
আম-কাঁঠালের ঘ্রাণে হঠাৎই যেন মনটা কেমন করে উঠল এক টুকরো বাংলাদেশ এসে দাঁড়িয়েছে কুয়েতের বুকে! সেন্ট্রাল ফ্রুট মার্কেটে দেখা মিলল দেশের পরিচিত সেই ফলগুলোর প্রিয় আম আর কাঁঠাল। শত ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর দূরত্বের মাঝেও এই দৃশ্য প্রবাসীদের মন ছুঁয়ে যায়। কেউ ছবি তোলে, কেউ গন্ধ শুকিয়ে দেশের স্মৃতি মনে করে। কারণ এ শুধু ফল নয়, এ দেশের স্বাদ, শিকড়ের টান, হৃদয়ের একান্ত আবেগ।কুয়েতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যাঁদের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে এই মরুপ্রধান দেশটিতে। হাজারো মাইল দূরে থেকেও তাদের মন পড়ে থাকে বাংলাদেশের মাটি, জল আর স্বাদের কাছে। আর তাই বিদেশের বাজারে দেশের মৌসুমি ফলের উপস্থিতি তাদের জন্য শুধু খাবার নয়, মনে হয় যেন নিজের ঘরের কিছু। তবে এই আনন্দ সবসময় ভাগ্যে জোটে না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী দেশে উৎপাদিত ফল কুয়েতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছায় না। কুয়েতের সোলাইবিয়া অঞ্চলে অবস্থিত আল ফোর্দা ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুট সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে, জর্দান, সিরিয়া, ভারতের, পাকিস্তানের, মিশরের তাঁজা ফল সরাসরি পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের ফল খুব কম পরিমাণে ও অনিয়মিত আসে। প্রতিবেদক সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমনকে একজন বাংলাদেশি খুচরা বিক্রেতা জানালেন, বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা অনেক, কিন্তু আমরা ঠিকমতো পাই না। পেলেও দামে বেশি, তবু কাস্টমার নেয় কারণ এটা দেশের স্বাদ। পাইকারি আমদানিকারকরা বলছেন, মূল সমস্যার নাম: অব্যবস্থাপনা। যথাযথ রপ্তানি পরিকল্পনার অভাব, সরাসরি ফ্লাইট সংকট এবং বিমানবন্দর ও কাস্টমসে দীর্ঘসূত্রতা সব মিলিয়ে ফল ঠিকমতো সময়মতো পৌঁছাতে পারে না। ফলে কখনো পচে যায়, কখনো চড়া দামে বিক্রি করতে হয়। এদিকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ফল উৎপাদনকারী দেশ হলেও রপ্তানি সক্ষমতার জায়গায় এখনও পিছিয়ে। কঠোর নজরদারিসহ সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে এই বিপুল চাহিদাসম্পন্ন বাজার অন্য দেশের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন পাইকারি ব্যবসায়ী সাংবাদিক মঈন সুমন কে বলেন, এই বাজার ধরে রাখতে এখনই পদক্ষেপ দরকার। না হলে বাংলাদেশি পণ্যের জায়গা নিয়ে নেবে অন্য দেশ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসীদের চাহিদা শুধু আবেগের জায়গা নয়, এর পেছনে রয়েছে দেশের অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে নিয়মিত রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগালে বাড়তে পারে রপ্তানি আয়, তৈরি হতে পারে কর্মসংস্থান। বাংলাদেশি আম-কাঁঠালের ঘ্রাণে যে আবেগ জড়িয়ে, তা কেবল নাকেই নয় থাকে মনে, স্মৃতিতে এবং পরিচয়ের গর্বে। তাই এ পণ্যের গুরুত্ব শুধু রপ্তানি নয়, এটি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে বিদেশের মাটিতে। যারা এসব ফল বিদেশের বাজারে পৌঁছে দেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রবাসীরা বলছেন “আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই, কিন্তু দেশের স্বাদ সে কি ভোলা যায়?”
প্রতিবেদক সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন,
সভাপতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত – সময় টিভি প্রতিনিধি
Discussion about this post