মোঃ হাবিবুর রহমান খান, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর বেলঘর ইউনিয়নের উন্দানিয়া গ্রামে পাষন্ড স্বামী ও শুশ্বর বাড়ির লোকজনের হাতে গৃহবধূ সুমি হত্যার ৩ মাস অতিবাহিত হতে চললেও মামলার আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত এই মামলার একজন আসামীকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে ঔই গৃহবধূর বাবা মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে ধারে ধারে ঘুরেও কোন সাড়া পাচ্ছে না। ঘাতক স্বামীসহ মামলার অপর আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছেনা। পুলিশ বলছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মামলা এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর বেলঘর ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের প্রবাস ফেরত আবুল খায়ের মজুমদারের একমাত্র মেয়ে খাদিজা আক্তার সুমির সাথে একই ইউনিয়নের উন্দানিয়া গ্রামের মৃত. ইউনুছ মিয়ার ছেলে নুর হোসেনের সাথে ৫ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেওয়া হয়। একমাত্র আদরের মেয়ের সুখের আশায় সুমির পিতা আবুল খায়ের মজুমদার নূর হোসেনকে প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যায়ে দুবাই পাঠায়। তাদের ঘরে আড়াই বছরের খালেদ মোহাম্মদ নামের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। ৫ মাস বিদেশ থাকার পর নুর হোসেন দেশে ফিরে এসে তার স্ত্রী সুমিকে যৌতুক হিসেবে তার বাবার বাড়ি থেকে আরো ১ লাখ টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করতো এবং পাশবিক নির্যাতন চালাতো বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর জের ধরে গত ২১ ফেব্র“য়ারী সন্ধ্যায় পাষন্ড স্বামী নুর হোসেনসহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন মিলে খাদিজা আক্তার সুমিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে বলে প্রচার করতে থাকে। পরে খবর পেয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ২৩ ফেব্র“য়ারী সকল স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র গুলোতে এই বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সুমির পিতা আবুল খায়ের মজুমদার ঘাতক স্বামী নূর হোসেনকে প্রধান আসামী করে, তার ভাই মীর হোসেন, মা আমিরের নেছা ও চাচা রফিকুল ইসলামসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত থানা পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার ও চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেনি। অভিযোগ রয়েছে, আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও প্রভাবশালী মহলের কারণে পুলিশ আসামীদের কাউকে গ্রেফতার করছেনা। উল্টো পুলিশ ও এলাকার প্রভাবশালীরা আসামীদের বাচাঁতে মামলা উঠানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে সুমির বাবাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভূশ্চি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামরুল ইসলাম ফোনে বলেন, মামলা তদন্ত চলছে। আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য আশে-পাশের উপজেলাগুলোতেও অভিযান চালানো হয়েছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দিন ফোনে বলেন, মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা ও আসামীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিহত সুমি আমার আতœীয়। তথাপিও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে উভয় পক্ষকে সমঝোতার চেষ্টা করছি। কিন্তু মেয়ের বাবাকে আপোষে আনা যাচ্ছেনা। মামলাটির বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কুমিল্লা জেলা সভাপতি এড. নামজুল আলম চৌধুরী নোমান,ফোনে বলেন, নারী-শিশু মামলার নিয়মই হচ্ছে দ্রুত তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা। এই মামলায়ও যদি গড়িমশি হয় নারী-শিশু মামলার সাথে সাধারণ মামলার পার্থক্য থাকবেনা। এতে করে সমাজে নারী নির্যাতন আরো বেড়ে যাবে। সুমির বাবা আবুল খায়ের মজুমদার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ১ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে সুমি ছিল অতি আদরের। তাদেরকে আমি বিদেশে বড় করেছি। পাষন্ডরা আমার একমাত্র মেয়েকে মেরে ফেললো এবং আমার ছেলেটিও মরণব্যাধি ব্লাডক্যান্সারে আক্রান্ত। আমি নিজেও বাইপাস সার্জারীর রোগী। মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।
Discussion about this post