
লেখক কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর মোঃ ইকবাল আখতার এর কাছ থেকে বইটি নিচ্ছেন সাংবাদিক মঈন সুমন
মঈন উদ্দিন সরকার সুমন: কুয়েতে আছি দীর্ঘ সময় থেকে । একজন রেমিটেন্স যোদ্ধার পাশাপাশি সংবাদকর্মীও। প্রবাসীদের কল্যানে নিজের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব কাজ করি। কখনো নিউজ কভারেজ করতে আবার কখনো প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য প্রায়ই দূতাবাসের স্বরনাপন্ন হতে হয়। যেহেতু বিদেশের মাটিতে প্রবাসীদের সর্বশেষ ভরসাস্থল দূতাবাস। দুই যুগের উপরে হবে কুয়েতে আছি, এই প্রবাস জীবনে যেমন দেখেছি অসংখ্য কর্মকর্তা যারা প্রবাসীদের কল্যানে কাজ করেছেন নিরলস ভাবে। তদ্রুপ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাও দেখেছি যারা প্রবাসীদের শোষণ করেছেন। এদের কথা না হয় বাদই দিলাম। তবে যারা ভালো কাজ করেন তাদের প্রশংসা না করলে নিজের কাছেই অপরাধী। আমার এই দীর্ঘ প্রবাস সময়ে দেখা একজন চৌখুশ কর্মকর্তা হিসেবে অন্যতম কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বর্তমানে কর্মরত কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) মোঃ ইকবাল আখতার। যিনি তার পেশাগত দক্ষতা, মেধা এবং আন্তরিকতা দিয়ে সবসময় অন্যদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব ফেলেন। তিনি শুধু একজন দক্ষ অফিসার নন, বরং তিনি কর্মক্ষেত্রে একজন লিডারও বলা যায়, তিনি নিজ কর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। মোঃ ইকবাল আখতার এর ব্যক্তিত্বে এমন এক ধরনের প্রফেশনালিজম রয়েছে যা একবার দেখা হলে সহজেই মনে গেঁথে যায়। তার সাথে যতবারই কথোপকথন হয়েছিল তা ছিলো অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা, সততা এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে যে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে প্রস্তুত। তার কাছে শেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে, বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় গুণাবলী এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। এই ধরনের কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিত হয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবান মনে করছি। আমি নিশ্চিত, তার মতো মানুষের কাছেই নিঃস্বার্থ সেবা পাবেন সাধারণ মানুষ। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তিনি লিখেন শুনে আনন্দিত হলাম। এবার 2025 বই মেলায় ‘গণপতি’ একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। লেখক মনে করেন বিশ্বসাহিত্য বৈচিত্র্যপূর্ণ। ইতিহাসঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্ম বিশ্বসাহিত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারা। বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লব এই ধারাকে প্রতিনিধিত্ব করে। বিপ্লবের প্রস্তুতি ও প্রেক্ষাপট, রঙিন বিপ্লব এবং বিপ্লবপরবর্তী অনুরূপ প্রতিবিপ্লব এই ধারার সবচেয়ে চর্চিত ও আকর্ষণীয় বিষয়। এগুলো নিয়ে বিশ্বজোড়া গুণগত সাহিত্যকর্ম আছে বিস্তর। মহান একাত্তর বাঙালির মনন ও মানসে বিপ্লব নয়, মহাবিপ্লব। একাত্তরের মহাবিপ্লব নিয়ে আমাদের বলার মতো সাহিত্যকর্ম আছে হাতেগোনা, বিপ্লবপরবর্তী সমাজ নিয়ে তা একেবারেই শূন্যের কোঠায়। ‘গণপতি’ একাত্তরপরবর্তী বাংলাদেশের পল্লিসমাজের টানাপোড়েন নিয়ে গোনায় ধরার মতো সাহিত্যকর্ম। তিনি আসলে বইটিতে বাহাত্তর হতে পঁচাত্তর: আমাদের অনেক কিছু চুরি গেছে, সবচেয়ে চুরি গেছে স্বপ্ন। ‘গণপতি’ কয়েকজন গেঁয়ো যুবক-যুবতীর স্বপ্ন চুরির গল্প তুলে ধরেছেন।আজ আমি আনন্দিত যে মোঃ ইকবাল আখতার তার নতুন বই “‘গণপতি'” বই মেলায় প্রকাশ করেছেন। বই মেলা এমন একটি জায়গা, যেখানে নতুন ভাবনা, সৃজনশীলতা এবং লেখক-বইপড়ুয়া-প্রকাশকরা একত্রিত হন, এবং মোঃ ইকবাল আখতার এর বই এই উৎসবের মাঝে আলোকিত একটি তারকার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বইটি যে শুধু সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য একটি উপহার, তা নয়; এটি সেই সমস্ত পাঠকদের জন্যও বিশেষ, যারা জীবনের নানা দিক সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে চান। লেখক তার বইয়ে যে বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন, তা না শুধু তথ্যবহুল, বরং প্রতিটি পৃষ্ঠা থেকে এক নতুন চিন্তার দিক উন্মোচিত হয়। ‘গণপতি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং এক নতুন সাহিত্যিক অভিজ্ঞতার পথপ্রদর্শক মনে করি। বইটি পড়লে যে কোনো পাঠক নতুন কিছু শিখবেন, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পাবেন এবং নিজের জীবনে কিছু মূল্যবান শিক্ষা নিয়ে আসবেন। লেখক তার মনোজগৎ, অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাধারা এই বইতে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন এক নতুন যাত্রার সূচনা, যেখানে জ্ঞানের নতুন দরজা খুলে যায়। এই বইটি শুধু সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং যে কেউ যারা জীবনকে গভীরভাবে বুঝতে চান, তাদের জন্য এক অনন্য উপহার। আমি নিশ্চিত, “গণপতি” শুধু আজকের পাঠক নয়, আগামী প্রজন্মেরও মনে থাকবে। লেখক বইটি উৎসর্গ করেছেন বঙ্গজননীদের। লেখক বলেন বঙ্গদেশে মুক্তিসনদ নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়, বীরাঙ্গনা সনদ দেখা হয় কলঙ্কের তিলক হিসেবে; এদেশে বারবনিতা চলে বুক টান করে, বীরাঙ্গনা চলে মুখ লুকিয়ে। বীরাঙ্গনা মানে বেশ্যা নয়, বীরাঙ্গনা মানে বঙ্গজননী। জানা-অজানা সকল বঙ্গজননী সুখে থাক, সমাজ তাদের নিয়ে গর্ব করুক সেই প্রত্যাশাই তিনি করেছেন। মোঃ ইকবাল আখতার ১৯৮১ সালের মাগুরা জেলার জাগলা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র তিনি। ইতিহাসের বাঁকে লুকিয়ে থাকা সত্য ফিকশনে তুলে আনতে তিনি আগ্রহী । বই আকারে প্রকাশিত ‘দ্রোহী’ প্রথম এবং ‘গণপতি’ তার দ্বিতীয় উপন্যাস। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বর্তমানে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে কর্মরত। অভিনন্দন মোঃ ইকবাল আখতার আপনার নতুন বইটির জন্য এবং বই মেলায় এই অসাধারণ কাজটি প্রকাশ করার জন্য! এটি শুধু আপনার জন্য নয়, পুরো সাহিত্য জগতের জন্য একটি গর্বের বিষয়। যা একটি অসাধারণ অর্জন মনে করি। একজন লেখকের হাত থেকে সরাসার পাঠক হিসেবে বই পাওয়ােও ভাগ্যের ব্যাপার। সেটা যদি হয় প্রবাসে থেকে তাহলে তো অনন্য পাওয়া। আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার লেখা ‘গণপতি’ বইটি আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য। ধন্য আমি। দোয়া রইলো আপনার কঠোর পরিশ্রম, সৃজনশীলতা এবং অবিচলিত সংকল্পের সফলতা আশবেই।

Discussion about this post