কসবার কবিদের কবিতা :
১.
রবের মহিমা
– বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আবদুল
পাখি রে তোর সারা অঙ্গ কতাে না সুন্দর,
আল্লাহ ছাড়া কে পারে আর গড়তে রে এমন
স্রষ্টা সুন্দর, সৃষ্টি সুন্দর,সুন্দর এ ভূবন।
উড়িস ফিরিস ঘুরিস বনে
আহার করিছ আপন মনে
রবের নামের তসবি জপিস নিত্য সারাক্ষণ।
নিখিল ধরা দিশে হারা
রবের নামে পাগলপারা
অধীর হয়ে জপে সে নাম করে উৎসারণ!
দরদ দিয়ে জপ রবের নাম
নবীর তরে দুরুদ সালাম
মুক্ত আকাশ,স্বাধীন ভূবন,স্বাধীন তোর জীবন।
রচনাকাল :৪ জুন,২০২৪
২.
কোথায় গেলে চলে
কলমে — শামীম পারভেজ
হৃদয় খাচা শূন্য করে
কোথায় গেলে চলে
কি দু:খ পেলে তুমি
গেলে নাতো বলে
কোথায় গেলে চলে তুমি
কোথায় গেলে চলে
হৃদয় কম্পন বাড়িয়ে তুমি
কষ্ট বেদনা দিলে
ভাবছি শুধু কেন এমন
নির্দয় তুমি হলে
কোথায় গেলে চলে তুমি
কোথায় গেলে চলে
হৃদয় মাঝে জ্বলছে আগুন
হচ্ছি অংগার জ্বলে
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমায় তুমি
কতো সুখ পেলে
কোথায় গেলে চলে তুমি
কোথায় গেলে চলে ।
৩.
নিঃসঙ্গ
——সোলেমান খান
তুমি নাই
তবুও ফিরে তাকাই
হাত বাড়াই,
কোথাও নিজেকে হারাই;
তবুও বারে বারে
ফিরে চাই।
হৃদয়ে কত যে বারিধারা
সুখের ঘরে বয়েছে যে ঝড়
হয়েছি তোমাতে সারা।
রচনাকাল: ২১ আগস্ট,২০২৫ খ্রি.
৪.
অদৃশ্য দৃষ্টি
শারমীন সুলতানা
রাত্রি গভীর হলে
অদৃশ্য ডানায় ভর করে দৃষ্টি উড়ে যায়,
অন্ধকারের বুক ভেদ করে
আলোহীন স্রোত জাগায় এক অমোঘ সঙ্গীত।
কাকচক্ষু যেন অমৃতধারা,
স্বচ্ছ অথচ ভয়ংকর নিঃশব্দে প্রবাহিত—
তার ভেতর লুকিয়ে থাকে
অপরিমেয় রহস্যের উন্মেষ।
আমি দেখি না চাঁদ, না তারা,
না কোনো ছায়া বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ—
আমি দেখি কেবল
তোমার সেই একচোখ,
যা অন্ধকারকে গ্রাস করে
এবং আলোকে শৃঙ্খলিত রাখে…..
৫.
বৃত্ত বৃত্ত এই খেলা
কাজী আনারকলি
ভালোবাসা খুঁজে নদী
নদী খুঁজে নদীকান্ত,
নদীকান্ত খুঁজে নভ
নভ খুঁজে ধরাতল।
চোখ খুঁজে শাদা চাঁদ
চাঁদ খুঁজে কালো রাত,
রাত খুঁজে শূন্য মন
মন খুঁজে ভালোবাসা।
আলো খুঁজে কৃষ্ণ ছায়া
ছায়া খুঁজে অমাবস্যা,
অমাবস্যা খুঁজে মাটি
মাটি খুঁজে নীল চোখ।
ঘুরে ফিরে বারবার
বৃত্ত বৃত্ত এই খেলা,
নিত্য আসে, নিত্য যায়
শূন্য বুক উছলায়।
৬.
তোমার মুগ্ধতা
মো.সাইদুর রাহমান খান
এই জ্যোৎস্না পসর রাতে,
ডাকো কেন আমায়
যাবে নাকি তুমি-
প্রেম লীলা অভিসারে!
চারদিকে সবই ঘন অন্ধকার
ঘুমের রাজ্যে সবাই
শুধু নিরবতা
ভেবেছো আমি একা?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে
হাত দুটো বাড়িয়ে,
দিয়েছি যে তোমারে-
তোমার রূপের ঝলকানিতে,
যাই বুঝি হারিয়ে।
বেঁধেছ তুমি আমায়,
তোমার রূপের আঁচলে
মনটা পড়ে থাকে
তোমার সাজানো কাননে।
তোমার রূপের জ্যোৎস্নায়
আমি যে মাতোয়ারা
পারিনা ছুটে যেতে-
ঘুমের পুস্প কাননে।
৭.
শতবর্ষ পরে (উৎসর্গ- নবাব ফয়জুন্নেছা মহীয়সী নারীকে)
আজাদ সরকার লিটন
তোমার কালে জম্মেনি আমি
সেই সৌভাগ্য হয়নি আমার
তুমি যে কত মহান
সেই সত্য আমি জেনেছি
তোমার অমর কীর্তি আর ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে।
তুমি কেবলই ছিলেনা নবাব –
তুমি বিদুষী, তুমি মহীয়ষী,তুমি শিক্ষাব্রতী
তুমি নারী জাগরণের অগ্রদূত
তুমি তাপসী, তুমি জ্ঞানী,তুমি গুনি
তুমি মানবিক, সেরা রমনী
তুমি কল্যাণময়ী উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তোমাকে কি আমি স্মরণ না করে পারি?
তাইতো আজও তোমাকে স্মরণ করি
তোমার মরনের শতবর্ষ পরে।
৮.
অতীত প্রথা
হেলাল মাষ্টার
আজও মনে পড়ে,
অতীতের সেই প্রথা-
যেখানে বিয়ে বাড়ি,দাদু নানুদের বচন কথা।
মুখে গাওয়া গীত,সুরেলা কোরাস।
হলুদবাটা, মেহেদিবাটা,আর পাঁচখোলা চিড়া।
সবই আজ অতীত
কে মনে রাখে সে ঐতিহ্য আমাদের লোকগাথা?
অতীত শুধু, কালের সাক্ষী-
কারও কি আছে জানা?
নববধুর বাড়ির কাদামাখা -গা,
বধুর ছোট ভাই বোন,দাদীনানীদের
সেই রং মাখানো দিন-
আড়াইওল্লা,
আনন্দ মাতোয়ারা নতুন বন্ধন-
পরিচিতি পাইতো তারা বেয়াই বিয়ানীর খিল।
বাজি খেলতো,শ্লোক দিতো,আবার উত্তর দিতো
চারপাশ জুড়ে হাসিঠাট্রা কতো হৈ-হুল্লোড় সুরগোল হতো।
আধুনিকতার যাথাকলে – সব হারিয়ে গেলো।
আজও কি মনে পড়ে জামাই পিঠা খাওয়া-
নাইওড়ী নাস্তা ,ফুলপিঠা, চিড়ার নাড়ু কাহিনী।
এ যুগের ছেলেপুলেরা বলছে আজ
সব আজুগুবি আর অদ্ভুত কাহিনী।
অথচ, সবই ছিল সত্য ও বাস্তব ঘটনা-
যুগের তালে সবকিছুই হয়ে যাচ্ছে লুপ্ত।
৯.
আমার জয়গান
লোকমান হোসেন পলা।।
কিছুই শিখিনি আমি না কবিতা না গান
না আয় রোজগার না প্রতারণা
অথচ এ চারটির যে কোনো একটি হলেই
বেঁচে যায় জীবন বাঁচে কিছু প্রাণ
সবকিছুতেই আমার অবস্থান বাস্তবের প্রতিলিপি
যা করেছি তা কার্যকর কোনো কার্যক্রম নয়
তবুও দেখ আমার কী প্রশান্তি
আমার মনে কোনো হাহুতাশ নেই
আমি যা করেছি সৎভাবেই করতে চেয়েছি
সরলতাকে ছাড়িনি আমি
তাই বৈষয়িক হতে পারিনি
তাতেই আমার সাফল্য আমার জয়গান।
পৃথিবীটাকে গিলে খেতে চেয়েছে যারা
তারা অর্জন করেছে যোগ্যতা
আমার অভাব ছিল তার
তবুও প্রকৃতি রেখেছে আমার মান।
১০.
যে পাখি পাখা মেলে ভোরের আলোয়
গাজী আবু হানিফ
যে পাখি পাখা মেলে ভোরের আলোয়
কতো তারে লাগে সুন্দর
আলোর আনন্দের বয় ঝিলমিল ঝর্ণা
গুণগুণ কিচিরমিচির জাগরণে জাগে প্রকৃতি।
ফুলগুলো মেলে চোখ
আঙিনায় দুলতে থাকে ঝিরি বাতাসে
পাকা পাতা ঝরে পড়ে সারা রাতভর
গৃহিণী ঝাড়ু দিয়ে কুড়ায় পাতা।
খড়ির পাশাপাশি রান্নার ঘূটের কাজে করে ব্যবহার
জাগে সমস্ত পাড়া এমন করে
কলরবে মেতে উঠে বনবনানী
কৃষক কাস্তে হাতে ছোটে মাঠের পানে।
যে পাখি পাখা মেলে ভোরের আলোয়
নীড় ছাড়ে আহারের তরে
কতো তারে লাগে চঞ্চল –
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায় মাঠ নদী চরে
হাওড় বিলে
আর বাড়ি গরম করে মুরগের ডাক।
সন্ধ্যায় ফের নীড়ে ফিরে শান্ত আবেশে
মিষ্টি গলায় ডাকে নীড়ের ডালে
সবই তাদের ণিত্যকার কাজ
করছে প্রকৃতিও,আমরাও-
আপন তাগিদে।
Discussion about this post