কুয়েতে ৭৭ তম ইঞ্জিনিয়ার্স ডে পালন করলো আইইবি কুয়েত চ্যাপ্টার। দেশের সুনাম অর্জন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের পেশাগত উন্নয়নে সংগঠনের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেমিনারে উঠে আসে কুয়েতে তাদের অবদান। ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পেশাজীবী সংগঠন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কুয়েতেও উদযাপিত হলো এর গৌরবময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

২২ মে বৃহস্পতিবার রাতে কুয়েত সিটি টাওয়ার হোটেলে এ উপলক্ষে আয়োজন করে কুয়েতে বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের কর্মধারার উপর প্রামাণ্যচিত্র, সেমিনার, আলোচনা, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেমিনারে কুয়েতের ওয়েল রিফাইনারির বিস্তারিত প্রজেক্টের মাধ্যমে তুলে প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সালাম। তিনি খনিজ থেকে ওয়েল রিফাইনারির মাধ্যমে কিভাবে পেট্রোল, ফুয়েল, ডিজেল, এলপিজি, বিটোমিন সহ বিভিন্ন জ্বালানী তৈরি করা হয় তার চিত্র তুলে ধরেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস মল্লিক বলেন আইইবির মাধ্যমে তারা শুধু পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরি করছে না, বরং দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককেও আরও মজবুত করছে। আইইবির ইতিহাস, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও পেশাগত উন্নয়নে সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি আইইবির নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের দক্ষতা তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপও করেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার শ্রম মোঃ আবুল হোসেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসকে আবু ফারুক মোঃ রওনক সালেহীন ডেপুটি কমান্ডার বিএমসি, প্রকৌশলী এম.আই.আলম, প্রকৌশলী মো. তোফাজল এইচ.ফারুক,
প্রকৌশলী হুমায়ুন সোলেমান কবির, প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতাহার আলী , প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, প্রকৌশলী মোঃ জুলফিকার আলী খান, প্রকৌশলী মো. শাহেদ ফারুক সিনহা , প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, প্রকৌশলী মো. আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত এর সভাপতি সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন সহ কুয়েতে তেল, বিদ্যুৎ, পানি, প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত প্রকৌশলীগন। মিনিস্টার শ্রম মোঃ আবুল হোসেন বক্তব্যে বলেন, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম বয়ে আনছেন। কুয়েতে আমাদের প্রকৌশলীরা যেভাবে প্রতিনিয়ত নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছেন, তা সত্যিই গর্বের। বাংলাদেশের সুনাম অর্জনে তাদের অবদান অতুলনীয়। কুয়েতে বাংলাদেশ থেকে আরো প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল দক্ষ জনশক্তি বিনিয়োগে তাদের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি ।

পেশাগত উৎকর্ষতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে আইইবি কুয়েত চ্যাপ্টার। অনুষ্ঠানে প্রকৌশলীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন দসিনা লাবণি, ডাক্তার নাজমা, প্রকৌশলী এমআই আলম, প্রকৌশলী আবদুস সালাম । দেশের প্রকৌশলীদের বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে আইইবি যে নিরলসভাবে কাজ করছে, কুয়েতের এই আয়োজন তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তথ্যমতে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা প্রতি বছর ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ডে পালন করে । এই দিনটি মূলত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশাজীবীদের জাতীয় সংগঠন। যা সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৮৬০ দ্বারা নিবন্ধিত।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পেশাজীবী সংগঠন। আইইবিতে বর্তমানে সকল প্রকৌশল বিভাগ অন্তর্ভুক্ত। ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পতনের পর এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরপরই কয়েকজন উর্ধ্বতন প্রকৌশলী, প্রকৌশলীদের একটি পেশাদার ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সদর দপ্তর ছিল ঢাকা, বাংলাদেশে। ১৯৪৮ সালের ৭ই মে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ঢাকাতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, স্থাপন এবং এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, পাকিস্তান এর নাম পরিবর্তন করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ রাখা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএফইও) প্রস্তাবানুসারে ইউনেস্কো ৪ মার্চকে টেকসই উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো বিশ্ব প্রকৌশলী দিবস হিসেবে ঘোষণা কার হলেও প্রকৌশলী দিবস বিশ্বের দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হয়। লুইস অগাস্ট হার্গো নামে এক ব্যক্তি ১৮৭০ সালে আর্জেন্টিনার প্রথম প্রকৌশলী হবার জন্য ১৬ জুন আর্জেন্টিনায় প্রকৌশল দিবস পালন করা। কলম্বিয়ায় প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ৯ আগস্ট।

ভারতে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ১৫ সেপ্টেম্বর, ইরানে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। মেক্সিকোতে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ১ জুলাই, ভেনিজুয়েলাতে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ২৮ অক্টোবর। পানামাতে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ২৬ জানুয়ারী। ইতালীতে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ১৫ জুন। তাইওয়ানে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ৬ জুন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৌশল দিবস পালন করা হয় ৪ জুন।
Discussion about this post