মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের শোষণ, নির্যাতন এবং শ্রম আইনের লঙ্ঘন যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা, প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কুয়েতে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাধারন শ্রমিকদের রেসিডেন্সি নবায়নের নামে অর্থ আদায়, হঠাৎ করে শ্রমিক ছাঁটাই, সঠিক সময়ে বেতন না দেওয়া সহ শ্রমিকদের উপর জুলুম নির্যাতন করার খবর প্রতিনিয়তই শোনা যায় । কুয়েতেও বিভিন্ন কোম্পানির নামে শ্রমিকদের সাথে প্রতারনা করতে শোনা গেলেও ভয়ে কোন অভিযোগ করেনা সাধারন শ্রমিকরা। যার কারনে দূতাবাসও আইনিভাবে কোন ব্যাবস্থা নিতে পারেন না। কুয়েতে প্রথম সারির একটি কোম্পানির বিরোদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ, অবৈধ টাকা আদায় এবং হঠাৎ করে ছাঁটাইয়ের অভিযোগ পেয়েছে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস। বিষয়টি নিয়ে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন এর সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত এর সভাপতি ও সময় টিভির প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন। সে সময় রাষ্ট্রদূত বলেন প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত দূতাবাস। সময় সংবাদকে তিনি বলেন যারা নতুন ভিসা নিয়ে কুয়েতে আসতে চায় তারা যেনো কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক ভিসা সত্যায়ন কিনা যাচাই করে আসেন। কারন কুয়েতে যে সকল কোম্পানি নতুন ভিসা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনতে আগ্রহী হন তাদের ভিসা সত্যায়নের পূর্বে ঐ শ্রমিকরে নুন্যতম বেতন কত হবে, বাসস্থানের ব্যবস্থা আছে কিনা, দৈনিক আট ঘন্টা কাজ এবং সাপ্তাহ একদিন ছুটি, বছরে ১ মাস বেতন সহ ছুটি সহ প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতামূলক উল্লেখিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রচার করা হয় যে, কুয়েতের ওয়েল আল নসিফ কোম্পানী ও এর মালিকানাভুক্ত ফজর আল খালিজ কোম্পানী আল জাহারা হাসপাতালের কন্ট্রাক্টে ক্লিনার হিসাবে কাজের জন্য নভেম্বর ২০২২ ও পরবর্তী বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ হতে কর্মী আনার পর ০১ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই আল জাহারা হাসপাতালের কন্ট্রাক্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, যদিও কর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ন্যূনতম ০৩ বছর কন্ট্রাক্টে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে উক্ত কোম্পানী বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনে। কুয়েতের শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মীদের একই কোম্পানীর নতুন কন্ট্রাক্টে ইকামা ট্রান্সফারের ফি কোম্পানী কর্তৃক প্রদেয় হলেও ওয়েল আল নসিফ কোম্পানী প্রতিজন কর্মীর কাছ থেকে ৩৬০ কুয়েতি দিনার নিয়ে আদান হাসপাতালের কন্ট্রাক্টে ইকামা ট্রান্সফার করেছে বলে উক্ত কর্মীরা বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েতে অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও ওয়েল আল নসিফ কোম্পানী তাদের আদান হাসপাতালের কন্ট্রাক্ট-এর মেয়াদ আগামী মে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বহাল থাকলেও কোম্পানীটি এই কন্ট্রাক্টের ৮৩০ জন বাংলাদেশী কর্মীকে ছাঁটাই করে নতুন করে কর্মী আনার জন্য ইতোপূর্বে বাংলাদেশ থেকে আনা বাংলাদেশী কর্মীদের কাজ বন্ধ করে দেয়। তারা কিছু বাংলাদেশী কর্মীকে অন্য কোম্পানীতে ইকামা ট্রান্সফারের অনুমতি দেয় তবে বাকী ১৫০ জন কর্মীর ইকামা স্থগিত করে তাদেরকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার কার্যক্রম গ্রহণ করে। কুয়েতের ওয়েল আল নসিফ কোম্পানীতে বাংলাদেশ থেকে এসে কর্মরত কর্মীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ চলমান না রেখে কর্মী ছাঁটাই করে তদস্থলে বাংলাদেশ হতে নতুন কর্মী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মীর অসন্তোষের বিষয়টি কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে, মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্মীদের উক্ত সমস্যা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)’কে ওয়েল আল নসিফ কোম্পানীর অনুকূলে বাংলাদেশী কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়েল আল নসিফ কোম্পানীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণের পর কোম্পানীটি এবং অত্র দূতাবাসের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ বৈঠক ০১-০৭-২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বৈঠকেই তাদের বিরুদ্ধে আনীত বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের অভিযোগগুলো তাদেরকে জানানো হয় এবং সেগুলো দূরীকরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ওয়েল আল নসিফ কোম্পানীর প্রতিনিধিগণ এ সকল অভিযোগ কোন আমলেই নেয়নি বরং সেগুলো সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার করে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোম্পানীটি সম্ভবত ভবিষ্যতেও প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় মনোযোগী হবে না এবং তাদের দ্বারা প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যায় কার্যকলাপ জারি রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত কর্তৃক বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য ওয়েল আল নসিফ কোম্পানীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করা হচ্ছে না। এ প্রেক্ষিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে ওয়েল আল নসিফ কোম্পানীর সাথে ভিসা সংক্রান্ত কোন ধরণের কার্যক্রমে জড়িত না হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো। মিনিস্টার (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন এর সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি জনস্বার্থে প্রচার করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এই পদক্ষেপ দূতাবাসকে সাধুবাদ জানান বাংলাদেশী বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কিতৃক, রাজনীতিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ প্রবাসীরা।

Discussion about this post