নুরুল ইসলাম হাসিব- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবিআর) চেয়ারম্যান বলেছেন, রাজনীতিক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সমন্বিত চাপের কারণে বিড়ির ওপর কর বাড়ানো যায় না। তামাক অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ে সিঙ্গাপুরে চলমান বিশ্ব সম্মেলনে শুক্রবার বাংলাদেশে তামাকের ওপর কর বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরার সময় এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন। তিনি বলেন, “অনেক সংসদ সদস্য তামাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিড়ির দাম না বাড়ানোর জন্য গত অর্থবছরে ১২০ জনের বেশি সংসদ সদস্য এনবিআরে চিঠি লিখেছেন। উল্টো তারা বিড়ির ওপর কর পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানান।”
বিড়ির ওপর আরো কর আরোপের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে তামাকবিরোধী আন্দোলনকর্মীরা। বাংলাদেশে স্বল্প আয়ের মানুষ অপেক্ষাকৃত কম দামের হাতে পাকানো এ তামাক পণ্য গ্রহণ করে। নাসিরউদ্দিন বলেন, বিড়ি শিল্পে কর্মসংস্থানের ‘মিথ্যা’ দোহাই দিয়ে এনবিআরের ওপর চাপ দেন সংসদ সদস্যরা। “তারা দাবি করেন, বিড়ি শিল্পে ২৫ লাখের বেশি কর্মী জড়িত। এর অধিকাংশই নারী ও শিশু।” এ দাবির সত্যতা জানতে একটি সমীক্ষা চলছে বলে জানান তিনি। এনবিআর-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষ তিন বছরে বিড়ির ওপর কর বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক চাপই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল বলে মন্তব্য করেন চেয়ারম্যান।
তবে আর ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এবার আবগারি শুল্ক বাড়াব।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিড়ি শিল্পকে এভাবে চিহ্নিত করা উচিত যে, ‘এটা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’।
বিড়ি শিল্পকে জীবিকা ও রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে দেখার কথা স্বীকার করে বিকল্প কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেন তিনি।
আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, “এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ কীভাবে সামাল দেবেন?
“আমরা অংশীদারদের সঙ্গে বলা শুরু করেছি। আমরা সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। বাজেটের আগেই সমীক্ষার ফল বেরিয়ে আসবে। তাই তাদের বোঝাতে পারব বলে আমি নিশ্চিত”, উত্তর আসে নাসিরউদ্দিনের।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের তামাকের ওপর কর বাড়িয়ে এর দাম বাড়ানো উচিত।
গত বাজেটে বিভিন্ন দামের সিগারেটে ৩৬ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে সরকার।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রাকবাজেট আলোচনায় তামাক শিল্প থেকে চাপের মুখে পড়ে এনবিআর।
২০০৪-০৫ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিভিন্ন দামের সিগারেটের ওপর অতিরিক্ত কর একই ছিল। এনবিআর বরং সিগারেটের খুচরা মূল্য বাড়িয়ে এ খাত থেকে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল, বলেন তিনি।
“এই পদক্ষেপ দেশের আয় বাড়াতে সহায়তা করলেও জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তা কোনো কাজে আসেনি,” একইসঙ্গে স্বীকারোক্তি নাসিরউদ্দিনের।
ধূমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে তামাকের ওপর কর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ফর টোবাকো কন্ট্রোলকে (এফসিটিসি) অনুসমর্থন করায় বাংলাদেশের এর সুপারিশগুলো মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, “জনস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের এফটিসি অনুসরণ করতে হবে।”
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকোর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধূমপান বা ধূমপান ছাড়াই ৪৩ দশমিক তিন শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি তামাক গ্রহণ করে।
Discussion about this post