মাসিক বেতন ৫শ টাকা! সে হিসাবে দৈনিক গড় বেতনের পরিমাণ ১৬ টাকা ৬৭ পয়সা! তাও আবার অনিয়মিত। কারো আবার বেতনই জোটে না। এভাবেই বছরের পর বছর শিক্ষকতা করছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা।এমনকি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের মাসে কোনো বেতনই নেই!রাগে-দুঃখে কেউ কেউ এ পেশা ছেড়েছেন। কেউবা আশায় আছেন, সামনে বেতন বাড়বে। সরকার হয়তো তাদের দাবি মেনে নেবে। প্রতিটি সরকারই শিক্ষদের বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখেন না ইবতেদায়ী শিক্ষকরা।নওগাঁর হোসেনপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘টানা পনের বছর ধরে মাসিক ৫শ’ টাকা বেতনে চাকরি করছি। জীবন আর চলে না…।’কুমিল্লার দ্বেবিদ্বার ইবতেদায়ী মাদ্রাসার আবু সাইয়িদও টানা দশ বছর ধরে পাঁচশ’ টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছেন। ‘এ টাকা দিয়ে কীভাবে সংসার চলছে?’ এ প্রশ্ন করতেই বললেন – ‘শিক্ষকতা করার পাশাপাশি একটি সমবায় সমিতিতে টাকা কালেকশনের কাজ করছি। যদিও এটা সুদভিত্তিক জেনেও কাজ করছি…’তিনি বলেন, ‘যে টাকায় সংসার চলে না, সে টাকায় ঈমান ঠিক রাখাও কষ্ট হয়ে যায়’।স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যফ্রন্ট’ এর ব্যানারে রোববার থেকে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষক জানালেন সরকার এবার তাদের দাবি না মেনে নিলে এ পেশা ছেড়ে দেবেন।সংগঠনের সদস্য সচিব মো. শামছুল আলম বলেন, ‘অবস্থান ধর্মঘটে যেহেতু আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি এবং সরকারের পক্ষ থেকেও কেউ আসেননি, তাই মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে প্রেস ক্লাবে ইবতেদায়ী শিক্ষকরা অনশন কর্মসুচি পালন করবে।’এরপরও তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলনেরও হুশিয়ারি দেন তিনি।ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সরকারের সময় শিক্ষাখাতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার পরও আমাদের দিকে কেউ মানবিক দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখেনি। ’জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্র অনুযায়ী দেশের সব রেজিস্টার্ড স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা নীতিমালা পূরণ সাপেক্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুরূপ বেতন-ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তা আজও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষকদের বেতন ১৯৯৪ সাল থেকে একই অবস্থায় রাখা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের পরিপত্র অনুযায়ী অধিকাংশ মাদ্রাসাকে বেতনের আওতায় আনা হয়নি।আন্দোলনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, এ বিষয়ে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে বেশ কিছু সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। তারা জানান, দেশের ১৮ হাজার ইবতেদায়ী মাদ্রাসার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫১৯টি সরকারি অনুদানভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ কোটি ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবছরে নির্ধারিত বরাদ্দের স্থলে সংশোধিত বাজেটে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।বিগত সময়ে যা বরাদ্দ ছিল তা থেকে ২ কোটি ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা হ্রাস করা হয়েছে।সংগঠনের সদস্য সচিব বলেন, বর্তমান সরকার অনেক খাতে উন্নয়ন করলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে কেন অবহেলিত রাখা হয়েছে, তা জানার জন্য কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা হয়েছে।সংগঠনের নেতারা জানান, প্র্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা অনেকবার সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ছয় হাজার ৮৪৮টি। এর মধ্যে অনুদানপ্রাপ্ত এক হাজার ৫১৯টি এবং অনুদানবিহীন পাঁচ হাজার ৩২৯টি।ইবতেদায়ী শিক্ষক ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, স্বল্প বেতন এবং বেতন না থাকার কারণে বর্তমানে ৩৪ হাজার শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
Discussion about this post