের অপেক্ষায়ই ছিল বাংলার মানুষ। ৫২ যুক্তথেকে ৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায় সেসব আন্দোলনে ছিলেন ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ। কিংবা লেখক, শিল্পী, তথা সাংস্কৃতিক কর্মীগণ। কিন্তু আজ ২০১৩ সালের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন একটি নাম- `ব্লগার্স`। তাদের আহবানে সর্বস্তরের মানুষের মুখে ধ্বনিত হচ্ছে `রাজাকারদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই`, `একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার`। এ এক অভিনব আন্দোলন! বাংলার মানুষ এ ধরনের আন্দোলন কখনও দেখেনি বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। তাই আর বিলম্ব না করে সকল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানান বক্তারা। বক্তব্য সমাবেশে রাখেন নিউইংল্যান্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউসুফ চৌধুরী,সাধারন সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ,যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের উপদেষ্টা ড.সৈয়দ আবু হাসনাত, মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান,মুক্তিযোদ্ধা রাতুল বড়ুয়া,শহীদ সন্তান ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির উপদেষ্টা নাহিদ সিতারা, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আহমেদ হাসান, যুক্তরাষ্ট্রস্থ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কমান্ডের সভাপতি কৌশলী ইমা, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কমান্ডের সাধারন সম্পাদক উজ্জল বড়ুয়া, নিউইংল্যান্ড যুবলীগের আহবায়ক মিন্টো কামরুজ্জামান, যুগ্ম আহবায়ক রকিবুল চৌধুরী রনি ও নতুন প্রজন্মের জেসিফা
চৌধুরী।
উল্লেখ্য,বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি এই বিক্ষোভ সমাবেশে এসে হাজির হলেও প্রচন্ড ঠান্ডায় হার্ভার্ড স্কোয়ারের উপরের অংশে দাঁড়িয়ে থাকার কারও সাধ্য ছিল না। আয়োজকবৃন্দসহ উপস্থিত সকলেই সাবওয়ের হলওয়েতে ঢুকে পরে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সাবওয়ের হলওয়ে। পরে নিরাপত্তাকর্মি এসে বাধা প্রদান দিলে তারা উপরের অংশে উঠে আসে। সেখানে খুব অল্প সময়ে স্লোগান আর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন। কারন সমাবেশে আগত সকলেই তখন থর থর করে কাঁপছিল।
হার্ভার্ড স্কোয়ারে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ
ধর্মীয় সংগঠনের আড়ালে রাজনীতি করায় নিউইংল্যান্ড আ. লীগ (ইউসুফ-ইকবাল) এর নিন্দা
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবির আর যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তাকারী বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা সারাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রার্থনার স্থানসহ বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে বোস্টনে তথাকথিত ইসলামী সংগঠনের নামে এই হামলা ও হত্যাকান্ডের নিন্দা না করে সরকারের সমালোচনা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিউইংল্যান্ড আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মি হত্যা করে এমনকি রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অসংখ্য পুলিশ হত্যা করে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধবংস করে যারা দেশের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত তাদের নিন্দা না করে বরং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টায় সচেষ্ট সরকারের সমালোচনা করে এই সংগঠন নিজেদেরও যুদ্ধ এবং রাজনীতিতে সামিল করেছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে মনগড়া এবং মিথ্যা বানোয়াট কথিত মন্তব্য বানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষের আন্দোলনকে নস্যাত করার অপচেষ্টা আর ধর্মীয় যুদ্ধের রুপ দিয়ে জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনার অবমাননাকারীদের পক্ষালম্বন করা কোন ক্রমেই দেশপ্রেমের পরিচয় হতে পারে না বলে তারা উল্লেখ করেন। তথাকথিত ইসলামী সংগঠনের নামে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা এবং বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের এই অপচেষ্টা থেকে এবং ধর্মীয় সংগঠনের আড়ালে রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানান।
বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধে নিউইংল্যান্ড প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইবে
বাংলাদেশের চলমান গণহত্যা অচিরেই বন্ধ না করলে আমরা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা গণহত্যা বন্ধে আমেরিকান সরকারের সাহায্য চাইব। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইংল্যান্ডের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড স্কোয়ারে বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। সরকারের মদদপুষ্ট র্যাব,পুলিশ,ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তান্ডবলীলা, তাদের সকল কর্মকান্ড আমেরিকার পত্র-পত্রিকার ব্লগে লেখালেখিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও চিঠি লিখবেন বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
গত ৩ মার্চ রোববার বোস্টন সংলগ্ন ক্যামব্রীজের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বোস্টন ও পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি শহরের প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি উপস্থিত হন। বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ উক্ত প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশে ছুটে আসেন। বক্তারা বলেন, দেশে আজ স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দেশে বিদেশিদের আগ্রাসনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, গণহত্যা চলছে। এ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আছে র্যাব-পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। এই গণহত্যা বর্তমান সরকারের দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়েছে। শাহবাগের আন্দোলনকে ‘নাটকের মঞ্চ’, আওয়ামী লীগের ‘এক্সটেন্ডেন্ট (প্রসারিত) কর্মসূচি’ এবং ‘বিদেশি আগ্রাসনের মঞ্চ’ উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, ‘‘দামী বিরিয়ানির প্যাকেট,মিনারেল ওয়াটার এবং পুলিশের নিরাপত্তার মধ্যে যে আন্দোলন চলছে, তা দেখে লজ্জা হয়। নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, গাড়ি, বাড়িতে অগ্নি সংযোগ, ধর্মীয় উপাসানালয়ে আক্রমণ চলতে থাকলে মানুষের জীবনযাত্রা চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত বিপন্ন হবে। অবশ্যই এমন দিন দূরে নয় যেদিন সংকট উত্তোরণ না করতে পারলে আমাদের প্রিয় বাংলদেশের অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন উঠবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে নানা প্রহসন ও বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, বিচারের নামে এসব প্রহসন সাধারন মানুষের কাছে এখন সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওই সব বিচারকের কর্মকান্ডে আমরা সত্যিই লজ্জিত। শাহবাগের তথাকথিত সেই দেশপ্রেমিক তরুণরা সরকারের অন্যায় অপকর্ম, আর গণহত্যারকোন প্রতিবাদই করছেন না, এতেই প্রতিয়মান হয় যে ওই শাহবাগ চত্বর কারা চালাচ্ছেন। বক্তারা অবিলম্বে দেশের সকল প্রকার হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান। একই সাথে তারা সাধারন মানুষের জান মালের নিরাপত্তাসহ সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা প্রদানের আহবান জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বজলুল ওহাব শাহীন, ড. মোয়াজ্জেম কাজী, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলীম, ইঞ্জিনিয়ার আইয়ুব রহমান, ড. হাকীম, মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ সাহেদ, মুক্তিযোদ্ধা মীর ফজলুল করিম, ইঞ্জিনিয়ার রফিক, ইঞ্জিনিয়ার ঝিরুল ভুইয়া, নিউইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি কাজী নুরুজ্জামান, সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুল,সাধারন সম্পাদক সোহরাব খান, বাংলাদেশি ডেমোক্রাট নাজদা আলম, উলবাত আরা, মাহমুদুর রহমান, রেজাউল করিম, মাহবুবুর রহমান অপু ও মমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
নিউইংল্যান্ড আ. লীগ (ইউসুফ-ইকবাল) এর পুন: বিক্ষোভ সমাবেশ
নিউইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ৪ মার্চ সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে জামাত-শিবির ও বিএনপির হরতালের নামে নারকীয় তান্ডব ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে এক সমাবেশ আয়োজিত হয়। প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সন্তান আর স্বাধীনতার সপক্ষের বাংলাদেশীরা সমাবেশে যোগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান গণ-আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানান।
সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবির আর যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তাকারী বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের সারাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রার্থনার স্থানসহ বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে, রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অসংখ্য পুলিশ হত্যা করে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধবংস করে যারা দেশের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে আহবান জানানো হয়। পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে মনগড়া এবং মিথ্যা বানোয়াট কথিত মন্তব্য বানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষের আন্দোলনকে নস্যাত করার অপচেষ্টা বাংলাদেশের মাটিতে সফল হবে না বলে নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হুশিয়ার করে দেন। মহাণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলার মানুষ জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনার অবমাননাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে বলে তাঁরা জানান। আর জামাত-শিবিরের দেশ বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও হত্যাযজ্ঞে সমর্থন ও উস্কানী দেওয়ার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকেও বাংলার জনগণ ব্যালটে সমুচিত জবাব দেবে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডঃ সৈয়দ আবু হাসনাত, নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ, সহ-সভাপতি রাতুল বড়ুয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আসিফ বাবু, ডঃ আবু ইউসুফ, মোঃ আজম, তাসাদ্দুক হোসেন, সালাউদ্দিন সৈকত, অনুপম দেব, জিয়াউল হাসান, বস্টন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আহমেদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক উজ্জল বড়ুয়া, প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ নজরুল, নিউ ইংল্যান্ড যুবলীগের সভাপতি মিন্টো কামরুজ্জামান, রকিবুল চৌধুরী রনি, ফরিদা শিমু, মঞ্জুরী ইউসুফ প্রমুখ। সমাবেশে উপস্থিত থেকে শাহবাগের মঞ্চে পঠিত স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান কবি বদিউজ্জামান নাসিম। সুত্র ও ছবি: বাংলা প্রেস।
Discussion about this post