শনিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে হিন্দু বিবাহ আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগে �পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন: হিন্দু নাগরিকের অধিকার� শীর্ষক সেমিনারে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিষয় আইন বাধ্যতামূলক হচ্ছে, তবে বিবাহ বিচ্ছেদ ও উত্তারাধিকার আইন করার ক্ষেত্রে আরো পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো আইন সরকার করবে না।
ব্যারিস্টার শফিক বলেন, ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়াও এ বিষয়ে প্রতিটি জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। অর্পিত আইন বিষয়ে সমস্যা হলে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন�র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আলম। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন,বাংলাদেশ আইন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম শাহ আলম, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আশীষ রঞ্জন দাস, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত প্রমুখ। তিনি হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার বিষয়ে আইন প্রণয়নে প্রয়োজনে পৃথক কমিশন গঠন করার কথা বলেন। এ কমিশন হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করতে পারে। তিনি বলেন, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনটি প্রণয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়েছি। এতে বিভিন্ন মত পাওয়া গিয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, মুসলিম আইনে মৌখিক দানকে স্বীকার সংক্রান্ত �ডিকলারেশন অব গিফট� এ যে বিধান কার্যকর করা হয়েছে আপনারা যদি তা স্বীকার করে নেন তাহলে আগামী সংসদেই বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সেমিনারে বলা হয়, হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু নারীরা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করেও সংসার চালাতে বাধ্য হয়। এমনকি স্বামী ভরণপোষণ না দিলে, বহুবিবাহ বা অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে, বিয়ের পর থেকে বছরের পর বছর খোঁজ-খবর না রাখলেও স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারে না। শুধু আলাদা বসবাস করতে পারেন। তবে আলাদাভাবে বসবাস করার সময় দেখা যায়, স্বামী তার স্ত্রী ও সন্তানকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হলে স্বামী চাইলেও বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব হয় না। বিবাহ বিচ্ছেদের বিধান না থাকার কারণে নারী -পুরুষ দু�জনেরই জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সেমিনারে আরো বলা হয়, নারীর মানবাধিকার সুরক্ষা ও নিশ্চিত করার প্রয়াসে বাংলাদেশে কর্মরত ১০টি বেসরকারি নারী ও মানবাধিকার সংগঠন ও সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগে �হিন্দু বিবাহ খসড়া আইন-২০১১� প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় মাঠ পর্যায়ে আরো ৪০টি সংগঠন যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য বিশেষত হিন্দু নারীদের অধিকার ও বৈবাহিক পরবর্তী অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে সম্মিলিতভাবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই আইনটি প্রণয়ন করা হলে বাংলাদেশের হিন্দু নারী-পুরুষ উভয়ের অধিকার সমুন্নত থাকবে বলে সেমিনারে বক্তারা অভিযোগ করেন। এ সংক্রান্তআইন তৈরিতে ভারতে বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করতে বলেন বক্তারা। সেমিনারে অধিকাংশ বক্তারা হিন্দু নারী সমাজের অধিকার রক্ষায় মুসলমানদের নারীদের মতো হিন্দু নারীদের সম্পদের মালিকানা করতে আইন প্রণয়নের দাবি জানান। পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন প্রণয়নের জন্য গণস্বাস্থ্য এবং তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানোর জন্য আইনমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
Discussion about this post