
মঈন উদ্দিন সরকার সুমন: দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদ এর পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার সিরিয়া জুড়ে আনন্দ মিছিল ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয় উদযাপন করেন। রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারা দেশ পুনর্গঠনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। গত বছরের নভেম্বরের শেষদিকে শারা নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থী জোট আকস্মিক সামরিক অভিযান শুরু করে এবং ৮ ডিসেম্বর দামেস্ক দখলের মাধ্যমে সিরিয়ায় দীর্ঘ পাঁচ দশকের আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটে। এর মাধ্যমে ২০১১ সালে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটে, যার ফলে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ নিহত ও লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। ৮ ডিসেম্বর সোমবার ভোরে পুরাতন শহরের গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে ফজরের নামাজের মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। এরপর উল্লসিত জনতা রাস্তায় নেমে নতুন সিরিয়ার পতাকা উত্তোলন করেন। দামেস্কের বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে দেওয়া বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট শারা বলেন, “একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সার্বভৌম সিরিয়া গড়তে সকল নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার দাবি করেছে যে সিরিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। মানবিক কর্মী গাইথ তারবিন বলেন, “বিদেশি সম্পর্কের পাশাপাশি এখন আমাদের দেশের ভেতরের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় মনোযোগ দিতে হবে। অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক জানায়, যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে সিরিয়ার ব্যয় হতে পারে প্রায় ২১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইসঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী দেশে ফিরেছেন, তবে পুনর্গঠনের জন্য জরুরি অর্থায়ন প্রয়োজন। তবে চ্যালেঞ্জ কম নয়। হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ, যাদের অনেকেই সাবেক সরকারের কারাগারে হারিয়ে যান। আসাদ-আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দাবিতে পরিবারগুলো এখনো অপেক্ষায়। দেশটির বহুধর্মীয় সামাজিক কাঠামোও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে আলাউইট জনগোষ্ঠী ও দক্ষিণের ড্রুজ অধ্যুষিত অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনাও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত বছর শারা বাহিনীর হাতে পতনের প্রথম বড় শহর আলেপ্পো–তেও ছিল ব্যতিক্রমধর্মী উদযাপন। শত শত গাড়ি হর্ন বাজিয়ে বিজয় মিছিল করে। শহরটির বাসিন্দা মোহাম্মদ কারাম হাম্মামি বলেন একসময় আমরা দেশ ছেড়ে পালাতে চাইতাম, আর এখন আমরা দেশকে ভালোবাসতে শিখছি। তবে দেশের উত্তর-পূর্ব কুর্দি-অধ্যুষিত অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত কারণে জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কুর্দি প্রশাসনের একীভূতকরণ চুক্তির বাস্তবায়নও স্থবির হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে দক্ষিণ সিরিয়ায় চলমান সামরিক উত্তেজনা ও তথাকথিত ‘অসামরিক অঞ্চল’ ঘিরে দাবি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এক বছর পূর্তির এই মুহূর্তে সিরিয়া দাঁড়িয়ে আছে এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে। যুদ্ধ-পরবর্তী ক্ষত এখনও তাজা, পথে পথে ধ্বংসস্তূপ। তবে বহু দশক পর দেশটির মানুষ নতুন করে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।








Discussion about this post