গাজী আবু হানিফের একগুচ্ছ কবিতা
ঝরাপাতা
বিছায়ে পড়ে আছে ঝরা পাতা খড়কুটো
কখনো কাদামাখা কখনো ধুলোপড়া
আমাদের প্রতিদিনের আঙিনা কর্মস্থল পথ
পাতারা পড়ে পড়ে স্তূপ কার।
কত পাতা,কাননে কাননে বনের গাছের তলায়
রোদে শুকায়,হালকা বাতাসে উড়ে
ঘুটনিরা কুড়ায়ে লয় বস্তায় পুরে
রান্নার কাজে করে হেসে ব্যবহার।
এসব পাতার মতো আমাদেরও পাতার জীবন
এমনই ঝরে যাবো নিরবে
সন্ধ্যামালতীর মতো কোনো এক চাঁদের রাতে
ঝরাপাতা – ঝরাপাতা – ঝরাপাতা হয়ে।
মেঠোপথ সন্ধ্যার দেশে
মেঠোপথ সন্ধ্যার দেশে –
কত পাখি ডাকিতেছে হিজলের ডালে
বুটিকার চমৎকার সূর্য ডোবার সকরুণ মায়ায়
আমাদেরকে ডাকিতেছে নদী তীরের সে এক নবোঢ়া যুবতী
তাহার মুখের বিভায় আলোর উজ্জ্বল আভায় লক্ষ্মী হাসে।
ধান কাটিতেছে চাষি- ভোরের নরম আলোয় শিশিরে ভিজে
পাখিডাকা সুখময় পুষ্প রাঙা ফুলে ফুলে প্রজাপতি উড়ে
রাত্রির জোস্নার গন্ধ লেগে আছে তাহার শরীরে
ঘাটে আজ নৌকা বাঁধা -মাঝি হীন ঘাটে আজ সেতু।
আমাদের -তোমাদের -এই সেই দিনগুলি ব্যবধান রচে,
প্রকৃতি শিল্পীর নিসর্গ তুলিতে এঁকেএঁকে চলে রাতদিন
কতকাল ফুরিয়েছে- কতকাল চলিতেছে- আসিবে আরও কতকাল
একদিন আমরাও হারিয়ে যাবো এইসবের ভীড়ে।
পৃথিবীতে খোঁজে আর পাইবে না আমাদের
আমরা অদৃশ্য রইবো কবর শ্মশানের বুকে।
দুধের গন্ধ ভরা ভাত
সেইদিন এই নক্ষত্রের রুপালি নদীর দেশে
দুধের গন্ধ ভরা – কচি ধানের শিসে শিসে
আমাদের প্রাণ মিশে আছে ভাতের অমৃত হয়ে
বাঙালি ঐতিহ্যের জাতির এক সময়ের স্রোতে।
মাছে ভাতে বাঙালি এ এক ধ্রুব অদ্রি কথা-
আমাদের রক্তে মিশে আছে কত ভাতের স্বর্গীয় সুধা
একটা ভাত পড়ে গেলে কুড়ায়ে ফের লয় চাষি
এমন করেই চিরন্তন মাটির মমতায় চলে প্রেমের প্রকাশ।
আমরা ইচ্ছে করেই কি হয়েছি এই সেই দেশের বাঙালি
এই এক জাতি হয়ে পরিচিতি লভেছি যে দেশে দেশে
এ সময়ে এসে এ শতাব্দীতে গেয়ে গেছি তোমাদের গান
এ যে আমাদের শুভ কর্মের ফল বিধির বিধান।
দুধের গন্ধ ভরা ভাতের স্বাদ –
আজও বুঝি লেগে আছে জিহবায়;
কতকাল আমরা করেছি মন্দিরে,মসজিদে
সে ভাতের শুকরিয়া মোনাজাত।
করুণার প্রসারিত হাত
আমাকেই ভালো করে দেখিনি আমি-
কিভাবে ফুরিয়েছে দিন
কখন জন্মিলাম, শিশুকিশোর হইলাম
যৌবন হারিয়ে এখন হয়ে গেছি লীন।
দেখিনি নিজের মুখ ভালো করে-চুল-হাত-পা শরীর
কাঁচা কালো সবুজ শরীর,কবে যে হয়ে গেছে সাদা।
আর কি ফিরে পাবো- সেই ছেলেবেলা দুর্বার যৌবনকাল
এ এক চরম হতাশা- অবেলার ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাস
কিভাবে হারিয়ে গেছে হেলে অবহেলে-রত্নময় সময়
এখন বুঝেছি আমি-সময়ের দিলে মূল্য
হতো আমার পৃথিবীকে জয়।
সেই ভুলগুলি মনে পড়ে বার বার- এসে করে আঘাত
এখন এ অবেলায় – আর কি ফিরে পাবো
যৌবনের আলো ভরা দিন
বাড়ালেও অশ্রুজলে তার পানে করুণার প্রসারিত হাত।
সোনালি অতীত
সোনার মুকুট পরা সেই রাজা নেই –
নেই সে রাণি
নেই তার সুখের রাজ্য,আর সিংহাসন
কোথায় হারিয়ে গেলো সেইদিনগুলো
আমাদের সুখে ভরা সোনালি অতীত।
নেই গোয়াল ভরা গরু,গোলাভরা ধান
নেই পদ্মদিঘির শানবাঁধা ঘাট
নেই আর তপোতীর হাসি ভরা ছোট গেহ নীড়
যেখানে সোনার মেয়ে চুল শুকাত।
নেই আর ব্রহ্মদেশ,লোকনাথ নগর
হারিয়ে গেছে কত ঈসাখাঁ,সুবাস বসু
এখন শুধু করি আমরা ফ্যাসাদ
ছেড়ে দিয়ে আমাদের শিকড়ের হাল।
হে নতুন যুবক
হে নতুন যুবক,ভালোবেসো দেশ-
যে ভালোবাসায় আছে ত্যাগ আর পবিত্র উদ্দেশ।
যে ভালোবাসা হবে নিখাঁদ হৃদয়
ক্ষয়ে যাবে যতোসব পাপ আর অপরাধের
কালিমার কৃচ্ছ্রতা ভয়।
হে নতুন যুবক, ভালোবেসো দেশ-
ত্যাগের মহিমায় রচো,গড়ে তোল শান্তির অমোঘ পরিবেশ।
যে ভালোবাসা মাতাপিতার রক্তের জন্মের দান
যে পবিত্র স্তন্য মায়ের তুমি-আমি চিরকাল
এদেশেরও করতেছি পান।
হে নতুন যুবক, ভালোবেসো দেশ
জীবনেমরণে কভু এই প্রেম ভালোবাসা হয় বলো শেষ?
যে ভালোবাসায় বাঁচে আমাদের প্রজন্ম সকল
ফোটে উঠে কলিগুলো ফুল হয়ে আরও উজ্জ্বল।
হে নতুন যুবক, ভালোবেসো দেশ
যে ভালোবাসা খাঁটি নির্মল খাসা- ঘুচে দেবে অশান্তি ক্লেশ।
যে ভালোবাসা পুষ্ট যৌবনের শক্তির আঁধার
কখনো মানে না হার,উচ্চ শির সকল সন্তান বাংলার।
বাংলার পথে পথে
বাংলার পথে পথে কত ফুল পড়ে আছে
কত পড়ে আছে সোনাদানা ;
কত পড়ে আছে আমাদের স্মৃতির অতীত
পূর্ব পুরুষের শরীর মিশে আছে তার বুকে।
আছে আমার মায়ের পিতারও কবর
আছে কত দেশপ্রেমিক জ্ঞানী গুণী ধর্মপ্রাণ
মানুষের স্মৃতিময় নামের ফলক
আমি যখন হাঁটি তার বুকে,তখন কেঁপে ওঠে পা-
বাংলার পথে পথে কত শান্তি, সুখ করে গড়াগড়ি
কত সূর্যের হাসি,চাঁদ আর তারাদের পড়ে আছে আলো
কত মেঘ বৃষ্টির কত আকাশ বাতাসের আরও আছে ছোঁয়া
কত পরিচিত অপরিচিত মুখের হাসি আর পদচিহ্ন লেগে আছে তার ধুলোতে।
আমি যে তাদের প্রেমের সে কাব্য রচি।
বাংলার পথে পথে কত মানিক আছে,আছে শুভ্র মুকুতা
আমার তোমার প্রেমের ভালোবাসার আর আছে কাহিনি গাঁথা
কত রাজা-রানির,কত চণ্ডীদাস রজকিনীর
কত বেহুলার আছে নদী নদী ভরা চোখের জল।
এমন নিসর্গের দেশ কোথা বল আছে
এমন নিসর্গের দেশ কোথা বল আছে
দেখিনিতো ঘুরে আমি পৃথিবীর পর;
দেখিনিতো ঘুরে ঘুরে ভূমধ্যসাগর
একদম বসে তার জলের কাছে।
ঘুরেছি আমিও মালয়শিয়া আরব
ঘুরেছি জাপান আর পিরামিড মিশর
চীনের ঘুরেছি কত পাহাড় সাগর
এমন পরিবেশ নেই সুখদ সরব।
এমন নিসর্গের দেশ কোথা বল আছে
পাবে কি আমেরিকা, ইউরোপ গেলে;
যেখানে হাজার নদী জলে জলে খেলে
কতদিন গিয়েছি আমি তাহাদের পাছে।
তাহাদের সকালবিকাল হেমন্তে বসন্তে
তাহাদের শরতের ডাঙা জল যেথায়
বনের পাহাড়ের মাঠের মেঘের খেয়ায়
তাহারি ঘর হতে দিগন্তে দিগন্তে।
এমন নিসর্গের দেশ কোথা বল আছে
যার সাথে মিলায়েছি বুকেতে এ বুক;
যে বুকের ভেতরে কেবল অফুরন্ত সুখ
নিয়েছি বারে বারে আমি তারে যাচে।
তাহার পরাণ হিয়ায় প্রেম রচনায়
বঙ্গোপসাগরের সে প্রিয় রাজকন্যা;
ছড়ায় পরতে পরতে আলোরই বন্যা
লেগে আছে ছাপ বুঝি তারই পায় পায়।
১১ অক্টোবর ২০২৫
মিষ্টি বাংলা
মিষ্টি বাংলা- বাংলার মাটি- ধূসর প্রকৃতি
সবুজের স্যন্দন মাখা-পূর্ণিমা মায়ায়
আমাদেরকে ভাসায় নিসর্গ প্রীতিতে তাহার
মমতার পরশ দেয় সবুজ শরীরের
এইসব দেখিতে হলে মাঠ আর নদীর কাছে যেও
পূর্ণিমা দেখিও গভীর রাত্রিতে জোস্না হৃদয়ে।
এখানে খেলা করে লক্ষ্মীর মেয়েরা এসে
আকাশের দোলনায় দোলে আনন্দ ঝর্ণার;
এই গাঁয়ের ওপাড়ে- তিতাসের তীরে
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়িতেছে শালিক আর বক
আমাদেরকে সে পাখার দিয়ে দিয়ে মৌরি দ্যোতনা
ধানের পাতার ঢেউয়ে আঁখি নীড়ে মাখে মায়া।
মিষ্টি বাংলা – মিষ্টি তার ফুল,মিষ্টি তার মায়া
শত ঘাতে ভালোবেসে রাখে সে জড়ায়ে।
মিষ্টি তার দিনগুলি- সোনালি ফুলের
কতকাল কতকাল এমন করে কাটিতেছে আমাদের
তুমিও দেখিবে হেথা- তোমার কোনো প্রিয়জনের মুখ
তারাদের সাথি হয়ে হাসিতেছে এমন।
বাংলার মানুষগুলি কত সুন্দর
বাংলার মানুষগুলি কত সুন্দর –
কত যে হাসি মাখা তাহাদের মায়াবী চোখ মুখ –
কত যে স্নেহ ভরা আতিথেয়তায়
আজ-ও তারা নিজেদের হৃদয় বিলায়।
কত যে আদর করে খেতে দেয় চা পানীয়
এই যে আমাদের ভালোবাসার জন্মের প্রেমের বন্ধন।
বাংলার মানুষগুলি কত সুন্দর –
কত যে নমনীয় তাহাদের আদব-
শিক্ষা দীক্ষায় তারা নিজেকে গড়ে তোলে আদর্শ ধারায়।
এই যে পারিবারিক, সামাজিক,মহতী সূচক
আমাদেরকে করে রাখে আপন পরস্পর
আমরা হয়ে যাই ধর্মেকর্মে এমন সত্য সুবোধ।
বাংলার মানুষগুলি কত সুন্দর –
কত সুন্দর তার বাড়ি-ঘর, আঙিনা উঠোন
ফুলের হাসিতে হাসিতে সাজিয়ে রাখা
রূপসৌন্দর্য্যের নন্দন কলায়
তার সেই কুসুমিত বিহ্বল সুফলা সুরভিত মন।
অনেক আন্তরিকতায় –
সুন্দরের পূজায় তারা চিরকাল পূজিত।
১১ অক্টোবর ২০২৫
হে নতুন যুবক
হে নতুন যুবক,ভালোবেসো দেশ-
যে ভালোবাসায় আছে ত্যাগ আর পবিত্র উদ্দেশ।
যে ভালোবাসা হবে নিখাঁদ হৃদয়
ক্ষয়ে যাবে যতোসব পাপ আর অপরাধের
কালিমার কৃচ্ছ্রতা ভয়।
হে নতুন যুবক, ভালোবেসো দেশ-
ত্যাগের মহিমায় রচো,গড়ে তোল শান্তির অমোঘ পরিবেশ।
যে ভালোবাসা মাতাপিতার রক্তের জন্মের দান
যে পবিত্র স্তন্য মায়ের তুমি-আমি চিরকাল
এদেশেরও করতেছি পান।
হে নতুন যুবক, ভালোবেসো দেশ
জীবনেমরণে কভু এই প্রেম ভালোবাসা হয় বলো শেষ?
যে ভালোবাসায় বাঁচে আমাদের প্রজন্ম সকল
ফোটে উঠে কলিগুলো ফুল হয়ে আরও উজ্জ্বল।
হে নতুন যুবক, ভালোবেসো দেশ
যে ভালোবাসা খাঁটি নির্মল খাসা- ঘুচে দেবে অশান্তি ক্লেশ।
যে ভালোবাসা পুষ্ট যৌবনের শক্তির আঁধার
কখনো মানে না হার,উচ্চ শির
সকল সন্তান বাংলার।
গ্রাম হতে যখন চলি যেতে ঢাকা
গ্রাম হতে যখন চলি যেতে ঢাকা;
মনে হয়,দূর কোনো দেশে যাই কান্তরের পথ
যেখানে অশরীরী কিশোরীরা জলকেলি করে
দেখে দেখে নদীর এই সমতল – এই মেঠোপথ।
তখন হৃদয়ে আমার ফসলের ফুল ফোটে
দুধের গন্ধ ভরা – নিখিলের সুধাকর আলো জহরত।
আরও দেখি-বাংলার কোন এক গৃহিণীর হাসি ভরা মুখ
সারি সারি বৃক্ষরাজির ছায়া সুনিবিড়
গ্রাম দাঁড়িয়ে আছে কত শত কাল;
তখন ভেসে আসে ইউরোপের দেশ হতে
কত মানিক মুকুতা- আমাদের জলে মেশে
সে রতন প্রবাল।
গ্রাম হতে যখন চলি যেতে ঢাকা ;
মনের মাঝে ভাসে কত প্রিয় মুখ
ম্যাজিক লন্ঠন আর বিশ্বসাহিত্য
আরও কত আত্মার আত্মীয় লোক।
ভাসে আরও শাহবাগ,বনানী,কাকলী
পল্টনের মসজিদ বায়তুল মোবারক;
ভাসে আরও লালবাগ,আর সোনারগাঁও
বুড়িগঙ্গার জল করে গবেষক পরখ।
১২ অক্টোবর ২০২৫
৯ অক্টোবর ২০২৫






Discussion about this post