রিয়াদ: নোয়াখালীর সদর উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের মুনতাজ মিয়ার ছেলে মফিজ উল্লাহ। প্রায় ১৭ বছর আগে ছোট একটি কোম্পানিতে কাজ নিয়ে সৌদি আরবে আসেন তিনি।
কয়েক বছর পর বিলুপ্ত হয় মফিজ উল্লাদের কোম্পানি। কোম্পানির মালিক তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে বাহিরে কাজ করার সুযোগ দেয়। সেই সুযোগে মফিজ উল্লাহ একটা ওয়ানএইট(পিকাপ) কিনেন। এরও কয়েক বছর পর ওই মালিক তাদেরকে ইকামা নবায়ন করে দিতে অস্বীকৃতি জানালে অবৈধ হয়ে যান মফিজ উল্লাহ।
সৌদি বাদশার বিশেষ ঘোষনায় মফিজ উল্লাদের মতো অবৈধরা শুরুতে আশায় বুক বাধলেও এখন তা ঘুরে বালি। ষাটোর্ধ্ব মফিজ উল্লাহ বলেন, “বৈধ হওয়ার মতো টাকা নাই তাই দেশে ফিরে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে বৈধতার জন্য যেসব কাগজপত্র দরকারতা জোগার করতে ১৫ বা ২০ হাজার রিয়াল দরকার।”
এই পরিমাণ অর্থ খরচ করে বৈধ হওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেও জানান তিনি।
সৌদি বাদশার বিশেষ ক্ষমায় সব কিছু ফ্রি বলা হলেও কাজ করতে যেয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। আগের কফিলের(নিয়োগকর্তা) মন জয় করে পাসপোর্ট আনা, দূতাবাস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করা এবং তা বেসরকারি অফিসের মাধ্যমে কাগজগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকার দরকার সেটা দিতে অনেকেই অপারগ হওয়া বাধ্য হয়ে আউটপাসে(ছাড়পত্র) নিয়ে একেবারে দেশে চলে যাচ্ছেন।
যারা সৌদিতে এতোদিন বৈধ ছিলেন তারাও এখন বেকায়দায় পরে গেছেন। তাদের আগের কফিলের কাজ না থাকায় বাধ্য হয়ে ইকামা ট্রান্সফার করতে হচ্ছে আর এই ইকামা ট্রান্সফার করতে গিয়ে টাকার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে অনেকে।
বেগমগঞ্জের শাহাবুদ্দিন।একটি লিমোজিন(টেক্সি) কোম্পানিতে ট্রান্সফার হতে তার লাগছে প্রায় ২০ হাজার রিয়াল। কেন এতো টাকা লাগছে-চাইলে তিনি জানান, পুরান কফিলের কাছ থেকে পাসপোর্ট আনতে তাকে দিতে হয়েছে ৫ হাজার রিয়াল, দ্বিতীয়বারের ইকামা ট্রান্সফারের কারণে সরকারি ফি ৪ হাজার রিয়াল, অফিস খরচ ৩ হাজার রিয়াল, ইকামা বানাতে ৬হাজার রিয়াল।
তিনি আরও বলেন, “আগে যা রোজগার করতাম মাস শেষে দেশে পাঠাতাম হাতে থাকত না কিছুই। এখন এই বিশ হাজার টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবো ভেবে পাচ্ছিনা।”
শুধু মফিজ উল্লাহ আর শাহাবুদ্দিন নয় এমন হাজারো শ্রমিক আছে যারা বৈধ হওয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকার দরকার সেটা সংগ্রহ করতে না পারার কারণে একেবারে দেশে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে সৌদি বাদশার এই বিশেষ ক্ষমাকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর কিছু অসাধু সৌদি নাগরিকরা তাদের শ্রমিকদের কাজ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বৈধভাবে সৌদিতে বসবাসের জন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাদের এই অবৈধ আবদার রক্ষা করতে হচ্ছে প্রবাসীদের।
শুধু বৈধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা না করতে পারার কারণে ৩ জুলাইয়ের আগে সৌদি থেকে একেবারে দেশে ফিরবেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। আর যাদের বৈধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এমন সব মিলিয়ে ৫০হাজারেরও বেশি প্রবাসী দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৫/২০হাজার শ্রমিক সকল কাগজ পত্র সম্পন্ন করে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন।
রিয়াদ দুতাবাস এবং জেদ্দা কনস্যুলেট থেকে প্রতিদিন প্রায় ১হাজারের বেশি আউটপাস(ছাড়পত্র)র আবেদন জমা পরছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট সুত্র।
Discussion about this post