বাকৃবি ও আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রদলের ইফতার মাহফিলে ওয়াহাব আকন্দ মোশাররফ হোসেন শুভ, ময়মনসিংহ থেকে : ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও ৯০’র দশকের মাঠ কাঁপানো ছাত্র নেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বলেছেন, সরকার অন্তবর্তীকালীন সরকারের কথা বলে বিএনপিকে একত্রিত করতে চাইছে। অন্যদিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে নিঃস্ব করতে চাইছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করে গণআন্দোলনকে থামিয়ে রাখতে চায় সরকার। সেজন্য সরকার এ ধরণের ছলচাতুরি করছে। দুর্নীতিবাজ এ সরকারকে ক্ষমতার মসনদ ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে আগামী নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
শুক্রবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে পৃথক ইফতার মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাকৃবি’র রেলওয়ে প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন স্থানে বাকৃবির এবং শহরের অনুভব কমিউনিটি সেন্টারে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাকৃবি ছাত্রদলের সভাপতি ইয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনির পরিচালনায় ইফতার মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনি। এ সময় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা এনামুল হক আকন্দ লিটন, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম চয়ন, গোলাম মোশাওয়ার সোহাগ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজাউ্েদ্দৗলা সুজা, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি তানভীরুল ইসলাম টুটুল, সুজন, বাকৃবি ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক চমক, সাবেক ছাত্রদল নেতা হেলাল আহমেদ, সারোয়ার, ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি ও জেলা বিএনপি’র অন্যতম সদস্য রুহুল আমিন তপন।
অপরদিকে, আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রদলের ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদল নেতা জাহিদ হোসেন উৎপল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা এনামুল হক আকন্দ লিটন, জগলুল হায়দার, জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি তানভীরুল ইসলাম টুটুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা গোলাম মোশাওয়ার সোহাগ। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজাউ্েদ্দৗলা সুজা। বক্তব্য রাখেন জিএস মাহাবুব, ফরহাদ হোসেন, এজিএস রানা, রবিন প্রমুখ।
বাংলা ভুলে গেছেন মোসলেম, কথা বলেন উর্দুতে !
মোশাররফ হোসেন শুভ, ময়মনসিংহ থেকে : ২৩ বছর আগে মোসলেম উদ্দিন সরকারের লাপাত্তা হয়ে যাওয়া নিয়ে বিষ্ণরামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে এখনো তাকে নিয়ে অদম্য কৌতূহল চলছে। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া ২৩ টি বছরে নিজের ও পরিবার-পরিজনের উপর যে বিপর্যয় গেছে তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মোসলেম। বারবার আবেগ-আপ¬ুত হয়ে পড়ছেন। এ দীর্ঘ দিনের বিরতিতে মায়ের ভাষা বাংলা অনেকটাই ভুলে গেছেন। তবে কথা বলতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে উর্দুতে।
মঙ্গলবার রেডক্রসের সহায়তায় দীর্ঘ ২৩ বছর পর পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে আসেন মোসলেম। পরে রেডক্রস কর্মীরা তাকে ফুলবাড়ীয়ার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বিষ্ণরামপুর গ্রামে তার মায়ের কাছে পৌছে দিয়ে যান।
মোসলেমের পারিবারিক সূত্র জানায়, মোসলেম এখন অসুস্থ। তাকে বাড়িতে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। মমতাময়ী মা জয়নব বিবি (৮০) নিজেই তার সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন। দিনভর বাড়ির উঠোনে শুয়ে-বসে সময় কাটালেও বিকেল হতেই দু’ভাতিজা শামীম ও আবুল খায়েরকে নিয়ে এলাকায় বেড়াতে বের করেন। কেউ কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি উর্দুতেই উত্তর দেন।
মোসলেম উদ্দিনের ভাতিজা আবুল খায়ের বলেন, ‘চাচা একটানা ১৫ বছর পাকিস্তানের কারাগারের বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। সেখানে পাকি বন্দিদের সংস্পর্শে থেকে উর্দু ভাষায় কথা বলায় অভ্যস্ত হয়েছেন। যে কারণে তার মনের অজান্তেই উর্দু ভাষা চলে আসে। মাঝে মধ্যে বাংলাও বলেন।’
বিষ্ণরামপুর গ্রামে শুক্রবার দুপুরে কথা হয় মোসলেম উদ্দিন সরকারের সাথে। ‘আপনি বাংলা বলতেপ পারেন না, উর্দুতে কথা বলেন কেন?’ এ প্রশ্ন করতেই বলতে শুরু করলেন মোসলেম। ‘আমাকে যখন কারা প্রকোষ্টে রাখা হয় তখন আমি উর্দু জানতাম না। আমার সাথে যেসব বন্দি ছিল তারা সবাই ছিল পাকিস্তানী। তারা বাংলা বুঝতো না। আমি কত চিৎকার করে বাংলা বলে মাকে ডেকেছি, বলেছি আমাকে এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাও, ওরা এগিয়ে আসেনি। এরপর আস্তে আস্তে আমি উর্দুতে কথা বলা শিখি। বাংলা বলার অভ্যাস না থাকায় মুখ দিয়ে উর্দুই আসে। ১৫ টা বছর এ ভাষাতেই আমি কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে পাসপোর্ট না থাকায় পাকিস্তান সরকার আমাকে ৬ মাস জেল দিয়েছিল। কিন্তু ওরা আমাকে ১৫ বছর জেল খাটিয়েছে। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমি অনেকবার ওদের কাকুতি-মিনতি করলেও ওরা আমার বাড়িতে খবর দেয়নি। ওরা মানুষ না, পশু।’
‘পাকিস্তানে ধরা পড়ার আগে নয়া দিল¬ীতে থাকার সময় বিয়ে করেছেন কী না, এ প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি দিল¬¬ীতে মাত্র ৩ মাস সময় ছিলাম। এ সময়ে আমি বিয়ে করি নাই। তবে অনেক সাংবাদিক এ ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়েছে। আমি আমার পরিবারের লোকজনের কাছেও এ বিষয়ে বলেছি যে আমি বিয়ে করি নাই। ঢাকা ইয়ারপোর্টে আমার কথা না বুঝেই সাংবাদিকরা আমাকে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের জেলে যাবার আগে মোট ৮ বছর ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরে ফিরে তার সময় কেটেছে বলে জানান তিনি।
আলোচিত এ ব্যক্তি আরো বলেন, ‘পাকিস্তান ছিল আমার স্বপ্নের রাষ্ট্র। অনেক আগে থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানে যাবার। সেখানে আমি গিয়েছিলাম কাজের উদ্দেশ্যে। কাজ করে বেশি বেশি টাকা কামাতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি পাকিস্তানী রুপির মান বাংলাদেশী টাকার চেয়ে কম। বেশি লোভ করে যাওয়াটাই আমার জীবনে এ বিপর্যয় ডেকে আনে।’
মোসলেম উদ্দিন আরো বলেন, ‘ পাকিস্তানীরা ভেবেছিল আমি বাংলাদেশী গুপ্তচর। আমি অনেক বলেছি যে আমি গুপ্তচর না, দরিদ্র মানুষ। কাজের জন্য পাকিস্তানে এসেছি। কিন্তু ওরা আমার কোন কথাই বিশ্বাস করে নাই। ওরা জেলে ভরে আমার জীবনটাই শেষ করে দিয়েছে।’
মোসলেম উদ্দিনের ভাতিজা আব্দুল¬াহ আল শামীম বলেন, ‘মোসলেম চাচা বিয়ে করে নাই। দাদি, আব্বা-আম্মা সবাই এ ব্যাপারে তাকে অনেকবার জিজ্ঞাস করেছে। চাচা না করেছেন। এরপরেও সাংবাদিকরা ইচ্ছামতো এ বিষয়ে লিখে দিয়েছে।’
আব্দুল মতিনের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
মোশাররফ হোসেন শুভ, ময়মনসিংহ থেকে : ফুলপুর উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার থানা রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে স্মরণ সভা, কাঙ্গালিভোজ ও ইফতার মাহ্ফিলের মধ্য দিয়ে ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ময়মনসিংহ (উ.) জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আব্দুল মতিনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কৃষকদলের সভাপতি সাবেক এমপি আবুল বাসার আকন্দ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুল আলম, ফুলপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, বিএনপি নেতা সানোয়ার হোসেন প্রমুখ। স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ মরহুমের সংগ্রামী জীবনের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন। অপরদিকে পারিবারিক উদ্যোগে মরহুমের বাড়ি সংলগ্ন ইমাদপুর জামে মসজিদে কুরআনখানি, মিলাদ, দোয়া ও ইফতার মাহ্ফিলের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, মরহুম আব্দুল মতিন ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১০ সনের ৩ আগস্ট নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
Discussion about this post