Wednesday, September 3, 2025
banglarbarta.com
  • Home
  • শীর্ষ সংবাদ
  • দেশ
    • সারাদেশ
      • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • বিশ্ব
  • প্রবাস
    • কুয়েত
    • দূতাবাস
  • প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • ভিন্ন খবর
  • শোক সংবাদ
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • গল্প
  • ভিডিও
  • English
No Result
View All Result
  • Home
  • শীর্ষ সংবাদ
  • দেশ
    • সারাদেশ
      • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • বিশ্ব
  • প্রবাস
    • কুয়েত
    • দূতাবাস
  • প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • ভিন্ন খবর
  • শোক সংবাদ
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • গল্প
  • ভিডিও
  • English
No Result
View All Result
banglarbarta.com
No Result
View All Result
Home ভিন্ন খবর

কনকনে শীতে খেজুর রস ও সুস্বাদু পিঠা গ্রামবাংলার চাষীর প্রধান উৎসব

banglarbarta.com by banglarbarta.com
January 4, 2021
in ভিন্ন খবর, শীর্ষ সংবাদ
0
কনকনে শীতে খেজুর রস ও সুস্বাদু পিঠা গ্রামবাংলার চাষীর প্রধান উৎসব
0
SHARES
133
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

নজরুল ইসলাম তোফা: আবহমান গ্রামবাংলার অনেক চাষীদের শীতকালীন খুবই বৈচিত্র্য পূর্ণ উৎসবের প্রধান উপাদান হলো- ‘’খেজুর রস’’। গ্রামীণ সাধারণ মানুষদের জীবন-জীবিকায় এটিকে মুল হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। স্বপ্ন ও প্রত্যাশায় অনেকখানি খেজুরগাছের সঙ্গে চাষীদের অঙ্গাঅঙ্গিভাবে বসবাস হয়ে উঠে। নানানভাবে জড়িত চাষীর জীবন সংগ্রামে বহু কষ্টের মাঝেই অনেক প্রাপ্তি যুক্ত হয়। সমগ্র বাংলার জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ- খেজুর গাছের সঙ্গেই- ভূমিহীন চাষী, প্রান্তিক চাষী, দারিদ্র ক্লিষ্ট মানুষের জন্য এই সময়টা অনেক আনন্দদায়ক। কারণ, এমন খেজুর গাছই তো চাষীর অন্নদাতা। 
আরো জানা যাক, হেমন্তের শেষেই শীতের ঠান্ডা পরশে গ্রামবাংলার চাষী খেজুরগাছের মিষ্টি রসে নিজেদেরকে ডুবিয়ে নেওয়ার সুন্দর মাধ্যম সৃষ্টি করেন। গ্রাম বাংলার চাষীদের যেন একঘেয়েমির যান্ত্রিকতায় জীবনযাপনের অনেক পরিবর্তন আনে শীতের ঋতুচক্র।‌ এই শীতকালে বৈচিত্র্যপূর্ণ গ্রামীণ সংস্কৃতির মাঝেই যেন ‘খেজুর রসের হরেকরকম পিঠা উৎসব’ শুরু হয়। তাযেন এক শৈল্পীক ঐতিহ্যের বহুমুখী সমারোহ বা প্রাণোচ্ছলতায় বারবারই ফিরে আসে।
চাষীরা সৃষ্টি কর্তার সৃজনশীল খেজুর গাছের যত্ন-আত্তি না করলে যেন রস মিলবে না। আর রস না মিললে গুড় হবে কি করে। পাটালি না দেখলে চাষীর যেন ঘুম আসে না। চাষী তাদের মেয়ে বা বউয়ের হাতের কাঁচা সুপারির কচি পান গালে ভরেই বাঁশের ডালি মাথায় করে গঞ্জে ও দূর্বতী হাট বাজারে যাবে কি করে। আর, পাটালি গুড়ের মিষ্টি মধুর গন্ধে তারা বিভোর হয়ে বিক্রয় কর্মে না থাকে তো পেটে ভাতে বাঁচবে কি করে। শীত কালের আমেজে প্রকৃতির মাঝ থেকে সংগীহিত ‘মিষ্টি খেজুর রস’ চাষীরা চষে বেড়ায় সকালে, বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় মেঠো পথ ধরে। তারই বহিঃ প্রকাশে যেন চমৎকার নান্দনিকতা বা অপরূপ দৃশ্যপটের সৃষ্টি হয, সত্যিই তা যেন শৈল্পীকতার নিদর্শন। শৈল্পীক আস্থা ও বিশ্বাসকে নিয়ে প্রকৃতির সৃষ্টি বিশাল আকৃতির ‘কুয়াশাচ্ছান্ন এবং ঝাপসা’ পরিবেশের দেখা মিলে, তা যেন চাদরের মতো। চাষী’রা সে চাদরের মধ্যেই নিজের ‘চাদরের মুড়ি’ দেয়। প্রয়োজনের তাগিদে সামান্য কষ্ট তাদের গায়ে লাগে না। এই শীতে কালে রূপ সৌন্দর্যের আরও একটি উপাদেয় সামগ্রী খাঁটি সরিষার তেল। যা তারা শরীরে মালিশ করে অনেকাংশেই ত্বকের মশ্রিণতা এবং ঠান্ডা দূর করে খেজুর গাছে উঠতে।
গ্রামাঞ্চলের চাষীরা ভোরবেলায় খেজুরগাছ হতে রসের হাড়ি নামিয়ে আনতে ব্যস্ত হন। রাতের এ হিমশীতল রস ভোরে হাড় কাঁপানি ঠান্ডায় গাছ থেকে নামিয়ে খাওয়ার যে স্বাদ তা একেবারেই আলাদা মাত্রা সৃষ্টি করে। ভোরে এই খেজুর রস খেলে শীত যেন শরীরে আরও জাঁকিয়ে বসে। তাদের কাছে এ শীতে শরীর কাঁপানি এক স্পন্দন চরম মজা দায়ক মনে হয়। শীত লাগে লাগুক না, তবুও রস খাওয়ার কোন বিরাম নেই। তারা এক গ্লাস, দু’ গ্লাস খাওয়ার পরপর কাঁপতে কাঁপতেই যেন আরো এক গ্লাস মুড়ি মিশিয়ে মুখে তুলে চুমক দেয়া, আর রোদ পোহানো সে কি আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা দূরহ। শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে গ্রামের ছেলে মেয়েরা ঘুম হতে খুব ভোরে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খড় কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে হাত পা গরম করে। আর অপেক্ষায় থাকে কখন সকালের তীব্র বা মিষ্টি রোদের প্রখরতা আরও তীব্র হবে। তাদের রোদ পোহানোর আরামের সাথে সাথে আরো অপেক্ষা থাকে, তা হলো তাদের প্রিয় ‘খেঁজুর রস’। কখন যে আসে আর তখনই খাবে। সেই ‘রস’ আসলে যথা সময়ে হাজির হলে তাদের কাছে যেন আনন্দ উল্লাসের কোনোই কমতি হয় না। গ্রামাঞ্চলের খুব অভাবী মেয়েরা রংবেরংয়ের যেসব খেজুর পাতায় খেজুর পাটি তৈরী করে তার উপরই যেন চলে রস খাওয়ার আসর। উপার্যনের জন্য খেজুর পাতা শুকিয়ে তা দিয়েই নকশা খচিত খেজুর পাটি তৈরী পরে আর তা বিক্রি করে তাদের সংসারে কিছুটা হলেও অর্থ সংকোলান হয়। সুতরাং, এই খেজুরের পাটিতেই গ্রামের অনেক পরিবার ঘুমানো কাজে ব্যবহার করে। এ খেজুর পাতায় এক ধরনের ‘সাহেবী টুপি’ও তৈরি হয়। খেজুরের পাতা, ডাল এবং গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর মোরুব্বা তৈরিতেও এই খেজুর কাটার ব্যবহার প্রচলিত আছে। এককথায় বলা চলে যে খেজুর গাছের পাতার ও ডাল সেতো কবর পর্যন্ত চলে যায়।
খেজুর গাছ ছয় সাত বছর বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে। ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত “রস” দেয়। গাছ পুরনো হয়ে গেলে রস কমে যায়। আবার অনেক পুরনো খেজুর গাছের রস অনেক মিষ্টি হয়। জানা যায় যে, ‘মাঝ বয়সী গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়’। বেশি বেশি রস সংগ্রহ করাও গাছের জন্য অবার অনেক ক্ষতিকর। রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাসে খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়। কার্তিক মাস থেকেই ‘রস’ পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শীত যতো বেশি পড়ে ততোই যেন বেশি রস ঝরে। রসের স্বাদও তত মিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভর মৌসুম। অগ্রহায়ণ হতে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত একটি খেজুর গাছে মাসে ‘৪০ কেজি’ রস পাওয়া যেতে পাবে। খেজুরগাছ শুধু রস দিয়ে ক্ষান্ত হয় না। শুকনো খেজুরের “ভেষজ গুন” অনেক রয়েছে। আর খেজুরের বীজ গুলি বাহির করে নিয়ে দুধে খেজুর গুলো মিশিয়ে ভালভাবে ফুটিয়ে গরম করে এমন দুধ ও খেজুর গুলো ঠান্ডা করে শিশুকে খাওয়ালে শক্তি বাড়ে৷ একটি শুকনো খেজুর ফলের পুষ্টি মান প্রায়,- ৭৫-৮০% শর্করা, ২% আমিষ এবং প্রায়- ২.৫% স্নেহজাতীয় পদার্থ থাকে। খেজুরের ১০০ গ্রাম শাঁসে ২০ ভাগ পানি, ৬০-৬৫ ভাগ শর্করা, ২ ভাগ আমিষ, আর খুবই সামান্য পরিমাণ  কপার, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন- এ, বি-১, বা বি-২ কিংবা খনিজ লবণ খোঁজে পাওয়া যায়।
চাষীরা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান এগাছে হতে সে গাছে। মাটিতে পা ফেলার ফুরসতটুকুও পায় না অভাবী এই মানুষগুলো। শীত আসা মাত্রই খেজুর গাছ ‘তোলার জন্য’ অনেক আগে থেকেই সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে। খেজুর গাছ বিশেষ কায়দায় কাটতে হয়। আর এই গাছ গুলো কাটে যারা তাদেরকে ‘গাছি’ বলা হয়। তারা নানা উপকরণ সমন্বয়ে গাছি নাম ধারি মানুষ পরিচ্ছন্ন ভাবেই গাছ কাটার জন্য ব্যস্ত হয়ে যান। গাছগুলো কাটতে যেন ব্যবহার করেন দা, দড়ি, একটুকরো চামড়া এবং পুরনো বস্তা আবার দা রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি থলি কিংবা ঝাঁপি। সে ঝাঁপি গাছিরা রশি দিয়ে খুব যত্নে দা রেখে এ গাছ হতে সে গাছে উঠা, নামা করে সুবিধা পায়। আবার কোমরে বেশ কিছু চামড়া বা বস্তা বেঁধে নেয়, যেন গাছে উঠা নামাতে কোন প্রকার সমস্যা না। গাছ কাটার জন্যে ‘গাছি’ শরীরের ভারসাম্য রক্ষার সময়েই কোমর বরাবর গাছের সাথে দড়ি বেঁধে নেয়। দড়িটা বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়। এ দড়ির দুমাথায় বিশেষ কায়দায় গিট দেওয়া থাকে। গাছে উঠার সময়ে ‘গাছিরা’ অতি সহজে মুহূর্তের মধ্যে গিঁট দুটি জুড়ে দিয়ে নিজের নিরাপদ জন্যেই গাছে উঠার ব্যবস্থা করে নেয়।
রস জ্বাল দিতে যে পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়, তা পাওয়া যায় না। এমন আক্ষেপে চাষীদের বউ’রা ঝগড়া করলেও চালের আটায় তৈরি ভাপা পিঠা খেজুরের গাঢ় রসে ভিজিয়ে খাওয়ার পরপরই যেন সব রাগ মাটি হয়ে যায়। আবার কখনও সখনও চাষীর বউকে এক প্রকার সান্তনা দিয়ে বলে, অভাবের সংসারে যা আছে তা দিয়ে এই পেশা চালাতে হবে, না হলে বাঁচবো কি করে। বছরে ৫ মাস ধরেই তো খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করা হয় আর তার খড়কুটার জ্বালানিতেই ‘গুড়’ বানিয়ে বাজারে বিক্রি হয়। ‘বউ’ আবার মুচকি হাসি দিয়েই বলে, সংসার যা চলছে তা তো একরকম ভালোই কিন্তু মেয়ের বিয়ের জন্যে ভাবনা-চিন্তা আছে। তার তো বয়স হয়েছে,- বিয়ে না দিলে হবে। এ কথাও চলে আসে খেজুর গাছির ছোট্ট পরিবারে। চাষীদের এমন পারিবারিক খেয়ালও রাখতে হয় খেজুর গাছের বসকে ঘিরে। তবে আরও পরিশ্রম বা কষ্ট করার দরকার পড়ে। এক চাষী বলেই বসে সামনের শীতে ইচ্ছা আছে,- আরো কিছু খেজুর গাছ বর্গা নিলেই মেয়ের বিয়ের কিছু টাকা হাতে আসবে। এই কথা গুলো সচরাচর শুনা না গেলেও এক চাষীর কন্ঠে বেজে ওঠে। চাষীরা আদরের বিবাহিত মেয়েদের জামাইকে দাওয়াত দিয়ে “খেজুর রসের সুস্বাদু পিঠা পায়েস” তৈরীর বিভিন্ন আয়োজনের কথা এখানে না আনলেই নয়। শীতকালীন গ্রাম বাংলায় খেজুর রসের সুস্বাদু পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় পাশা পাশি ঘরে ঘরেও জামাই মেয়েদের নিয়েই যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় করে। চাষীদের ”মেয়ে এবং বউ ঝিয়েরা কনকনে শীতে গীত গেয়ে খেজুরের রস বা গুড় তৈরি করে। আবার মেয়ে জামাইকে কাছে পেয়ে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, বিকাল বা সন্ধ্যার মনোরম পরিবেশ উপভোগের পাশা পাশি পিঠা তৈরি করে। এ যেন একটি চমৎকার দৃশ্যপট যাকে শৈল্পিক উপাখ্যান বললেও ভুল হবে না।
শীতের সকালে ‘রস বা পাটালি গুড়’ তৈরীতে জ্বালানীর পাশে বসে বা মোটা লেপ মুড়ি দিয়ে চিড়া, মুড়ির মোয়া খাওয়ার নানন্দনিক পরিবেশটা যেন গ্রামাঞ্চলের চাষীর  সনাতনী ইতিহাস ঐতিহ্য। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সহ মেয়ে জামাই ‘মজার মজার গল্পে মশগুল’ থাকে। শীত কালীন উপাদেয় খাবার খেজুরের রস সংগ্রহে- ব্যস্ত চাষীরাও এ গাছ হতে ওগাছে খেজুর রস সংগ্রহে শীত কাঁপানি কন্ঠে  গান ধরে। রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের গুড় এবং সেই গুড় গুলো মুলত পাটালি গুড় ও ঝোলা গুড়। এসব গুড়গুলো বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। শীতের খেজুর গাছের রস থেকে যে গুড় তৈরি তা দিয়েই- “দুধের পিঠা, পুলি পিঠা, সেম পিঠা” আরো কত কিযে পিঠা তৈরী হয় তা না খেলে একে বারে জীবনই বৃথা। পাটালি গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া খাওয়া ও ঝোলা গুড়ের সঙ্গে মচমচে মুড়ি খাওয়ার পরিবেশ শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাছে গেলেই দেখা যাবে। এমনিতেই তারা খেজুর গুড় গ্রামের অনেকেই খায়। তবে শীত কালের ‘খেজুর রসের’ বিভিন্ন তৈরিকৃত রসেরপিঠার স্বাদ ভুলা যায় না। খেজুর রসের গুড় থেকে যে প্রচলিত সন্দেশ হয় তার স্বাদ অপূর্ব। শখ করে অনেক চাষিরা ‘চা’ খাওয়ার নেশায় ঘরে ঘরেই ‘চা’ বানিয়ে এই খেজুর গুড়কে উপজীব্য করে নেয়।
শীত তার বিচিত্র রূপ বৈচিত্র্য এবং রস নিয়ে হাজির হয় গ্রাম বাংলায়। নবান্ন উৎসব কিংবা শীতের পিঠা পায়েশ তৈরির ‘উৎসবটা’ শীতে ঘটা করেই হয়। শীতের চিরায়ত যা কিছু সৃষ্টি কিংবা নিয়ামত, তা উপলব্ধি করতে চাইলে অবশ্য গ্রামে যেতে হবে। আজো গ্রামাঞ্চলে শীত কালীন উৎসবের পাশা পাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রেও নিরবতার অস্তিত্ব বড়ই আনন্দদায়ক। বাংলাদেশের ‘গ্রাম’ সৌন্দর্য মন্ডিত ষড়ঋতুর ছোঁয়ায় শীত কাল এক ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে এই খেজুর গাছ। তাই আশ্বিনের শুরু থেকেই চাষীরা খেজুর গাছ তোলা এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই উপযুক্ত সময় তারা নির্ধারণ করে মাঘের ‘বাঘা শীতে’ গুড় বিক্রিয় এবং তৈরীর প্রক্রিয়া যেন শেষ হয়। তাদের প্রক্রিয়াজাত ‘খেজুর গুড়, পাটালি এবং রস সারা বছর সংগ্রহ করে রাখে,’ কোন কোন গ্রামের গৃহস্থ পরিবার অন্যান্য ঋতুতেই ব্যবহার করে। গ্রামের বাজার গুলোতেও জমজমাট হয়ে ওঠে খেজুর রস এবং গুড়ে। প্রকৃত পক্ষেই শীতে উৎসব মুখর হয়ে উঠে গ্রাম বাংলা। জলাভূমি কিংবা কিছু পাহাড়ি ভূমি বাদে এদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে খেজুর গাছ জন্মে না। তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলে ‘খেজুর গুড়’ বাণিজ্যিক ভাবেই উৎপাদিত হয়।
খেজুরগাছ কাটার জন্য গাছের মাথার এক দিকের যেন শাখা কেটে চেঁছে পরিষ্কার করে সেই কাটা অংশের নিচ বরাবর দু’টি খাঁজ কাটার প্রয়োজন মনে করে। সে খাঁজ থেকে কয়েক ইঞ্চি নিচেই একটি সরু পথ বের করা হয়। এই সরু পথের নিচে বাঁশের তৈরি নলী বসানো হয়। এই নলী বেয়ে ‘হাড়িতে রস’ পড়ে। নলীর পাশে বাঁশের তৈরি খিল বসানো হয়। সেই খিলেই মাটির হাড়ি টাঙিয়ে রাখে এবং বিকেল বেলা থেকে “হাড়িতে রস জমা” হতে হতেই সারা রাতে হাড়ি গুলো পরিপূর্ণ হয়। নতুন গাছগুলোকে কাটার পর ‘দুই তিন দিন রস’ পাওয়া যায়। প্রথম দিনের রসকে বলে জিরান কাট। জিরান কাট রস খুবই সুস্বাদু। ১ম দিনের রস থেকে ভালো পাটালি গুড় তৈরি হয়। ২য় দিনের রসকে বলে দোকাট। তৃতীয় দিনের রসকেই বলে তেকাট। রসের জন্যে খেজুর গাছে একবার কাটার পরে আবারও পাঁচছয় দিন পর কাটতে হয়। গাছের সে কাটা অংশ শুকানোর জন্যে সময় দেয়া প্রয়োজন পড়ে। আর খেজুর গাছ কাটা অংশটা শুকানোর সুবিধার জন্য যেন সাধারণত পূর্ব এবং পশ্চিম দিক করে গাছ গুলো কাটা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি কাটা অংশে পড়ে।
গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়। হাড়িকে আবার অনেকেই বলে ভাঁড়। ঠিলা হিসেবে কেউ কেউ হাড়িটার নামকরণ ব্যবহার করে। সুতরাং, এ  ভাঁড় সম্পর্কে যা বলতে চাই, তা হলো- হাড়িটি আসলেই খুবই ছোট আকৃতির একটি কলসের মতো। এই হাড়িটি থেকে ১০ কিংবা ১৫টি হাড়ির রস জ্বাল দিয়ে এক ভাঁড় গুড় হয়। সেই ১ ভাঁড় গুড়ের ওজন- ৬ থেকে ৮ কেজির মতো বলা চলে। গুড় তৈরির জন্য রস জ্বাল দেওয়া হয় মাটির জালায় বা টিনের তাপালে। সূর্যোদয়ের আগে বা খুব সকালেই- “রস নামিয়ে” এনে টিনের তাপালে উপরে জ্বালানি দিতে হয়। জ্বাল দিতে দিতেই একসময় রস ঘন হয়ে গুড় হয়ে যায়। এ গুড়ের কিছু অংশ তাপালের এক পাশে নিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি একটি খেজুর ডাল দিয়ে ঘষতে হয়। আর তা ঘষতে ঘষতেই সেই রসের অংশটুকু শক্ত হয়ে যায়। আর ‘শক্ত অংশকেই’ কেউ কেউ আবার বীজ বলে থাকে। সে বীজের সঙ্গেই তাপালের আরো যা বাকি গুড় গুলি থাকে সেগুলো মিশিয়ে যেন অল্পক্ষণের মধ্যে গুড় জমাট বাঁধতে শুরু করে। তখন এ গুড় মাটির হাড়ি বা বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে রাখার প্রয়োজন পড়ে। সে গুড় গুলি দেখলে বুঝা যাবে, একেবারে জমাট বেঁধে পাত্রের আকৃতি ধারণ করেছে। এদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বহু কাল ধরেই পেশাদার খেজুর গাছ কাটিয়ে আছে। স্থানীয় ভাষাতে এদের বলা হয় গাছি। কার্তিক মাসের শুরু থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত তারা খেজুর গাছগুলো কাটায় নিয়োজিত থাকে। যেসব চাষীদের স্বল্পসংখ্যক খেজুরগাছ আছে তাকে নিজেরাই কাটে। তারা রস পাড়ে ও বাড়িতে নিয়ে এসে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে। শীতের প্রকোপ যতো বেশি হবে, রসও ততো বেশি রসও পাবে। রস গাছে যখন কমে যায়, ঠিক তখন সেই রসের স্বাদ যেন বেশী হয়। এ রসকে ‘জিরান কাট’ রস বলে, গন্ধেও এ ‘রস’ হয় সবচেয়ে উত্তম। এমন ‘জিরান কাট’ রস নামানোর পর আবারও রসের ভাঁড় ও কলস গাছে টাঙালে তখন এই খেজুরগাছ থেকে যে রস পাওয়া যাবে তা উলাকাটা রস। গ্রাম বাংলায় শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে যারাই খেজুর বাগানের চাষ করে তারাই তো প্রকৃত অর্থে ‘চাষী’। তারা গভীব রাতে খেজুর রস নামিয়ে উনুনের আগুনে জ্বালাতেই ব্যস্ত হয়। সত্যিই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর বাগানের পাশে উঁচু ভিটায়। অন্ধকারে নিবিড় স্তব্ধতার মধ্যেই তারা জীবন সংগ্রামের যে মজার স্পন্দন উপলব্ধি করে তাকে না দেখলেই যেন স্পষ্টরূপে বিবরণ দেওয়া মুসকিল। উনুনের পাশে থাকে গাছি কিংবা শ্রমিক-মজুর, তাদের থাকবার জন্য বানায় কুঁড়ে ঘর, খেজুরের পাতা বা বিচালি দিয়েই ছাওয়া হয়। কান পাতলে শোনা যায়, গাছিয়াদের নিঃসঙ্গতা কাটাতে মিষ্টি মধুর গানের সুর। টানা সুরের গ্রাম্য এলাকার গান- প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের গানও গেয়ে থাকে। তাদের সুরে আছে অদ্ভুত প্রাণময়তা ও আবেগ, সহজেই হূদয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
পত্র বৃন্তে আবৃত খেজুরের কাণ্ডটি সরল, গোলাকৃতি বা ধূসর বর্ণের হয়। মাথায় মুকুটের মতো ছড়ানো যে পাতা গুলো তা উর্ধ্বমুখী আরো ব্যাখ্যায় গেলে বলতে হয় যে,- ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ। খেজুরের ‘ভিন্নবাসী’ গাছে স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদাভাবেই গাছে জন্মায়। খেজুর গাছের পুংপুষ্পমঞ্জরী খাটো, ফুল সাদা মোচার মতো বা ঘিয়ে রঙের মতো দেখতে হয়। খেজুর গাছটির পরিপক্ক ফুলের মোচায় ঝাকুনি দিলে ধুলার মতো পুংরেণু বাহির হতে দেখা যায়। আবার, স্ত্রী পুষ্প মঞ্জরী লম্বা বা ফুলের রং হালকা সবুজ হয়ে থাকে। স্ত্রী গাছে ‘অজস্র ফল’ ধরে থাকে তা অনেক উজ্জ্বল দেখায়। এক মজ্ঞরীতে ‘বহু স্ত্রী ফুল’ ফোটে, যা থেকে ‘একটি কাঁদিও তৈরী’ হয়। খেজুর গাছের মাথায় খুব সূচালো অসংখ্য কাঁটার সমন্বয়ে যেন এক ঝোপের মতো সৃষ্টি করে। এইখেজুর গাছের পাতার গোড়ার দিকের প্রত্যেকটা পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। সাধারনত এই পাতা তিন মিটার লম্বা এবং নীচের দিকে বিশেষ করে বাঁকানো হয়। খেজুর গাছ সারা বছর একই রকমেই থাকে। পাকা ফল দেখতেই পার্পেল-লাল রঙের এবং তা সুমিষ্ট হয় আর খাওয়াও যায়। পাখিদেরও প্রিয় এটি।
শীত কালে খেজুরের রস সবারই রসনা তৃপ্ত করে। আর খেজুর গাছের মাথার ‘কচি অংশটা’ খেতে দারুন লাগে। খেজুর গাছ ছয় সাত বছর বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে। ”২৫ থেকে ৩০ বছর” পর্যন্ত রস দেয়। গাছ পুরনো হয়ে গেলে রস কমে যায়। পুরনো গাছের “রস” খুব মিষ্টি হয়। মাঝ বয়সী গাছ থেকে সবচে বেশি পরিমাণের ‘রস’ আসে। বেশি রস সংগ্রহ করা গাছের জন্যেও ক্ষতিকর। রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাসে খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়। কার্তিক মাস থেকেই ‘রস’ পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শীতটা যতোই বেশি পড়বে ততো তো রস বেশি ঝরবে। রসের স্বাদও ততোই সুমিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভর মৌসুম। এই মৌসুমে একবার গাছগুলো কাটার পর দু’তিন দিন ‘রস’ পাওয়া যায়। 
এই খেজুর গুড় যারা বানায়, তাদের ঐতিহ্যগত পরিচয় তারা গুড়-শিল্পী কি়ংবা শিউলি। এমন শিউলিরা আদতে খেত মজুর। বর্ষার দিনে অনেক অঞ্চলে চাষাবাদের পর ভূমিহীন খেত মজুরদের কোনও কাজ থাকেনা। সুতরাং অনাহার-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটাতে হয়। সেই সময়ে শিউলিরা দাদন নেয় মহাজনের কাছ হতে খেজুর গাছ। বিনিময়ে তারা মহাজনের নির্ধারিত দামে তাদের কাছেই অনেক সময় গুড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পরিশেষে এই কথা বলতে চাই যে খেজুর গুড় এখন সারা বাংলাদেশে পাওয়া যায়। কিছু জাতের খেজুর গাছগুলিও আরবের মেসোপটেমিয়াই আদি নিদর্শন হিসেবে গণ্য। খেজুর বা খেজুরের বসের জন্মভূমি আরবের সেই মেসোপটেমিয়া আর এ দেশে যেসব খেজুর চাষ হয় তার নাম Phoenix sylvestris। এমন খেজুর গাছের উচ্চতাও- ১০ হতে ১৫ মিটার। গ্রাম বাংলার এ জাতটিকে বুনো জাত হিসেবেও আখ্যায়িত করা হলেও আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মধ্যেই গন্য তাকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। 
লেখক : নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

Previous Post

যশোরের শার্শা উপজেলায় আওয়ামীলীগের গনতন্ত্রের বিজয় দিবস পালিত

Next Post

কুয়েতে প্রবাসী ক্রিকেট ক্লাব নড়াইল এক্সপ্রেস খেলোয়াড়দের জার্সি বিতরণ

Next Post

কুয়েতে প্রবাসী ক্রিকেট ক্লাব নড়াইল এক্সপ্রেস খেলোয়াড়দের জার্সি বিতরণ

Discussion about this post

Plugin Install : Widget Tab Post needs JNews - View Counter to be installed
  • Trending
  • Comments
  • Latest

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা এবং টেলিফোন

গর্ভাবস্থায় ভাল ভাল বই পড়া উচিত

অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার সাঈদীর মৃত্যু

আড়াইবাড়ি পীর পরিবারের সম্পর্কে জানতে পড়তে পারেন

শোক বার্তা

শোক বার্তা

লুকিয়ে পড়া বই

“আরব দেশ ও জাতি :উৎস এবং মহাযুদ্ধের উত্তরাধিকার”

কুয়েতে বাংলাদেশ কুরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর উদ্দ্যোগে সুধীজনের সম্মানার্থে বিশেষ ইফতার মাহফিল

চাকরী সম্পর্কে তথ্য দিতে নতুন ওয়েবসাইট করছে কানাডা সরকার

বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত এর হেল্প লাইন এর সাহায্য নিন

অনুমোদনের অপেক্ষায় আরো ১৩ টিভি

কুয়েতের শ্রম বাজার পুনরায় উন্মুক্তকরণে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম

কুয়েতের শ্রম বাজার বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে

ইকোপার্কে উটের সাথে দর্শক হিসেবে লেখক

কুয়েতের ইকোপার্ক গুলি দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়

সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন

অভিবাসী ও প্রবাসী দুই শব্দের ভিন্নতা, এক বাস্তবতার পরিচয়

Writer-journalist Moin Uddin Sarker Sumon

Bilal bin Rabah Mosque is another unique mosque in Kuwait

Kuwait’s Ecoparks are popular with visitors

Kuwait’s Ecoparks are popular with visitors

Writer in the strawberry field

Bangladeshi green revolution in the desert of Kuwait

Journalist Moin Uddin Sarker Sumon

Bengali and Bangladeshi are not the same word

❑ আর্কাইভ

September 2025
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
« Aug    

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ গাজী আবু হানিফ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শেখ জহির রায়হান, বিজ্ঞাপনঃ শাহ করিম

E-mail : banglarbarta7@gmail.com

মোবাইল : +48726143833 +880 1303211966, For Ad: +96566850744

© 2023 banglarbarta.com All Right Reserved. Designed and Developed by WEBSBD

No Result
View All Result
  • Home
  • শীর্ষ সংবাদ
  • দেশ
    • সারাদেশ
      • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • বিশ্ব
  • প্রবাস
    • কুয়েত
    • দূতাবাস
  • প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • ভিন্ন খবর
  • শোক সংবাদ
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • গল্প
  • ভিডিও
  • English

© 2023 banglarbarta.com All Right Reserved. Designed and Developed by WEBSBD

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist