প্রবাসীদের যে সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তার বড় একটি কারণ হলো নিজেদের ভেতরকার বিভাজন ও ঐক্যের অভাব। এটা বললে ভুল হবে না যে, এই ব্যর্থতা অনেকাংশেই আমাদের নিজেদের। বিশেষ করে, নেতৃত্বে থাকা অনেক প্রবাসীই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ বা লেজুর সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। ফলে নেতৃত্বের জায়গা থেকে একটি নিরপেক্ষ, শক্তিশালী, এবং সকলের প্রতিনিধিত্বশীল ভূমিকা গড়ে ওঠে না। প্রবাসীরা নিজের কথা ভাবার বদলে দল বা গোষ্ঠীভিত্তিক চিন্তাধারায় আবদ্ধ হয়ে পড়েন। যার ফলে সার্বজনীন দাবির ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলতে পারি না। অথচ একই দাবিতে যদি সব প্রবাসী এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতো, তাহলে কূটনৈতিক, প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব তৈরি করা সম্ভব হতো। প্রবাসে রাজনীতি করে কেউ কেউ হয়তো পরিচিতি পেয়েছেন বা দেশে অবস্থানরত রাজনৈতিক শক্তির আশ্রয়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পেরেছেন। কিন্তু তা প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে কতটা কাজে এসেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব অর্জন ব্যক্তি স্বার্থে সীমাবদ্ধ থাকে, প্রবাসী সমাজের কল্যাণে তা প্রভাব ফেলতে পারে না। অন্যদিকে, উন্নত বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের মধ্যে সংগঠিত, তারা নাগরিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারতাম। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক প্রবাসী এখনো মনে করেন যে, ঐক্য মানেই দলের অনুসারী হওয়া, কিংবা নেতৃত্ব মানেই কারো ছায়া হয়ে থাকা। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রবাসীদের আসল শক্তি হলো তাদের সম্মিলিত কণ্ঠ। আর এই কণ্ঠ তখনই কার্যকর হয়, যখন তা দলমত নির্বিশেষে একটি স্বার্থে প্রবাসী অধিকার ও সম্মান রক্ষায় একত্রিত হয়। আমাদের এখনো শিখতে হবে কীভাবে মতভেদ রেখে মতানৈক্য মোকাবিলা করে বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য গড়া যায়। যে দিন এই ঐক্য গড়ে উঠবে, সেদিনই প্রবাসী সমাজের দাবি-দাওয়া আদায়ে প্রকৃত সফলতা আসবে।
মঈন উদ্দিন সরকার সুমন -লেখক ও সাংবাদিক
সভাপতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত
Discussion about this post