এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে অংশ নিতে কুয়েতে সফরকালে মাঠের পারফরম্যান্সে যেমন হতাশ করেছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সেরা ক্লাব বসুন্ধরা কিংস, তেমনি মাঠের বাইরে ‘সমন্বয়হীনতা’ ও ‘গাফিলতির’ অভিযোগে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলটির টিম ম্যানেজার এস.এম. ওয়াসিমুজ্জামান ও মিডিয়া সমন্বয়ক সাদেফ। কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের অভিযোগ, কিংস ম্যানেজারের অবহেলা ও দায়িত্বহীন আচরণের কারণে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা টুর্নামেন্ট কাভার করার জন্য নির্ধারিত মিডিয়া কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত, যা কুয়েত সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ প্রবাসী সাংবাদিক সংগঠন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ হ জুবেদ বলেন, বসুন্ধরা কিংসের টিম ম্যানেজারের গাফলতি ও সমন্বয়ের অভাবে কুয়েতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা মিডিয়া কার্ড পাননি। এমনকি, যিনি প্রথম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তারাও কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বসুন্ধরা কিংস কুয়েতে আগমনের প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই কুয়েত প্রেসক্লাব তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। সেই সময় টিম ম্যানেজার ওয়াসিমুজ্জামান আ হ জুবেদকে ফোনে জানান, আপনি কুয়েত থেকে প্রথম যোগাযোগ করেছেন, সময়মতো সব জানিয়ে দেব। ১৯ অক্টোবর বাফুফে থেকে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো একটি ইমেইলের অনুলিপি প্রেসক্লাবকেও দেওয়া হয়, যার স্ক্রিনশট নিজে পাঠিয়ে ওয়াসিমুজ্জামান জানান, আপনাদের পরামর্শ মোতাবেক ইমেইল করেছি। কিন্তু দল কুয়েতে পৌঁছানোর পর থেকেই শুরু হয় বিভ্রাট। প্রেসক্লাবের নেতারা বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে তিনি জানান, মাঠে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও ছবি প্রয়োজন যা তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর রাত ৮টায় হোটেল থেকে কার্ড সংগ্রহের কথা জানানো হয়, কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি দল জানতে পারেন, কার্ড প্রস্তুত হয়নি। পরদিন সহকারী মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন রক্সি নতুন সময় দেন ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কার্ড সংগ্রহের। কিন্তু সেই সময়েও হোটেলে গেলে কার্ড হাতে পাননি সাংবাদিকরা। বরং রক্সি এবং মিডিয়া সমন্বয়ক সাদেফ জানান, মাঠে গিয়ে মিডিয়া কর্নার থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এএফসি বা কুয়েত ফুটবল ফেডারেশনের কাছে প্রেসক্লাব সদস্যদের জন্য কোনো মিডিয়া কার্ডই নেই। আ হ জুবেদ বলেন, আমরা পরে জানতে পারি, মোট পাঁচটি মিডিয়া কার্ড মাঠ কর্তৃপক্ষ বসুন্ধরা কিংস ম্যানেজারের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু সেই কার্ডগুলোর মধ্যে মাত্র একজন মূলধারার সাংবাদিক ছিলেন বাকি চারজন কোনোভাবে অদৃশ্য ইঙ্গিতে কার্ড পেয়ে যান। একজন তো শখের বশে কার্ড নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ১৬টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা আমাদের সংগঠনের সদস্য। অথচ অফিসিয়ালি ইমেইল যোগাযোগের পরও কিংস ম্যানেজার অসহযোগিতামূলক আচরণ করেছেন যা হতাশাজনক। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে টিম ম্যানেজার এস.এম. ওয়াসিমুজ্জামান বলেন, কার্ড পাইয়ে দেওয়া আমাদের কাজ নয়। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি সাংবাদিকদের জন্য মিডিয়া কার্ড সংগ্রহ করতে। কুয়েত ফুটবল ফেডারেশন আমাদের এই বিষয়ে অবগত। তবে মাঠ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য তার বিপরীত। জাবের আল মোবারক আল-হামেদ আল-সাবাহ স্টেডিয়ামের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তালাল আহমদ নিশ্চিত করেছেন তাদের কথা মতেই বসুন্ধরা কিংস ম্যানেজারকে পাঁচটি মিডিয়া কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি ও তথ্যে অসঙ্গতি কুয়েত প্রবাসী সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। প্রেসক্লাবের নেতারা মনে করছেন, এ ধরনের আচরণ কেবল সাংবাদিকদের অসম্মান নয়, বরং দেশের ফুটবল সংগঠনগুলোর সুনামকেও ক্ষুণ্ণ করেছে।







Discussion about this post