কুয়েতে এক সময় বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন ছিলো ১৮ দিনার এর পর ৬০ দিনার তার পর ৭৫ দিনার। কুয়েতে সকল প্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকার পরেও বাংলাদেশী শ্রমিকরা জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং স্বল্প মজুরি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেছিলেন, বিক্ষোভের জন্য অনেক শ্রমিককে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বলতে গেলে সাধারণ প্রবাসীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখেই এমন আন্দোলন করেছিলেন। তখন পাশে পাননি কাউকে। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হলেও বৃদ্ধি হয়নি কুয়েত প্রবাসী সাধারণ শ্রমিকদের বেতন। জীবনযাত্রার পরিস্থিতির কথা আমলে নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে দেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন নতুন ভিসা নিয়ে কুয়েতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনতে চাইলে দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন কত দিতে হবে। নতুন ভিসার বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করেছে যা ১ আগষ্ট থেকে কার্যকর হবে। এই নিয়মের বাইরে কোন ভিসা সত্যায়ন করবে না দূতাবাস। কুয়েতে সাধারনত ১৮ নম্বর শোন ভিসা এবং ২০ নম্বর খাদেম ভিসা দুটি ক্যাটাগরি সাধারন শ্রমিক হিসেবে ভিসা দেওয়া হয়। এই ক্যাটাগরির মধ্যে ২০ নম্বর খাদেম বা গৃহকর্মী ভিসা এটা শুধু কুয়েতী নাগরিকদের হাউজ মেইড, ড্রাইভার, সেফ, কেয়ার টেকার, বাসার দাড়োয়ান সহ ব্যক্তিগত কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০ নম্বর খাদেম বা গৃহকর্মী ভিসার অধিনে অন্য সকল অদক্ষ সাধারন শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ১২০ কুয়েতি দিনার এবং দক্ষ ড্রাইভার ও সেফ (বাবুর্চী) ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন ১৫০ কুয়েতি দিনার ধার্য করে। প্রাইভেট সেক্টরের সকল কর্মীরাই ১৮ নম্বর ভিসার অনুকুলে। এখানে ১৮ নম্বর হলেও আকুদ হুকুমি এবং আহলি সহ রয়েছে অনেক ধরন। যেমন স্কুল মাদ্রাসা, হাসপাতাল, কৃষি কর্মী, পরিচ্ছনতা কর্মী (বলদিয়া), সরকারি অফিস আদালত সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধিনে সরকারি চুক্তিসহ যে সকল ভিসা হয় তাদের আকুদ হুকুমি বলা হয়। এসব ভিসার কন্ট্রাকে দুই, তিন বছরের চুক্তি থাকে। তারা চাইলেই যত্র তত্র রেসিডেন্সি পরিবর্তন করতে পারেন না। এই আকুদ হুকুমি অদক্ষ কর্মী যেমন কৃষি কর্মী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, সাধারন কর্মীর সর্বনিম্ন বেতন ৯০ কুয়েতি দিনার ধার্য করা হয়েছে যা পূর্বে ছিলো ৭৫ কুয়েতি দিনার। এছাড়া আকুদ হুকুমি ড্রাইভার দক্ষ কর্মীর সর্বনিম্ন বেতন ১২০ কুয়েতি দিনার। অন্যদিকে ১৮ নম্বর ভিসার আরেকটি ধরন আকুদ আহলি (বেসরকারি চুক্তি) ভিসা। এই ভিসায় আগত কর্মীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর চাইলে নিজ পছন্দমতো জায়গায় রেসিডেন্সি পরিবর্তন করতে পারেন। কুয়েতের কাজের ফিল্ডে দক্ষ – অদক্ষ সর্ব ক্ষেত্রেই রয়েছে আকুদ আহলি ভিসার শ্রমিক। আকুদ আহলি ভিসার অদক্ষ শ্রমিক যেমন কৃষি কর্মী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, সাধারন কর্মী, প্রহরী এবং স্পন্সরদের সর্বনিম্ন বেতন ১২০ কুয়েতি দিনার ধার্য করেছে দূতাবাস। এছাড়া ভিসা নম্বর ১৮ পরিষেবা, উৎপাদন, নির্মান খাতে ব্যক্তিগত চুক্তি আকুদ হুকুমি দক্ষ কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতন ১৫০ কুয়েতি দিনার। দক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে এসি মেকানিক, অটো মোবাইল মেকানিক, সহকারী, বারবার (নাপিত), সেফ, ড্রাইবার, ইনস্টলার, প্রেসার, রিপোর্টার, ভেন্ডর, ওয়েটার্স, কামার, প্রস্তুতকারক (স্ন্যাক্স), মেশিন অপারেটর, দর্জি এবং পোশাক তৈরি, সিরামিক কর্মী, ইলেকট্রিশিযান, রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বার এবং পাইপ ফিটার, প্যাভিওর, শাটারিং কার্পেন্টার, স্টিল ফিক্সার, সার্ভেযার, ওয়েলডার ও ফেব্রিকেটর ইত্যদি। ১৮ নম্বর ভিসার অধিনে সকল দক্ষ অদক্ষ কর্মীদের ধার্যকৃত বেতন ডিউটি দৈনিক আট ঘন্টা বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত আছে। বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত এর একটি বৈঠকে প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন, সহ সভাপতি জাহাঙ্গির খান পলাশ, সাধারণ সম্পাদক আ হ জুবেদ সহ অন্য সংবাদকর্মী এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা দীর্ঘদিন পর হলেও বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত শ্রমিকদের কল্যাণে বাংলাদেশের উন্নয়নে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয় বলে জানান। দূতাবাসের বর্তমান উদ্যোগগুলো সময় উপযোগী কার্যকরি পদক্ষেপ বলে মনে করেন প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা । প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মঈন সুমন এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার তথা দূতাবাস প্রবাসীদের অধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ থেকে পেশা ভিত্তিক যে ন্যুনতম মাসিক বেতন অবকাঠামো নির্ধারন করেছেন এবং বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে গেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এটি শুধু মহতী উদ্যোগই নয় বরং প্রবাসীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে এখন সময় এই নীতির সঠিক বাস্তবায়নের। এর ফলে কুয়েতে অবস্থানরত অতীতে আসা প্রবাসীদেরও মর্যাদা বাড়বে বলে মনে করেন প্রবাসীরা।


Discussion about this post