পাবনা থেকে মোবারক বিশ্বাস ঃ পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার অর্ন্তগত আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক মোজাম্মেল হক ও পাবনা জেলা শিা অফিসার মোঃ কুতুবউদ্দিনের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে এক শিকিাকে বিতাড়িত করার ঘটনা ঘটেছে। তিগ্রস্থ সহকারি শিকিা সাবিনা ইয়াসমিন গতকাল শনিবার সকালে ঈশ্বরদী প্রেসকাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে লিখিত বক্তব্যে জানান, স্কুলে নিয়মিত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আমি কয়েকদিন আগে জানতে পারি ফেব্র“য়ারির এমপিও’তে আমার নাম নাই বিধায় বেতনও আসেনি। এমপিও’তে নতুন একজন শিকের নাম অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। আমি ০৮/১০/২০০১ তারিখে স্কুলের চাকুরিতে যোগদান করি এবং ২০০২ সালের মে মাসে এমপিও ভূক্ত ( ইনডেক্স নম্বর ৫৬২২৯৩) হই। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্তও বেতন-ভাতা যথারীতি উত্তোলন করেছি। ফেব্র“য়ারীর এমপিওতে বাদ পড়ার কারণ সম্পর্কে প্রধান শিক মোজাম্মেল হককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ভুলবশতঃ বাদ পড়েছে । বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে আমি জেলা শিা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, প্রধান শিক জালিয়াতি করে আমার ভূয়া পদত্যাগপত্র দেখিয়েছেন। জেলা শিা অফিসারের সাথে যোগসাজেশ করে তার মাধ্যমে এমপিও’তে আমার পদ শুণ্য দেখিয়ে আরেক শিক আশরাফুজ্জামানকে এমপিও ভূক্ত করার জন্য গত ২০শে জানুয়ারী জেশিঅ/পাব/২০১২/১২৪ নং স্মারকে মহাপরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। যে কারণে এমপিওতে আমার নাম কাটা যায় এবং আশরাফুজ্জামানের নাম অর্ন্তভূক্ত হয় ( ইনডেক্স নম্বর ১০৭২০৯১)। অথচ আমি ৩০ শে মার্চও স্কুলে উপস্থিত হয়েছি বলে জানান।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা শিা অফিস হতে মাধ্যমিক উচ্চ শিা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রেরিত কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জেলা শিা অফিসার কুতুব উদ্দিন সহকারি শিকিা সাবিনা ইয়াসমিনের পদত্যাগ জনিত শুণ্য পদ দেখিয়ে এমপিও হতে নাম কর্তনের সুপারিশ করেছেন। পাশাপাশি ওই শুণ্য পদে মোঃ আশরাফুজ্জামানকে এমপিও ভূক্তের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে । জানা যায়, এই স্কুলে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১১ জন। সাবিনাসহ কর্মরত শিকের সংখ্যাও ছিল ১১ জন। জালিয়াতির মাধ্যমে মাধ্যমিক উচ্চ শিা অধিদপ্তরের সংশোধনী ফরমে অনুমোদিত ১১টি পদে কর্মরত শিক ১০ দেখিয়ে সাবিনাকে অনৈতিকভাবে বাদ এবং আশরাফুজ্জামানকে অর্ন্তভূক্ত করার জন্য প্রধান শিকের পাশাপাশি জেলা শিা অফিসারও স্বার করেছেন। প্রেরিত কাগজপত্রের সাথে ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্তের ফটোকপি সংযুক্ত করা হয়। ফটোকপিতে সভার তারিখ ২৮ এবং বছর ২০১২ বোঝা গেলেও কোন মাসে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তা অস্পষ্ট। প্রত্যেক সদস্যদের স্বারের তারিখেই মাসের নাম বোঝা যায়নি। অস্পষ্ট সিদ্ধান্তে দেখা যায়, সাবিনা ইয়াসমিন অন্যত্র চাকরি গ্রহন করায় পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন। বিধায় তার পদ শুণ্য এবং এই শুণ্য পদে আশরাফুজ্জামানের বেতন-ভাতার অংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। স্বার অনুযায়ী সভায় উপস্থিত সদস্য মমতাজ উদ্দিন, শিক প্রতিনিধি মহিউদ্দিন এবং গাউসুস সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ ধরণের কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি এবং তারা উপস্থিত ছিলেন না। এই রেজুলেশনকে ম্যানেজিং কমিটির উল্লেখিত সদস্যরা জাল ও প্রতারণামূলক বলে জানিয়েছেন। রেজুলেশনে সভাপতি হিসেবে আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস লিঃ এর প্রকল্প প্রধানকে দেখানো হলেও মিলের মালিক প জানান, স্কুলের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই । প্রকল্প প্রধান গোলাম মোর্শেদ জানান, রেজুলেশনে স্বার করা তো দূরের কথা তিনি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে কখনও সভাপতিত্ব করেননি। তিনিও এই রেজুলেশনটি জাল বলে জানিয়েছেন। স্কুলের সিনিয়র শিক মজিবর রহমান ােভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১২ সালে সাবিনার পদ পদত্যাগ জনিত কারণে শুণ্য হলে তিনি অদ্যবধি চাকরি করছেন কিভাবে ? তিনি আরও জানান, ১লা ফেব্র“য়ারী হতে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরিায় সাবিনা এস এম হাই স্কুল কেন্দ্রে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও প্রধান শিকের স্বারিত জানুয়ারি মাসের বেতনের বিল অনুযায়ী সাবিনা বেতনও তুলেছেন। শিক প্রতিনিধি মহিউদ্দিন জানান, প্রধান শিক মোজাম্মেল হক এর আগে লীকুন্ডায় একটি স্কুলে থাকাকালীন অনেক জালিয়াতি করেছে। এমনকি একজন প্রভাবশালী সভাপতির স্বার জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের ঘটনাও এই প্রধান শিক মোজাম্মেল হক ঘটিয়েছে। জেলা শিা অফিসার মোঃ কুতুব উদ্দিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অফিসে কাগজপত্র না দেখে কিছু বলা যাবে না। স্কুলের প্রধান শিক মোজাম্মেল হক রেজুলেশন ও স্বার জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আশরাফুজাজামানকে এমপিও ভূক্ত করার জন্য কিছু কাজ করা হয়েছিল, কিন্তু সাবিনার নাম যে বাদ পড়বে তা জানতাম না। সামনের এমপিওতে ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি জানান । এদিকে জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল শনিবার সকালে শিক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা স্কুলে উপস্থিত হয়ে ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মমতাজ উদ্দিন জানান, প্রধান শিক মোজাম্মেল হক সকলের সামনেই জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। সাবিনা গতকাল শনিবার সকালেও স্কুলে এসেছিলো এবং শিক হাজিরা খাতায় স্বার করেছেন। এসময় উত্তেজিত এলাকাবাসী মারমূখি হলে প্রধান শিক দ্রুত সটকে পড়ে। ম্যানেজিং কমিটি ও শিকরা সে সময় স্কুল বন্ধ করে দিয়ে আলোচনায় বসে প্রধান শিককে মৌখিক ভাবে বরখাস্ত করেন। সহকারী প্রধান শিক জমসেদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে সর্বশেষ জানা যায়।
Discussion about this post